মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
আইনশৃঙ্খলা থেকে চিকিৎসা, ভিড় ব্যবস্থাপনা থেকে মেলার সজ্জা— গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতির নির্দেশ দিল রাজ্য সরকার। বুধবার নবান্ন সভাঘরে সংশ্লিষ্ট সব দফতর, পুলিশ-প্রশাসন এবং বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রেখে মেলার প্রচার সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে একগুচ্ছ নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ভিআইপি গতিবিধিতে নিয়ন্ত্রণ আনার নির্দেশও দিয়েছে নবান্ন।
গঙ্গাসাগর মেলা হবে ৮-১৭ জানুয়ারি। তার জৌলুস-প্রচারে যাতে কোনও খামতি না থাকে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা জানাচ্ছেন, জানুয়ারিতেই রাম মন্দিরের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাকে ঘিরে দীর্ঘ উৎসবের পরিকল্পনাও করা হয়েছে। ফলে এ বারের মেলার প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখতে চাইছে না মমতার সরকার।
মেলাপ্রাঙ্গণ বহুবর্ণের আলোয় মুড়ে ফেলার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য। প্রতি বারের মতো এ বারও সাগরে তিন দিন ধরে হবে গঙ্গারতি। তা সরাসরি সম্প্রচারও করা হবে। ই-পুজো, প্রসাদ এবং পুণ্যজলের ব্যবস্থাও রাখবে সরকার। রাজ্যের অনুমান, এ বার আগত দর্শনার্থীদের সংখ্যা ছাড়াতে পারে ৪০ লক্ষ। ফলে বিভিন্ন ভাষায় প্রচার চলবে। থাকবে পর্যাপ্ত সহযোগিতার ব্যবস্থা। প্রশাসনিক সূত্রের ধারণা, এ বারের মেলায় আসতে পারেন পুরীর শঙ্করাচার্য। ফলে তাঁর আতিথেয়তায় যাতে কোনও খামতি না থাকে, তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার কথায়, “অত্যন্ত জনপ্রিয় এই মেলা। গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসেন। তাঁদের যেন কোনও অসুবিধা না হয়।” তাঁর সংযোজন, “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার—এ কথা মনে রেখে পদক্ষেপ করতে হবে।”
মেলার সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেও প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশ মিলিয়ে সেই বন্দোবস্ত করবে। পাশাপাশি, বিভিন্ন এলাকায় ভাগ করে সিনিয়র আইপিএস অফিসারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ভিআইপি-দের গতিবিধিতেও নিয়ন্ত্রণ আনার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, “পাইলট ছাড়া সাধারণ দর্শনার্থীদের মতো মেলায় যেতে চাইলে সমস্যা নেই। কিন্তু পাইলট নিয়ে মেলায় ভিআইপি গতিবিধি হলে মানুষের সমস্যা বাড়বে। ফলে সতর্ক থাকতে হবে।” তাঁর সংযোজন, “আইনশৃঙ্খলা যেন যথাযথ থাকে। পুলিশ নজর রাখবে।”
এ বারও মেলা ব্যবস্থাপনায় অন্তত ১০ জন মন্ত্রীর মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছেন মমতা। মন্দির সংলগ্ন এলাকা ছাড়াও মেলার পথে বিভিন্ন এলাকায় তাঁরা থেকে পরিস্থিতি দেখভাল করবেন। প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে গোটা বিষয়ের নজরদারি চালাবেন অন্তত ছ’জন সিনিয়র মন্ত্রী।
এ দিনের বৈঠকে গঙ্গাসাগর মেলা কমিটির তরফে মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করা হয়, দক্ষিণেশ্বর এবং কালীঘাটে পুণ্যার্থীদের যাতায়াতের সুবিধা দেওয়া হোক। ওই সব এলাকায় পকেটমারের সমস্যা এড়াতে সিসি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই সব মন্দিরে পৌঁছতে বাসের ব্যবস্থা থাকবে।