ফাইল চিত্র।
ঘূর্ণিঝড় আমপান-এর পরে ক্ষতিপূরণকে ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড় রাজ্য। জেলায় জেলায় চলছে বিক্ষোভ। শাসক তৃণমূলের তরফেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দলীয় স্তরে শো-কজ বা নিলম্বিত করার মতো পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এই আবহেই এ বার দুর্নীতির তির সিপিএমের দিকে ফিরিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, বাম জমানায় পঞ্চায়েতে ১০০% দুর্নীতি হত। সিপিএমও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যাচারে’র পাল্টা অভিযোগ এনে ‘লুঠের রাজত্ব’ নিয়ে সরব হয়েছে।
কলকাতায় বুধবার পুলিশের উদ্যোগে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলায় ৩৪ বছর সিপিএমের রাজত্ব ছিল। বাম জমানায় কী হারে দুর্নীতি হয়েছে, সবাই জানে। সিপিএমের আমলে পঞ্চায়েতে ১০০-র মধ্যে ১০০% চুরি হত। অন্যান্য রাজ্যে ৯০% দুর্নীতি হয়। আমরা সেটাকে ১০%-এ নামিয়েছি।’’ তার মধ্যেও কিছু ঘটনা যে ঘটছে, তা উল্লেখ করেই মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, সামান্য কিছু অভিযোগ নিয়েও বিরোধীরা শোরগোল করছে।
এই সূত্রেই এ দিন মুখ্যমন্ত্রী ফের লকডাউন এবং আমপান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের রেশন ও ত্রাণ ব্যবস্থার কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্রের মতো এফসিআই-এর পচা চাল নয়! আমরা সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে চাল-গম কিনি। সেটাই মানুষকে দেওয়া হচ্ছে। আমরা রাজ্যের মানুষকে বিনা পয়সায় খাবার দিচ্ছি।’’ মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাঁর সরকার মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: ছোট ঘটনাকে বড় করে বদনাম করা হচ্ছে: মমতা
মমতার এই বক্তব্যের পরেই পাল্টা সরব হয়ছে সিপিএম। দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘বিপদে পড়লেই উনি ৩৪ বছর টেনে আনেন! বামফ্রন্ট পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু করেছিল, মানুষকে অধিকার দিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর মতো আমরা কখনওই কোনও কিছুতে ১০০% দাবি করিনি, করি না। বাম আমলেও কিছু দুর্নীতি ছিল। দলীয় স্তরেও তখন নিয়মিত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন তো মানুষ দেখছেন, লুঠের রাজত্ব চলছে!’’ সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত অনেককে তৃণমূল অতীতে দলে নিয়েছে বলে এ দিন অভিযোগ করেছেন সেলিম। পাশাপাশিই তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ছোট ঘটনার কথা বলছেন। রেশনের চাল চুরি হয়েছে, এখন ক্ষতিপূরণের সরকারি টাকা চুরি হচ্ছে। যাঁরা করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর নেই কেন?’’
কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘চাল দিলাম, গম দিলাম বলে মানুষের মাথা খাওয়া বন্ধ করুন!’’ অধীরবাবুর যুক্তি, কেন্দ্রে মনমোহন সিংহের সরকার খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু করেছিল বলেই মানুষ রেশনে খাদ্যশস্যের অধিকার পেয়েছেন। এর মধ্যে মোদী, দিদি বা কোনও ব্যক্তির কৃতিত্ব নেই। বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ বলেছেন, ‘‘করোনা, আমপানের সময়ে ত্রাণ, রেশন জনতা পর্যন্ত পৌঁছলই না! মুখ্যমন্ত্রী চাল-ডালের কথা বলছেন! সরকারের মেয়াদ যত দিন নেই, তত দিন পর্যন্ত রেশনের ঘোষণা করে দিয়েছেন!’’