ভোাটের ইস্তাহার।
আগামী বিধানসভা নির্বাচনের ইস্তাহার তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রের খবর, বরাবরের মতোই নির্বাচনী ইস্তাহার তৈরিতে মমতা দলের নিচুতলার কর্মী থেকে সাংসদ, বিধায়ক-সহ সকলের মতামত নিচ্ছেন। সেই মতামতের ভিত্তিতে তিনি একটি কমিটিও গঠন করে দেবেন। ওই কমিটিই চূড়ান্ত ইস্তাহার তৈরি করবে। মমতা নিজেও সেই কমিটিতে থাকবেন। প্রসঙ্গত, বরাবরই মমতা নির্বাচনী ইস্তাহার তৈরির আগে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের মতামত নেন। কোন বিষয়ে জোর দেওয়া উচিত, বিরোধীদের রাজনৈতিক আক্রমণের মোকাবিলা কোন পথে করা হবে ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে তিনি মতামত আহ্বান করেন। তার পর সেই মতামতের ভিত্তিতে ইস্তাহার তৈরি হয়। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইস্তাহারে বেশ কিছু বিষয়কে ‘বিশেষভাবে গুরুত্ব’ দেবেন দলের শীর্ষনেতৃত্ব। তার মধ্যে থাকবে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো সমাজের সকল স্তরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাগুলির প্রসঙ্গ। এ ছাড়াও জোর দেওয়া হবে শিল্প ও কর্মসংস্থানের মতো বিষয়গুলিকে।
বিধানসভা ভোটের ইস্তাহার তৈরি প্রসঙ্গে বুধবার তৃণমূলের এক বর্ষীয়ান সাংসদ বলেন, ‘‘ইস্তাহার তৈরির জন্য নেত্রী দলের নেতা, কর্মী, বিধায়ক এবং সাংসদদের কাছে লিখিত আকারে মতামত এবং প্রস্তাব চেয়েছেন। সেই প্রস্তাবগুলি জমা পড়ার পর তৃণমূল নেত্রী নিজে তা খতিয়ে দেখবেন এবং বিবেচনা করবেন। তারপর মনোনীত প্রস্তাবগুলিকে সামনে রেখে একটি খসড়া ইস্তাহার তৈরি করা হবে। সেই খসড়া ইস্তাহারের ভিত্তিতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করবেন নেত্রী। সেই কমিটিতে মমতা ছাড়াও থাকবেন একাধিক মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়ক।’’ ২০২১-এ ফের রাজ্যের ক্ষমতা দখলের জন্য ওই কমিটিই জনতার কাছে চূড়ান্ত ইস্তাহার প্রকাশ করবে। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের মতোই এ বারও তৃণমূল নির্বাচনী ময়দানে নামবে রাজ্যের ‘শাসক’ হিসাবে। ফলে ইস্তাহারে গুরুত্ব পাবে গত পাঁচ বছরে তৃণমূলের ‘উন্নয়ন’-এর বিষয়গুলি। বিশেষত, নাগরিক পরিষেবা সংক্রান্ত কৃতিত্বের কথা। পাশাপাশিই, বিজেপি-কে প্রধান প্রতিপক্ষ ধরে নিয়ে ‘বহিরাগত’ প্রসঙ্গ এবং ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ধর্মনিরপেক্ষতা’-ও ইস্তাহারে গুরুত্ব পাবে।
তবে তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, ইস্তাহার তৈরির কমিটির মতামতাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে ঠিকই। কিন্তু পাশাপাশিই ইস্তাহারে স্থান পাবে তৃণমূলের ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সমীক্ষাও। প্রশান্তের সংস্থা ‘আইপ্যাক’-এর সদস্যরা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে মানুষের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি সমীক্ষা করেছেন। সেই সমীক্ষার ফলাফলও চূড়ান্ত ইস্তাহারে থাকবে বলে দলের ওই অংশের দাবি। দু’মাসের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশিত হয়ে যাবে বলে মনে করছে শাসক শিবির। ফলে তারা দ্রুত ইস্তাহার তৈরির বিষয়টি চূড়ান্ত করে ফেলতে চাইছে। গত বিধানসভা ভোটে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলির মধ্যে কোন কোনগুলি পুরোপুরি পূরণ করা হয়েছে, কোনগুলি পূরণ করা এখনও খানিকটা বাকি আছে এবং সেগুলি কতদিনের মধ্যে পূরণ করা যাবে, তা-ও ইস্তাহারে বলা থাকবে বলেই তৃণমূল সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন : আপাতত দল বড় করে পরে ছাঁকনি, নীলবাড়ির লক্ষ্যে এখন দিলীপ-নীতি
আরও পড়ুন : রাজ্যের আমলাদের ভর্ৎসনা পিএসি বৈঠকে,তলব করা হল দিল্লিতে
প্রসঙ্গত, ইস্তাহার তৈরির কাজে নেমে পড়েছে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি-ও। ইস্তাহার তৈরি জন্য তারা আগেই একটি কমিটি তৈরি করেছে। কমিটির সদস্যরা ইতিমধ্যে তথ্যসংগ্রহের কাজও শুরু করে দিয়েছেন বলে বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে। তবে কংগ্রেস-বাম জোটের ইস্তাহার এখনও পর্যন্ত শুরু হয়নি বলেই সূত্রের খবর। এক সিপিএম নেতার কথায়, ‘‘দু’পক্ষকে একসঙ্গে বসে ইস্তাহারে কী কী থাকবে, তা চূড়ান্ত করতে হবে। তার পরেই ইস্তাহার তৈরির কাজে হাত দেওয়া হবে। একান্তই যদি আলোচনার সময় না পাওয়া যায়, তা হলে দু’পক্ষের আলাদা আলাদা ইস্তাহারও প্রকাশিত হতে পারে।’’