—ফাইল চিত্র।
সামনেই কালিয়াগঞ্জে উপনির্বাচন। তার আগে কোচবিহারে দাঁড়িয়ে সংসদে প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব বিল সতর্কবাণী শোনালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘ওটা হচ্ছে একটা খুড়োর কল।’’ পাশাপাশি অবশ্য সকলকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘‘ভয় পাবেন না, বাংলা এমনই একটি জায়গা, সবাইকে মায়ের আঁচল দিয়ে রক্ষা করবে।’’
মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বক্তৃতার বড় অংশ জুড়ে ছিল এনআরসি প্রসঙ্গ। অসমে যে এনআরসি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেই প্রসঙ্গও তোলেন তিনি। বলেন, ‘‘(বিজেপি) বলছে, হিন্দুরা বিতাড়িত হবে না। তা হলে (অসমে) ১৯ লক্ষের মধ্যে যে ১৪ লক্ষ হিন্দু বাঙালি আছেন, তাঁরা বিতাড়িত হলেন কী করে? অনেকেই ডিটেনশন ক্যাম্পে আছেন।’’
যে জেলায় দাঁড়িয়ে এ কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী, সেই কোচবিহার এক দিকে অসম লাগোয়া। অন্য দিকে বাংলাদেশ সীমান্ত। অসমে এনআরসি চালু করার পরে সব থেকে বেশি আঁচ যদি পশ্চিমবঙ্গের কোনও জেলায় লেগে থাকে, তা কোচবিহার— বলছেন এখানকার বাসিন্দাদের অনেকেই। কোচবিহার রাজবংশীদের অন্যতম বাসস্থানও। অসমে এনআরসি-তে বহু রাজবংশীর নাম বাদ গিয়েছে বলেও দাবি করেছে তৃণমূল। এখন এখানে দাঁড়িয়ে এনআরসি প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, এই প্রচার তিনি জারি রাখবেন। এনআরসি আর প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব বিল, দুটোই যে আখেরে এক, সেটাও এ দিন উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, “এনআরসি-র বিরুদ্ধে (প্রস্তাবিত) নাগরিকত্ব বিলের কথা বলা হচ্ছে। ওটা কী? ওটা হচ্ছে একটা ‘খুড়োর কল’। যাঁরা এখানকার নাগরিক, ছ’বছরের জন্য তাঁদের বিদেশি বানিয়ে দেবে। তার পর ছ’বছর বাদে যখন ওঁরা থাকবেও না। তখন নাকি ঠিক করবে, কে নাগরিক হবে আর কে হবে না!’’
আরও পড়ুন: কেশপুরের ‘আঁধার’ ঘোচাতে ‘দিদিকে বলো’য় টর্চ বিলি
এর পরেই আশ্বাসবাণী শোনান মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘আমি বলছি বাংলায় আপনারা সবাই নাগরিক। আপনাদের সকলের অধিকার আছে।” কী ভাবে? মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “মনে রাখবেন, আপনাদের রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড আছে। কারও গাড়ির লাইন্সেস আছে। প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু আছে। তাই এ সব নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ নেই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বাংলা এমনই একটি জায়গা, সব মানুষকে কোলে করে আমরা রক্ষা করব। মায়ের আঁচলের তলায় আমরা রক্ষা করব।”
একই সঙ্গে মমতা জানালেন, বাংলার ভবিষ্যৎও গড়ে দিয়ে যাবেন তিনি। কোচবিহারের ওই কর্মিসভায় মমতা বলেন, “যা কাজ করার আমি করব। আমার উপর ছেড়ে দিন। বাংলার ভবিষ্যৎও তৈরি করে দেব।’’ মুখ্যমন্ত্রীর কথা শোনার পরে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা বলেন, এই বার্তা শুধু কোচবিহারের জন্য নয়। বরং রাজবংশী প্রধান কালিয়াগঞ্জ বা সীমান্তঘেঁষা করিমপুর বিধানসভার জন্যও। এই দুই জায়গাতেই উপনির্বাচন হতে চলেছে।
বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন, প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব বিল নিয়ে মানুুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন মমতা। সেই বিল পাশ করানোর পরেই বাংলায় এনআরসি হবে।