মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।
এনআরসি নিয়ে নানা কথা তুলে কেন্দ্র মানুষকে বিভ্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করলেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বনগাঁ এবং রানাঘাটে দু’টি সভায় সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআরের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান আরও এক বার ব্যাখ্যা করে মমতা জানিয়ে দেন, ‘‘ভয়ের কারণ নেই। এখানে এ সব হবে না। এ রাজ্যে এ সব করতে চাইলে আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে করতে হবে। দেখি বিজেপি-র কত শক্তি আছে।’’
এ দিনই সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানিয়েছেন, এখনই এনআরসি নিয়ে কিছু করা হচ্ছে না। সে দিকে ইঙ্গিত করে মমতা বলেন, ‘‘এই একটা দল শুধু মিথ্যা কথা বলে। আজ বলছে এনআরসি হবে না। কালই এনআরসি করবে। কিন্তু আমরা কাউকে জমি, বাসস্থান, শিক্ষা, কর্মসংস্থানহারা হতে দেব না।’’
এ দিন ফের তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘সাবধান। কেউ যদি বাড়ি গিয়ে জিজ্ঞাসা করে, বাবা-মা’র নাম কী, সব কিছু বলবেন না, কোনও কাগজ দেবেন না। কিছু ধর্মান্ধ হিন্দু, কিছু গর্ধশক্তি যদি আধার কার্ড জমা দিতে বলে দেবেন না। আপনার বাড়িতে কে কে আছে বলতে বললে বলবেন না। বলবেন, আপনি কে? আগে আপনার পরিচয় দিন। রাজ্য সরকারের নাম করে ভুয়ো পরিচয় দিলে বিশ্বাস করবেন না। আমার ছবি দিয়ে বললেও শুনবেন না। আপনারা আমার গলা চেনেন, আমাকে চেনেন। আমি সরাসরি বললে তখন বিশ্বাস করবেন।’’
মমতার যুক্তি, যাঁরা ভোটার, তাঁরাই নাগরিক। কারণ নাগরিক না হলে দেশে ভোটাধিকার পাওয়া যায় না। তাঁর কথায়, ‘‘আপনি কত সরকারকে নির্বাচন করেছেন, আজ আপনাকে নতুন করে প্রমাণ দিতে হবে, আপনি এ দেশে জন্মেছেন কি না, আপনি নাগরিক কি না! বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভোটটাও কে দিয়েছে, আপনারা দিয়েছেন তো? ভোট যাকেই দিন, দিয়েছেন তো?’’
রাজ্যে কংগ্রেস ও সিপিএমকে বিজেপির সঙ্গে এখন বন্ধনীতে রেখে এ দিন বনগাঁয় মমতা বলেন, ‘‘ওদের বিশ্বাস করবেন না। ওরা ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে।’’ তাঁর মতে, ‘‘দিনের বেলা যারা কংগ্রেস আর সিপিএম, রাতে তারাই বিজেপি। ওদের বিশ্বাস করবেন না।’’ রানাঘাটেও একই ভাবে মমতা বলেন, ‘‘সিপিএম বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলে। সবচেয়ে বেশি বিজেপির দালালি ওরাই করে। আমি প্রমাণ ছাড়া কথা বলি না। সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি তিন ভাই ভাই জগাই মাধাই, গদাই হয়েছে। ভোটের সময় তোমার দেখা নাই। যাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বিরুদ্ধে সবাই এক হতে পারে।’’ সিপিএমের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ, ‘‘তোমার ক্ষমতা থাকলে যাও দিল্লিতে গিয়ে লড়াই কর। এখানে রোজ রাস্তা অবরোধ, বাস ভাঙচুর কেন? এখানে তো একটা মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় আছে। কারও গায়ে হাত দিতে দেবে না। দালালিটা ওখানে গিয়ে কর। দিল্লিতে পাঁচতারা হোটেলের মতো অফিস আছে তোমাদের। কেন ওখানে গিয়ে করছ না?’’
দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বৈঠকে থাকার জন্য অন্য রাজ্যের অবিজেপি সরকারগুলিকে খোঁচা দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘সবাই তো এনপিআর-এ ঢুকে পড়েছে। আমার বুকের পাটা আছে। আমরা ঢুকিনি।’’ এ দিন দিল্লির শাহিন বাগ ও কলকাতায় পার্ক সার্কাসের আন্দোলনের সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মাথায় ফেট্টি বেঁধে একদল বলছে, গুলি চালাও। হুমকি দিচ্ছে। আমরা এটা হতে দিতে পারি না। মা-বোনেরা নিজেদের ঠিকানা, অধিকার রক্ষায় আন্দোলন করছেন।’’ নতুন আইনে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করলে কী ‘বিপদ’ হতে পারে তা-ও ব্যাখ্যা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘সেই আবেদন করলে সকলকে বিদেশি আইন ( ফরেনার্স অ্যাক্ট) এ ফেলা হতে পারে।’’ পাশাপাশি অসমের উদাহরণ টেনে মমতা বলেন, ‘‘আগুন লাগলে শুধু হিন্দু বা শুধু মুসলমানের ঘরে লাগে না। সবার ক্ষতি হয়।’’