শিলিগুড়ির মাল্লাগুড়িতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
কর্নাটকের জবাব এল শিলিগুড়িতে। ২৪ ঘণ্টা আগে শ্রী সিদ্ধগঙ্গা মঠে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিরোধীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘‘আন্দোলন করতে হলে পাকিস্তানের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে করুন।’’ শুক্রবার শিলিগুড়িতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আপনি প্রধানমন্ত্রী। আপনার চেয়ারকে সম্মান করি। কিন্তু আপনি কথায় কথায় পাকিস্তানের নাম করেন কেন? আপনি পাকিস্তানকে মহিমান্বিত করেন কেন! আপনি কি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত?’’ তাঁর কথায়, ‘‘হিন্দুস্থানের সঙ্গে পাকিস্তানের তুলনা হয় না। আমরা হিন্দুস্থানের কথা শুনতে চাই। পাকিস্তানকে আমরা চাই না।’’
মুখ্যমন্ত্রী যখন এই কথা বলছেন, হিলকার্ট রোডে মৈনাক অতিথি নিবাসের সামনেটা তখন ভিড়ে ঠাসা। এর পরেই মমতা বলেন, ‘‘ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আমরা স্বাধীনতার লড়াই লড়েছি। কেন্দ্র, বিজেপি এনআরসি, সিএএ এবং এনপিআর নিয়ে যা করছে, তা পুরোটাই চক্রান্ত। মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে মাথায় ছাদ সরানোর চেষ্টা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াই করব। এটা আমাদের আর একটি স্বাধীনতার লড়াই। আমাদের ‘আজাদি’র লড়াই।’’ যা শুনে তৃণমূলের নেতানেত্রীরা বলছেন, দ্বিতীয় স্বাধীনতার লড়াইয়ের কথা এর আগে বললেও মমতার মুখে ‘আজাদি’ শব্দটা নতুন।
লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে গেরুয়া ঝড়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল তৃণমূল। তবে অসমে এনআরসি হওয়ার পরে তার বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করে তারা। দলের ব্যাখ্যা, তার ফল মিলেছে কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা আসন জয়ে। এ দিন মমতার মিছিলের সময়েও দেখা গেল, আশেপাশে ভিড় করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন প্রচুর মানুষ। রাস্তার ধার থেকে স্লোগানের সঙ্গে হাততালি দিতে দিতে মিছিলে ঢুকেও পড়লেন অনেকে।
আরও পড়ুন: ‘হিন্দুস্তানি নাগরিকে’র যন্ত্রণা শোনালেন তারিগামি
দৃশ্যতই খুশি মমতা এ দিন সিএএ, এনআরসি নিয়ে তাঁর যাবতীয় আক্রমণের নিশানা করেন বিজেপি নেতৃত্বকে। এক দিকে যেমন তিনি পাকিস্তান টেনে প্রধানমন্ত্রীকে বেঁধেন, অন্য দিকে তেমনই দেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথাও তুলে এনেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘কর্মসংস্থান থেকে অর্থনীতি— দেশের কী অবস্থা করেছে এই সরকার! আবার দেশের নাগরিকদের নতুন করে নাগরিকত্ব প্রমাণের কথা বলছে। আর দেশ জুড়ে বিরোধিতা শুরু হতেই পাকিস্তান! কেন তা হবে? কোনও ভাবেই এ-সব আমরা শুনব না।’’
আরও পড়ুন: ভাবমূর্তিতেই টিকিট পুরভোটে, কলকাতায় বার্তা দিল তৃণমূল
মমতার এই কটাক্ষের পরেও রাজ্য বিজেপির নেতারা অবশ্য তাঁদের সুর বদলাননি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘যারা রাষ্ট্রবিরোধী কাজে যুক্ত, তাদের ভোটার বানানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ওদের স্বার্থে রাস্তায় নেমেছেন।’’ দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তাও বলেন, ‘‘মানুষকে বিভ্রান্ত করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন মমতা।’’