ফাইল চিত্র।
সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে বারবার প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবারও সরকারি অনুষ্ঠানের সভামঞ্চ থেকে তাঁর অভিযোগ, নেতিবাচক কথাবার্তা নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে।
একই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, কাজকর্ম করতে গেলে ভুলভ্রান্তি হতে পারে। কাজ যিনি করেন, তাঁরই ভুল হয়। তা সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। তবে জেনেশুনে ভুল করা উচিত নয়। এই সূত্রে ‘ভুল করার অধিকার’ দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন যা বলেছেন, তার সমালোচনা করেছে বিরোধী শিবির।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “রাইট টু মেক ব্লান্ডার্স— কথাটি সুভাষচন্দ্র বসু বলেছিলেন। ভুল করার অধিকারও তো একটা অধিকার। সব সময় যে নেগেটিভ (নেতিবাচক) কথাবার্তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা যায়, আমরা সে দিকে নজর দিই। অথচ অনেক কিছু সৃষ্টি করা যায়। কাজের মধ্যে দিয়ে আপনারা (যা) গড়ে তুলছেন, সেটা পৃথিবীর কাছে দৃষ্টান্ত। সেটা নিয়ে মিডিয়া মাথা ঘামায় না।”
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘নিজের কথা নেতাজির নামে চালিয়ে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। ভুল করাটা অধিকারহতে পারে না! বরং, ভুল বুঝতে শেখা এবং ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়াই কর্তব্য। দায়িত্বশীল পদে থেকেবারবার ভুল করে সেটাকে অধিকার বলে দাবি করলে তাকে অপদার্থতা বলে!’’
ইতিহাসবিদ ও সুভাষ-বিশেষজ্ঞ সুগত বসু অবশ্য বলেন, ‘‘নেতাজি ‘তরুণের স্বপ্ন’-এ এ রকম কথা বলেছেন। তারুণ্যের যে তেজ ও উদ্দীপনা, সেটা বোঝাতে গিয়েই তিনি এই কথা বলেছিলেন।’’যদিও সেই ভুলের অধিকার একেবারে অন্য প্রসঙ্গে বলা কি না, সেই প্রশ্ন রয়েছে।
রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য, পুলিশ থেকে পুরসভা, পঞ্চায়েত থেকে আবাস যোজনা— এই সরকারের সবেতেই ভুল। একটা ভুল হলে ক্ষমা করা যায়। এত ভুল মানুষ কেন মেনে নেবেন?’’
শুধু তা-ই নয়, বিরোধীদের অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সরকারের ভুল কাজের সমালোচনা করা সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব। ঠিক যেমন জ্বালানি তেল, রান্নার গ্যাস-সহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা তুলে ধরে সংবাদমাধ্যম। তার জন্য সংবাদমাধ্যমের সামনেই কেন্দ্রীয় সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান বিরোধীরা। সমালোচনার মুখে পড়তে হয় বিভাজনমূলক মন্তব্যের কারণেও।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন হোক বা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে, এগিয়েছেন তো মিডিয়া-নির্ভর হয়ে! সরকারের দোষ-ত্রুটি দেখিয়ে দেওয়াই সংবাদমাধ্যমের কাজ। এখন এত ভুল হচ্ছে, তার কিছু সংবাদমাধ্যম দেখালেই গায়ে এত জ্বালা ধরছে কেন? আসলে সংবাদমাধ্যমকে বশংবদ করে রাখাই ওঁদের ইচ্ছা!’’ রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, ‘‘একটা প্রচার-নির্ভর দল! ওদের উত্থান সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতায়। ওরা যাদের সাহায্যে বেড়ে ওঠে, তাদেরই আক্রমণ করে।’’
এ দিন নিজের কবিতার প্রসঙ্গ সরাসরি উল্লেখ না করেও সমালোচকদের উদ্দেশে বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “আমরা ছোট বয়সে কত কবিতা পড়তাম, আয় বৃষ্টি ঝেঁপে... অথবা কাঠবিড়ালি তুমি আমার বন্ধু হবে...কত রকমের...এটা নিয়ে কেউ কখনও প্রশ্ন তোলেনি।এরা কী ‘গ্রুপ’ জানি না, হতে পারে তারা সমাজের বড় অংশ।তাদের সম্মান করি। শিশুর মতোহয়ে শিশুকে শিক্ষা দিতে হবে...কেউ কেউ পুরোটা না দেখে হঠাৎ চিৎকার করতে শুরু করল, হরেকরকমবার মতো।”