মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
সে দিন কোথায় ছিলেন সুফিয়ান?
২০২১ সালে বিধানসভার ভোট গোনার দিন সম্পর্কে আচমকাই এই প্রশ্নটি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিশানা, সেই ভোটে নন্দীগ্রামে তাঁরই নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ান। প্রশ্নটি করলেন মঙ্গলবার খড়্গপুরে দুই মেদিনীপুরের বিধায়ক, পুরসভার পদাধিকারী ও পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পরিষদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে।
সূত্রের খবর, মমতা এর পাশাপাশি নিশানা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং তাঁর বাবা, এখনও খাতায়কলমে তৃণমূলে থাকা শিশির অধিকারীকেও। সভাধিপতি বাছাইয়ের এই বৈঠকে মঙ্গলবার তিনি একটা সময়ে চমকাইতলা থেকে নন্দীগ্রাম, নিজের দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলনের কথা শোনাচ্ছিলেন। সূত্রের খবর, তখনই তিনি বলেন, ‘‘নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময়ে বাপ-বেটা কোথায় ছিলেন? আমি তো নন্দীগ্রামের ভিতরে ভিতরে আনিসুর রহমানের মোটরবাইকে করে ঘুরেছি।’’ যার জবাবে শিশির অধিকারী পাল্টা বলছেন, ‘‘এই বলছেন, নন্দীগ্রামের সব দায় আমাদের। আবার বলছেন, আমরা কিছুই করিনি। উনি কখন কী বলেন কোনও মাথামুণ্ডু নেই। ওঁর মন্তব্য নিয়ে যত কম কথা বলা যায় ততই ভাল।’’
সুফিয়ান পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি। সেই সূত্রেই সভাধিপতি বাছাইয়ের বৈঠকে খড়্গপুরে ডাক পেয়েছিলেন তিনি। সূত্রের খবর, মমতা বলেন, ‘‘সুফিয়ান তো সহ-সভাধিপতি আছে। সভাধিপতি পদ যে হেতু ওবিসি সংরক্ষিত, তাই আমি চাই উত্তম বারিক সভাধিপতি হোন। এঁরা দু’জন সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করুন।’’
এই সময়ে নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের জেলা পরিষদ সদস্য নাসিমা খাতুন বলে ওঠেন, ‘‘দিদি, নন্দীগ্রামে ব্লক সভাপতি বদলাতে হবে। জেলা তৃণমূলের সাংগঠনিক চেয়ারম্যানও বদল করতে হবে। এঁরা বিধানসভা ভোটে সক্রিয় ছিলেন না।’’ এই প্রসঙ্গেই সুফিয়ানের নাম ধরে মমতার জিজ্ঞাসা, ‘‘সে দিন তুই কোথায় ছিলি! আমি হারার পরে রিকাউন্টিং চেয়েছিস?’’ সূত্রের খবর, সুফিয়ান দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘দিদি আপনাকে যাঁরা বলছেন, তাঁরা ভুল বার্তা দিচ্ছেন। আমি গণনা কেন্দ্রেই ছিলাম। আপনার সঙ্গে ছিলাম ,আছি এবং থাকব।’’ এর পরে নরম স্বরেই নেত্রী বলেছেন, ‘‘আমি তোকে স্নেহ করি।’’
ক’দিন আগে নন্দীগ্রামে সাংগঠনিক রদবদলে তাঁর অনুগামীরা স্থান না পাওয়ায় রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়েছিলেন সুফিয়ান। তবে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পরে তিনি বলছেন, ‘‘নেত্রী আমাকে স্নেহ করেন বললেন। আসলে সেই নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় থেকে চেনেন তো। আর যা কথা হয়েছে, সে সব সংবাদমাধ্যমে বলার নয়।’’
বিষয়টি নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়ছে না বিজেপি। দলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি অসীম মিশ্র বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামের পরাজয় কোনও দিনই ভুলতে পারবেন না মমতা। তাই তো এ বার প্রশাসনিক সফরে এসে পূর্ব মেদিনীপুরে থাকছেন পর্যন্ত না।’’
(সহ-প্রতিবেদন: দেবমাল্য বাগচী ও বরুণ দে)