মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল ছবি
কেন্দ্রের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা যে সময় মতো খরচ করা হয়নি, তমলুকের প্রশাসনিক সভায় কার্যত তা স্বীকার করে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্রুত হাতে থাকা টাকা খরচের নির্দেশও দিলেন তিনি। তিনি আরও মনে করিয়ে দেন, ‘‘মানুষ আপনাদের ভোট দিয়েছে, আপনার কাজটা পাবে বলে। এটাই ‘ভোট পলিটিক্স’।’’ পঞ্চায়েত ভোট আসন্ন। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির হাল দেখতে সম্প্রতি জেলায় জেলায় এসেছিল কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দল। তাদের রিপোর্টে অনিয়ম থেকে টাকা খরচে গড়িমসির উল্লেখ রয়েছে। ওই পরিদর্শনের পরে বুধবারই প্রথম কোনও জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেখানে জেলা পরিষদের পদাধিকারী ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘টাকাগুলি ফটাফট খরচ করে ফেলতে হবে। এখনই কাজগুলি শুরু করতে হবে। শেষও করতে হবে। দরকার হলে দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করতে হবে।’’ জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ানকে কাজের নোটিস দিতেও বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে বকেয়া কাজ শেষ করা কতটা জরুরি সে কথা বারবারই ফিরে এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। তিনি বিশেষ গুরুত্ব দেন ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে। গ্রামীণ এলাকার ভোট ব্যাঙ্কে এমন প্রকল্পের প্রভাব বুঝিয়ে মমতা সরাসরিই পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের বলেন, ‘‘বাংলার বাড়ির প্রকল্পে উপভোক্তাদের কাছে টাকা সোজা চলে যায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। এতে লোকে হাতে টাকা পেয়ে যায়। বাড়ি পেয়ে লোকে আশীর্বাদ করবে।’’
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা ও প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার মতো বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ অর্থ খরচে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ টাকা সময়ে খরচ করতে না পারলে পরবর্তী আর্থিক বছরে বরাদ্দ কমে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। এমন পরিস্থিতি এড়াতে পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদের হাতে থাকা বরাদ্দ টাকা দ্রুত খরচ করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘হাতে তো সময় নেই। আপনারা বাংলার বাড়ির প্রকল্প নিজের নিজের এলাকায় করে নিন। এখন অপেক্ষা করেও লাভ নেই। পুজোর মধ্যে সময় চলে যাবে।’’
কাজে গতি আনতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে জেলায় তোড়জোড় শুরু হয়েছে। পাশাপাশি মমতার ‘ভোট পলিটিক্স’ মন্তব্যকে বিঁধছে বিরোধীরা। তাদের কটাক্ষ, ভোট এলেই যে কাজ হয় এবং আর তা ভাঙিয়েই যে ভোটের রাজনীতি হয়, এ দিন তা কবুল করেছেন তৃণমূল নেত্রী। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক নবারুণ নায়েকের কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-সহ সব কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম বদলে রাজ্য নিজের বলে চালাচ্ছে। আর এখন পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফের কাজ দেখিয়ে ভোট চাইবেন মুখ্যমন্ত্রী। এটাই তৃণমূলের রাজনীতি।’’ নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা তথা পূর্ব মেদিনীপুরের সহ-সভাধিপতি সুফিয়ান পাল্টা বলছেন, ‘‘মানুষ তো কাজ দেখেই ভোট দেবেন। দিদি সেটাই বলেছেন। এতে বিতর্কের কী আছে!’’