সফরে: পুরুলিয়া বেলগুমা পুলিশলাইনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার। ছবি: সুজিত মাহাতো
লোকসভা ভোটে হাতছাড়া পুরুলিয়ার জমি ফেরাতে পুরভোটকেই বেছে নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৬ মাসের মাথায় নির্ধারিত পুরভোটের কথা মাথায় রেখে রবিবার জেলা সফরে এসে নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যে জোর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে পানীয় জল প্রকল্পের কাজের অগ্রগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিভাগীয় কর্মীদের অন্য জেলায় বদলি করার কথাও বলেন।
জাইকা (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি)-র আর্থিক সহায়তায় ২০১৩ সালে পুরুলিয়ার জলকষ্ট পীড়িত ব্লকগুলিতে ১২৯৬ কোটি টাকার জলপ্রকল্পে হাত দেয় রাজ্য সরকার। কিন্তু টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সেই কাজ আটকে রয়েছে শুনে বিরক্ত হন মমতা। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, ‘‘কেন টেন্ডার করা যাচ্ছে না? পিএইচই কী করছে?’’ জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের প্রধান সচিব মনোজ পন্থকে বিষয়টি দেখতে বলেন তিনি। জানিয়ে দেন, পিএইচই-র যে সব আধিকারিক দীর্ঘদিন এই জেলায় রয়েছেন, তাঁদের অন্যত্র পাঠাতে হবে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে ওই প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রায় শেষ। কিন্তু টেন্ডার ডেকেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
বৈঠকে পাশে থাকা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী তথা বলরামপুরের বিধায়ক শান্তিরাম মাহাতোকে মমতা বলেন, ‘‘পানীয় জল, ক্ষুদ্র সেচ ও জল সংরক্ষণের কাজে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’’ পুরুলিয়া পুরসভা মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেটের সহায়তায় দীর্ঘদিন পরে সম্প্রতি লটারির মাধ্যমে এক হাজার বাড়িতে জলের সংযোগ দিচ্ছে। তা শুনে মমতা বলেন, ‘‘লটারির মাধ্যমে নয়। সবাইকেই বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ দিতে হবে।’’
ঘটনা হল, পুরুলিয়া জেলার তিন দিক ঘিরে থাকা ঝাড়খণ্ডে বিজেপি এত দিন ক্ষমতায় থাকায় পঞ্চায়েত ভোট থেকে লোকসভা ভোটে জেলা বিজেপি সুফল পেয়েছে বলে দাবি করতেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। ঝাড়খণ্ডে বিজেপি ক্ষমতা হারানোয় উল্লসিত পুরুলিয়ার তৃণমূল নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে মমতার লোকসভা ভোটের এত দিন পরে পুরুলিয়ায় এসে এক দিকে এ দিন যেমন প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের উন্নয়নমূলক কাজে আরও জোর দিতে বললেন, তেমনই আজ, সোমবার পুরুলিয়ায় এনআরসি এবং সিএএ বিরোধী পদযাত্রায় যোগ দিয়ে দলীয় কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর কৌশল নিয়েছেন বলে মনে করছেন জেলা রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকেরা।
যদিও পুরুলিয়ার জেলা বিজেপি সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, কাজ করতে হবে, গ্রামে যেতে, উন্নয়নে জোর দিতে হবে। তার মানে বকলমে তিনি স্বীকার করে নিচ্ছেন, এত বছরেও তাঁর সরকার অনেক কাজ করতে পারেনি। বিকল্প এখন বিজেপিই।’’