তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ছবি পিটিআই।
সরাসরি দলের পদ না দিয়েও সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে এ বার দুই ভাইকে সামনে নিয়ে এলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তঁদের এক জন কার্তিক, অন্য জন গণেশ। এই কার্তিক-গণেশ জুটির হাতেই শুক্রবার মমতা তুলে দিলেন নবগঠিত ‘জয় হিন্দ’ বাহিনীর ভার। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টিতে যা কিছুটা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের মোকাবিলার উদ্যোগ। একই ভাবে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দুর্গা বাহিনীর ধাঁচে ‘বঙ্গ জননী’ নামে আর একটি সংগঠন এ দিন তৈরি করে দিলেন মমতা। যার মাথায় বসানো হল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে।
তৃণমূলের ব্যাখ্যা, ‘জয় হিন্দ’ এবং ‘বঙ্গ জননী’— দুটোই সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। প্রথমটি কাজ করবে সমাজের সব স্তরের মানুষের মধ্যে। আর দ্বিতীয়টি সংগঠিত করবে রাজ্যের নারীদের। কালীঘাটে নিজের বাড়িতে এ দিন তৃণমূলের বৈঠকে ওই দুই সংগঠনের দায়িত্ব বণ্টন করেছেন মমতা। তিনি ‘জয় হিন্দ’-এর সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে, আর কো-অর্ডিনেটর করেছেন গণেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দুই ভাইয়ের মধ্যে কার্তিক দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সংগঠিত করার সুবাদে খুব অপরিচিত নাম নন। কিন্তু গণেশ এত দিন ছিলেন একেবারেই অন্তরালে। কোনও দিনই মঞ্চে তাঁর প্রত্যক্ষ উপস্থিতি দেখা যায়নি। ‘জয় হিন্দ’-এর চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে দুই মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং ইন্দ্রনীল সেনকে। ‘বঙ্গ জননী’ সংগঠনে পদে রাখা হয়েছে প্রয়াত অজিত পাঁজার মেয়ে মহুয়া পাঁজাকেও।
বাংলার ‘ঐতিহ্য’ রক্ষায় সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মসূচি পালনের কথা বললেও দুই সংগঠনই আদতে তৃণমূলকে ‘তৃণ-স্তরে’ মজবুত করার কাজ করবে। যেমন, ‘জয় হিন্দ’-এর লক্ষ্য— নানা কারণে যে সব পুরনো কর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন বা অভিমানে দূরে সরে রয়েছেন, তাঁদের সকলকে একজোট করা। পাশাপাশি, ‘বঙ্গ জননী’র সদস্যারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে সংযোগ তৈরি করবেন মহিলাদের সঙ্গে। এ দিন বৈঠকের পরে কার্তিক বলেন, ‘‘বাঙালির ঐতিহ্য, শিক্ষা এবং সংস্কৃতির উপর যে আক্রমণ নেমে আসছে, আমরা মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তা রুখব।’’ আর কাকলির কথায়, ‘‘স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে এখনকার সময় পর্যন্ত নারীর ভূমিকা স্মরণ করিয়ে আমরা মহিলাদের সংগঠিত করব।’’
দলীয় সূত্রের খবর, মমতা এ দিন ওই দুই সংগঠনের পোশাকও বেঁধে দিয়েছেন। ‘জয় হিন্দ’ বাহিনীর সদস্যদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময় পরতে হবে হলুদ পাঞ্জাবি এবং সাদা পায়জামা। আর ‘বঙ্গ জননী’র সদস্যাদের পোশাক হবে গঙ্গা-যমুনা পাড় শাড়ি।