Jaynagar rape-murder case

জয়নগরের ‘বিচারে’ সন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য পুলিশ, তদন্ত-বিতর্কের ছায়া নিয়ে আড়ালে আছে আরজি কর

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুনের মামলায় শুক্রবার বিকেলে রায় ঘোষণা করেছে বারুইপুর আদালত। দোষীকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছেন বিচারক।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:১৭
Share:

জয়নগরকাণ্ডের রায় নিয়ে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতার এবং রাজ্য পুলিশের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

জয়নগরে নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুনের মামলায় শুক্রবার বিকেলে রায় ঘোষণা করেছে বারুইপুর আদালত। দোষীকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছেন বিচারক। সেই রায় ঘোষণার অনতিবিলম্বেই এক্স হ্যান্ডলে ‘ব্রেকিং নিউজ’ লিখে একটি পোস্ট করা হয় রাজ্য পুলিশের তরফে। সেখানে লেখা হল, ‘জাস্টিস ফর জয়নগর’ও! আধ ঘণ্টার মধ্যে এক্স হ্যান্ডলে একই বিষয়ে পোস্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

Advertisement

আরজি করের আন্দোলনের আবহে গত ৪ অক্টোবর প্রকাশ্যে আসে জয়নগরের নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা। সেই সময় আরজি করের মতো জয়নগরকাণ্ড নিয়ে বিস্তর শোরগোল পড়েছিল রাজ্যে। জয়নগরে নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়েছিলেন আরজি করের আন্দোলনকারীরাও। শুধু তা-ই নয়, ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনমঞ্চের সামনে নির্যাতিতা নাবালিকার ‘প্রতীকী মূর্তি’ও রাখা হয়েছিল। ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’-এর পাশাপাশি ‘জাস্টিস ফর জয়নগর’ স্লোগানও উঠেছিল অনশনমঞ্চে। অন্য দিকে, আরজি কর-কাণ্ডের বিচারপ্রক্রিয়া এখনও চলছে। ওই মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। গত মাসে মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে শিয়ালদহ আদালতে। তা সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। অন্য দিকে, মাত্র ৬৩ দিনের মাথায় বিচার পেল জয়নগরের নির্যাতিতা।

ঘটনার দু’মাসের মধ্যে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয়ে দোষীর ফাঁসির সাজা হওয়ায় পুলিশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজেদের কাজেও ‘সন্তোষ’ প্রকাশ করেছে রাজ্য পুলিশ। এক্স হ্যান্ডলের পোস্টে তারা লিখেছে, ‘‘মেয়েটি আর ফিরবে না। কিন্তু যে অভূতপূর্ব দ্রুততায় তাকে এবং তার পরিবারকে আমরা ‘জাস্টিস’ দিতে পেরেছি, দীর্ঘ দিন বিচারহীন থাকতে হয়নি, এটুকুই আমাদের সান্ত্বনা, আমাদের প্রাপ্তি।’’

Advertisement

গত ৯ অগস্ট আরজি করে এক মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর তদন্তে নেমে ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা এবং পুলিশ-প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, যত দ্রুত সম্ভব, প্রশাসন দোষীর শাস্তির ব্যবস্থা করবে। কিন্তু তার অব্যবহিত পরেই আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তভার লালবাজারের হাত থেকে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয় হাই কোর্ট। তার প্রায় দু’মাস পর শিয়ালদহ আদালতে চার্জশিট জমা দেয় সিবিআই। তারা জানায়, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারই ধর্ষণ-খুনের মামলায় একমাত্র অভিযুক্ত। তার ভিত্তিতে চার্জ গঠন হয়ে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অন্য দিকে, আরজি করের ঘটনার প্রায় দু’মাস পরে জয়নগরের ঘটনা ঘটেছিল। তার তদন্ত করেছিল রাজ্য পুলিশ। আরজি করের আগে সেই মামলায় ‘বিচার’ মেলায় স্বাভাবিক ভাবেই ‘খুশি’ পুলিশ মহল।

অনেকের মতে, আরজি কর-কাণ্ডে যে ভাবে কলকাতা পুলিশের উপর ‘অনাস্থা’ দেখিয়ে তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, তাতে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্নের মুখে পড়েছিল পুলিশ-প্রশাসনের উপর ‘আস্থা-ভরসা’। আশ্চর্য নয় যে, জয়নগরকাণ্ডের বিচারের পর পুলিশের বক্তব্যে ‘খোঁচা’ও থাকবে! রয়েওছে। রাজ্য পুলিশের পোস্টে ‘দীর্ঘ দিন বিচারহীন থাকতে হয়নি’ মন্তব্যে সিবিআই তদন্ত নিয়ে খোঁচা দেওয়া হয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে।

প্রসঙ্গত, গত ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল ওই নাবালিকা। মেয়ে বাড়ি না-ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন পরিবারের লোকজন। স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে যাওয়া হয় প্রথমে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগও ওঠে। এর পর গভীর রাতে বাড়ির কাছের জলাজমি থেকে মেলে মেয়েটির দেহ। ওই রাতেই গ্রেফতার হয় মোস্তাকিন সর্দার নামের এক ব্যক্তি। পরের দিন সকালে পুলিশ, স্থানীয় নেতারা এলাকায় গেলে, তাঁদের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। হামলা চলে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতেও। ঘটনার পরে প্রাথমিক ভাবে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছিল পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে পকসো ধারা যুক্ত করা হয়। ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে শাস্তির আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরেই ঘটনার তদন্তে সিট গঠন করা হয়। ঘটনার ২৬ দিন পর, গত ৩০ অক্টোবর চার্জশিট পেশ করে তদন্তকারী দল। ৫ নভেম্বর থেকে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। মোট ৩৬ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল ওই মামলায়। বৃহস্পতিবার মূল অভিযুক্ত মুস্তাকিনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন বারুইপুরের ফাস্ট অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট জাজেস কোর্টের বিচারক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। এর পর শুক্রবার রায় ঘোষণা করেন তিনি। পাশাপাশি, মৃতার পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement