ছবি: পিটিআই।
বোলপুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে তীব্র আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বোলপুরের পথসভার প্রকাশ্য মঞ্চ থেকেই উপাচার্যকে সরাসরি ‘বিজেপির লোক’ বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশ্বভারতীকে ঘিরে ‘ঘৃণ্য রাজনীতি’ চলছে বলেও এ দিন অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
উপাচার্য হিসাবে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী যোগ দেওয়ার পর থেকেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে লাগাতার সংঘাত তৈরি হয়েছে রাজ্যের শাসক দলের। অগস্টে পৌষমেলা মাঠের পাঁচিল ভাঙা নিয়ে সেই সংঘাত চরম আকার নেয়। তবে, এত দিন মুখ্যমন্ত্রী কখনওই উপাচার্যকে সরাসরি আক্রমণ করেননি। এ দিন অবশ্য করেছেন। উপাচার্যের ‘বিজেপি-যোগ’ নিয়ে সরব হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিশ্বভারতী কি আর কোনও উপাচার্য খুঁজে পায়নি? আমার তাঁর প্রতি কোনও ব্যক্তিগত রাগ নেই, কিন্তু আপনারাই বলুন না, খুঁজে, দেখে দেখে নিয়ে আসতে হয়েছে বিজেপির মার্কামারা, বিজেপির স্ট্যাম্প মারা একেবারে অনলাইনে স্ট্যাম্প মারা বিজেপির এক জনকে!’’ একই সঙ্গে মমতার প্রশ্ন, “বিশ্বভারতীর ভিতরে, উপাচার্যের অফিসের ভিতরে বিজেপি নেতারা কী করে? কই আমি তো কলকাতা, প্রেসিডেন্সি, নজরুল বা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে গিয়ে এ সব করি না। আপনারা বিশ্বভারতীকে দাঙ্গার জায়গায় পরিণত করছেন।’’
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে এ দিন এবিপি-আনন্দকে উপাচার্য বলেছেন, ‘‘যে দিন থেকে উপাচার্য হয়েছি, সে দিন থেকে আমি উপাচার্য হিসেবে আমার ধর্ম পালন করছি। কেন্দ্রে বিজেপি সরকার থাকতে পারে। কিন্তু উপাচার্য বিজেপি-র নন। বিশ্বভারতীতে উপাচার্য নিয়োগের একটা প্রক্রিয়া আছে। সেটা অনুমোদন করেন রাষ্ট্রপতি।’’
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন এবং আশ্রমিকদের আক্রমণ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘বেশ কিছু দিন ধরে লক্ষ্য করছি, অকথায়, কুকথায়, অকাব্যে, কুকাব্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতীকে কেন্দ্র করে অমর্ত্য সেন-সহ অন্যান্য আশ্রমিকদের আক্রমণ করা হচ্ছে। সেখানে প্রতিবাদের ভাষাকে জোরালো
করার জন্যই এই রাঙামাটির দেশে আমার আসা।’’
শান্তিনিকেতনের যত্রতত্র পাঁচিল তোলা নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে নানা মহল থেকে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীও সে প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ‘বাঁধ ভেঙে দাও’ উদ্ধৃত করে বলেন, “আজ যখন দেখি, বিশ্বভারতীতে পাঁচিল গেঁথে দেওয়া হয়, অর্থাৎ মানুষের হৃদয়টাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়, তখন আমি ভালবাসি না। আমি তখন বলি বাঁধ ভেঙে দাও, বাঁধ ভেঙে দাও।’’
নিজের প্রথম বিশ্বভারতী ভ্রমণের স্মৃতিও রোমন্থন করেন এ দিনের সভায়। মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রথম বার যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে জেতার পরেই তিনি বিশ্বভারতী কোর্টের মেম্বার হন। তখন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী আচার্য হিসাবে বিশ্বভারতীতে এসেছিলেন। মমতার কথায়, ‘‘সঙ্গে আমাকে নিয়ে আসেন। সেই প্রথম আমার বিশ্বভারতীতে আসা।’’ পরক্ষণেই সুর চড়িয়ে ফের বলেন, ‘‘বিশ্বভারতীকে কেন্দ্র করে একটা জঘন্য ধর্মান্ধ রাজনীতি চলছে। এক সঙ্কীর্ণ, ঘৃণ্য, বিদ্বেষমূলক রাজনীতি এখানে আমদানি করা হয়েছে।’’
সব মিলিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই, তার প্রতিষ্ঠাতাও রাজনৈতিক তরজার কেন্দ্রবিন্দুতে। যা হতাশ করছে আশ্রমিকদের একাংশকে। ঠাকুর পরিবারের সদস্য তথা আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুরের আক্ষেপ, “তৃণমূল আর বিজেপি, দুই রাজনৈতিক শক্তি মিলে বিশ্বভারতীকে গ্রাস করছে। এর হাত থেকে আর রেহাই নেই।”