মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
নাগরিকত্বের প্রশ্নে মতুয়া ও উদ্বাস্তু অংশের মানুষকে ফের আশ্বস্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’দিন আগেই কলকাতায় এসে বিজেপির দলীয় সভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আবার জানিয়ে গিয়েছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) কার্যকর করা হবে। উত্তর ২৪ পরগনার চাকলায় বৃহস্পতিবার তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মিসভায় এসে মতুয়া ও উদ্বাস্তুদের আশ্বস্ত করে মমতার পাল্টা দাবি, ‘‘আপনারা সকলেই নাগরিক। নাগরিক না হলে রেশন পান কী করে? প্যান কার্ড, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড পান কী করে?’’ এ রাজ্যে সংখ্যালঘুদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা তাঁরাই দিয়েছেন বলেও দাবি করেন তৃণমূল নেত্রী।
গত লোকসভা ভোটে উত্তর ২৪ পরগনার দু’টি আসন (ব্যারাকপুর ও বনগাঁ) হাতছাড়া হয়েছিল তৃণমূলের। যে দু’টি কেন্দ্রে মতুয়া, উদ্বাস্তু সমাজ এবং সংখ্যালঘুদের ভোটের বিশেষ অবদান ছিল। আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে ওই অংশের সমর্থন নিজেদের অনুকূলে আনতে তৃণমূল নেত্রী মাঠে নেমে পড়েছেন বলেই রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যা। মতুয়াদের একাংশ এবং উদ্বাস্তু মানুষদের দীর্ঘ দিনের দাবি নাগরিকত্ব। সেই দাবি এখনও মেটেনি। কয়েক বছর আগে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সিএএ পাশ করলেও তা এখনও কার্যকর হয়নি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, গত লোকসভা ভোটে বিজেপি নাগরিকত্বের আশ্বাস দেওয়ায় মতুয়াদের সমর্থন পেয়েছিল। কিন্তু এখনও নাগরিকত্ব না পেয়ে মতুয়ারা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তৃণমূল সেই ক্ষোভকে কাজে লাগাতে চাইছে।
বিজেপিকে বিঁধে এ দিন মমতা বলেন, ‘‘আগে জেলাশাসকেরা নাগরিকত্বের বিষয়টি দেখতেন। এখন তাঁদের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে রাজনীতি করার জন্য। সমাজে ভাগাভাগি সৃষ্টি করছে। একে দেব, ওকে দেব না। দিলে সকলকে দাও।’’ এই জেলার ঠাকুরনগরে মতুয়াদের ঠাকুরবাড়ির যাবতীয় উন্নয়ন তাঁরাই করেছেন বলেও ফের দাবি করেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘মতুয়াবাড়ির সৌন্দর্যায়ন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় আমরা করেছি। ২০১১ সাল থেকে বড়মা বীণাপাণি ঠাকুরের চিকিৎসা আমরা করিয়েছি। উদ্বাস্তু কলোনি করে পাট্টা দিচ্ছি উদ্বাস্তু মানুষদের।’’
শিক্ষা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ রাজ্যের শাসক দল। মমতা এ দিন পাল্টা অভিযোগ করেছেন, ইডি-সিবিআইকে ঢুকিয়ে টাকা ‘লুট’ হচ্ছে। সেই টাকা ঢুকছে বিজেপির পকেটে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বিজেপি করলে ওয়াশিং মেশিন, আর তৃণমূল করলে জেল! বিজেপির ক’জন চোর, ক’টা খুনি গ্রেফতার হয়েছে? ক’টা ডাকাত গ্রেফতার হয়েছে? শুধু এজেন্সি দিয়ে গণতন্ত্র চলছে।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘নেতারা বলছেন, গ্রেফতার বাড়াও। না হলে জেতা যাবে না। তুই আজ আছিস, কাল থাকবি না। তখন দেখবি, তোর ল্যাজা আছে, মাথা নেই বা মাথা আছে, ল্যাজা নেই।’’
বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্র অবশ্য বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এসে বলে গিয়েছেন সিএএ কার্যকর হবেই। তাতে মুখ্যমন্ত্রী উদ্বিগ্ন হয়ে মতুয়া-উদ্বাস্তুদের ভুল বুঝিয়ে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছেন। উনি যে ভাবে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তা দেশের জন্য বিপজ্জনক।’’