মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
উন্নয়ন পর্ষদকে বিপুল অঙ্কের আর্থিক সহায়তা থেকে ‘পাশে থাকার’ আশ্বাস— প্রায় দিনভরের বৈঠকে আদিবাসী সম্প্রদায়ের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা জুড়ে ছিল মূলত এটাই।
বৃহস্পতিবার প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় এবং পরে নবান্ন সভাঘরে কুড়মি এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা। লোকসভা ভোটের আগে যার রাজনৈতিক তাৎপর্য নিয়ে চর্চা হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের বক্তব্য, গত কয়েকটি নির্বাচনে আদিবাসী ভোটব্যাঙ্কে বিরোধীরা যে ভাগ বসিয়েছে, তা স্পষ্ট। সূত্রের দাবি, বৈঠকে সকলের উদ্দেশে মমতার বার্তা ছিল, নিজেদের মধ্যে একতা ধরে রাখতে হবে। কোনও ভাবেই অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া যে ইতিবাচক হবে না, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা।
এ দিনই স্থির হয়েছে সংশ্লিষ্ট আদিবাসী উন্নয়ন বোর্ডগুলির জন্য বেশ কয়েক কোটি টাকা করে বরাদ্দ করবে রাজ্য। কয়েক কোটি টাকা দেওয়া হবে কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদকেও। একই সঙ্গে চোপড়ায় মৃত শিশুগুলির পরিবারকেও দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। জঙ্গলমহল সফরের আগে মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বৈঠকে ছিলেন মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদাও।
বৈঠকের পরে ভারতীয় ভূমিজ সমাজের নেতা নিত্যলাল সিংহ বলছেন, ‘‘পৃথক ভূমিজ উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের দাবি মুখ্যমন্ত্রী মেনে নিয়েছেন। নতুন ওই পর্ষদকে দু’কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।’’ আদিবাসী নেগাচারী কুড়মি সমাজের মহামোড়ল অনুপ মাহাতো বলেন, ‘‘বৈঠকের সদর্থক দিক নিয়ে এখন কিছু বলছি না। সংগঠনের রাজ্য কমিটির সভা ডেকে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেব।’’ একই সঙ্গে অনুপ জানিয়েছেন, দাবি নিয়ে বিরোধী দলনেতার সঙ্গেও তাঁরা বৈঠক করতে প্রস্তুত। কারণ তাঁদের কাছে কেউ অচ্ছুত নন।
এ দিনের বৈঠকে যাননি আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা (মুখ্য উপদেষ্টা) অজিতপ্রসাদ মাহাতো। তবে অজিত তাঁর সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সুজিত মাহাতো ও
রাজ্য সভাপতি যুধিষ্ঠির মাহাতোর নেতৃত্বে পাঁচ প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিলেন। অজিত বলেন, ‘‘ভোটের আগে তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকে মুখ্যমন্ত্রী কি কুড়মিদের মন পাওয়ার চেষ্টা করছেন? কারণ এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী অনেক কথা দিয়েছেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।’’
সরকারি পরিষেবা নিয়েও এ দিন মুখ্যমন্ত্রী আধিকারিকদের একাংশের কাজে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে সূত্রের দাবি। সরকারি পরিষেবার প্রচার এবং তা সকলের কাছে সময়ের মধ্যে পৌঁছনোর ক্ষেত্রে তৎপরতা থাকছে না কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। কারণ, এ দিন কিছু অভিযোগ তাঁকে শুনতে হয়েছিল। মমতার বার্তা, কিছু আধিকারিকের এমন কাজের জন্য সরকারকে বদনাম হতে হবে—তা সহ্য করবে না রাজ্য। নির্দিষ্ট সময় অন্তর সকলের কাজের মূল্যায়ন করা হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
এ দিন কুড়মি সম্প্রদায়ের সঙ্গে পৃথক ভাবে বৈঠক করেছেন মমতা। সূত্রের দাবি, তফসিলি জনজাতি তালিকাভুক্ত হতে যে আর্জি কুড়মি নেতারা করছেন, সে ব্যাপারে ফের একবার কেন্দ্রের সঙ্গে দৌত্যের আর্জি জানানো হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পর কুড়মি সমাজের (পশ্চিমবঙ্গ) সভাপতি রাজেশ মাহাতো বলেন, ‘‘দাবি নিয়ে বহু যুগ ধরে আন্দোলন চলছে। এটা তো এক দিনের বিষয় নয়। আলোচনা ভাল হয়েছে।’’