প্রতীকী ছবি।
এ রাজ্যের অনেক গ্রাম-গঞ্জেই পানীয় জলের অভাব এখনও পুরোপুরি মেটেনি। সে জন্য সরকারকে বিঁধতে ছাড়েন না ভুক্তভোগীরা। সেই পরিস্থিতির বদল চেয়ে এ বার পঞ্চায়েতের হাত থেকে গ্রামাঞ্চলে পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পটি (ন্যাশনাল রুরাল ড্রিঙ্কিং ওয়াটার প্রোগ্রাম) জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের হাতে তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার হুগলির গুড়াপে জেলার প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে গ্রামে পানীয় জল না-মেলায় মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক কর্তাদের সামনে উষ্মা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘‘গ্রাম-গঞ্জে মানুষ পানীয় জলটুকু পাবেন না আর পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে গালগাল দেবেন, এটা কিছুতেই মেনে নেব না। পঞ্চায়েতের কোনও পরিকাঠামো নেই যখন, কেন ওরা সজলধারা প্রকল্পের কাজ করবে? আমার কাছে খবর, মানুষ ঠিকমতো পানীয় জলটুকু পান না।’’
এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী নিজে মঞ্চ থেকে সেই সমস্যা সমাধানের পথ বাতলে দেন। তিনি রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে বলেন, ‘‘এ বার থেকে পিএইচই (জনস্বাস্থ্য কারিগরি) রাজ্যের সজলধারা প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি করবে। ওই প্রকল্পে গ্রামের মানুষের বাড়িতে জলের জোগান দেওয়া এবং সারা বছর প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণের কাজ তারাই করবে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, বাম আমলে প্রকল্পটি ‘সজলধারা’ হিসেবে পরিচিত ছিল। তখনকার পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রকল্প রাজ্য করলেও পরিষেবা বাবদ অল্প কিছু টাকা দিতে হত উপভোক্তাকে। কোনও কোনও পঞ্চায়েতে সেই প্রক্রিয়াই চলছিল। এখন প্রকল্পটি ‘ন্যাশনাল রুরাল ড্রিঙ্কিং ওয়াটার প্রোগ্রাম’-এর আওতায় চলছে। ২০১৬ সালে নির্দেশিকা জারি করে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর আনুমানিক ৫০০টি গ্রামে নলবাহিত পানীয় জল সরবরাহ পরিচালনার ভার পঞ্চায়েত দফতরকে দেয়।
এখন দেখা যাচ্ছে, তৎপরতার সঙ্গে জল সরবরাহ ব্যবস্থা পরিচালনা করতে পারছে না পঞ্চায়েত। মুখ্যমন্ত্রীর উষ্মা যে একেবারে অমূলক নয়, তা পান্ডুয়ার পাঁচঘড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তোড়গ্রামের বাসিন্দাদের পরিস্থিতিতেই তা স্পষ্ট। সজলধারা প্রকল্পে দিনের তিন বেলা এক ঘণ্টা করে তাঁদের জল পাওয়ার কথা। কিন্তু নিয়মমাফিক জল তাঁরা পান না বলে অভিযোগ। চণ্ডীতলা-১ ব্লকের শিয়াখালা পঞ্চায়েতের পাতুল এলাকায় পাইপ ফেটে জল বেরিয়ে যাচ্ছে কয়েক দিন ধরে। কিন্তু পঞ্চায়েত কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না বলে অভিযোগ। ভুগছেন গ্রামবাসী।
কিছুদিন আগে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর স্থির করে, নতুন কোনও গ্রামে জল সরবরাহ ব্যবস্থা পঞ্চায়েতের হাতে দেওয়ার আগে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রীর নয়া নির্দেশে সেই প্রশিক্ষণের আর দরকার পড়বে না। নতুন ব্যবস্থায় পরিষেবা বাবদ কোনও অর্থ নেওয়া হবে না বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর।
এ দিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী, কৃষকবিমা, কৃষকবন্ধু ও জাতিগত শংসাপত্র পেতে মানুষের হয়রানিরও কড়া সমালোচনা করেন তিনি। জেলাশাসক রত্নাকর রাওকে মমতা বলেন, ‘‘বিডিও ও ভূমি দফতর থেকে প্রতিটি পঞ্চায়েতে কড়া নজর রাখতে হবে যাতে মানুষকে অযথা ঘুরতে না হয়। শস্যবিমার ক্ষেত্রে প্রতিটি এলাকায় সমবায় ব্যাঙ্কগুলিকে কাজে লাগাতে হবে।’’