মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
বিভেদের রাজনীতিকে হারিয়ে একতারই জয় হবে— ইদের সকালে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার রেড রোডের সভায় দাঁড়িয়ে তাঁর বার্তা, ‘‘দেশে যা হচ্ছে তা ঠিক নয়। ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতি চলছে। আমরা এর বিরুদ্ধে লড়ব। মাথা নোয়াব না। যারা দেশকে টুকরো করতে চাইছে, তাদের গদিচ্যুত করে শান্তি ফেরানোই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’’
মঙ্গলবার ইদ উপলক্ষে রেড রোডের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। কোভিড পরিস্থিতিতে প্রায় দু’বছর পর আয়োজন করা হল এই সভার। সকালে সেখানেই উপস্থিত হন মমতা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সভায় উপস্থিত জনতাকে ইদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দেশে ভেদাভেদ চলছে ঠিকই। কিন্তু বাংলা সবার থেকে আলাদা। আমরা সবার বিশ্বাস সব ধর্ম সঙ্গে নিয়ে চলি। এখানে যে যাঁর ধর্মাচরণ নিয়ে শান্তিতে থাকেন। তবে যখন উৎসব হয় তখন গোটা বাংলা তা একসঙ্গে পালন করে।’’ দেশের অন্য রাজ্যের সঙ্গে তুলনা টেনে এর পর মুখ্যমন্ত্রী পরোক্ষে আক্রমণ করেন কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারকে। নাম না করে বলেন, ‘‘বাংলার মতো ধর্মীয় ঐক্য দেশের আর কোথাও নেই। তাই অনেকেই আমাদের হিংসা করে। আমাদের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরির চেষ্টা করে। কিন্তু বাংলা লড়তে জানে। তারা এই ধরনের চেষ্টার কাছে মাথা নোয়াবে না।’’
ইদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে রেড রোডের মঞ্চে মমতার মুখে শোনা যায় উর্দু শায়রিও। মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই উর্দু ভাষায় ছ’টি বইও লিখে ফেলেছেন। তবে মঙ্গলবার মমতার শায়রিতেও ঘুরে ফিরে আসে শান্তি, একতার বার্তা।
ইদের সকালে মেঘ জমেছিল আকাশে। একটা সময় তুমুল বৃষ্টিও নামে। যারা ইদের নমাজ পড়়তে রেড রোডে এসেছিলেন, তাঁদের মমতা বলেন, আপনাদের জন্য চিন্তা হচ্ছিল আমার। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছিলাম, বৃষ্টি ততটাই হোক যাতে মনে শান্তি আসে। বৃষ্টি যেন কারও ক্ষতি না করে। কারও লোকসান হোক আমি চাই না।’’ এর পরেই মমতার সংযোজন, ‘‘দেশের পরিস্থিতি ঠিক নয়। তবে আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আপনাদেরও ‘অচ্ছে দিন’ আসবে।’’ লোকসভা ভোটের প্রচারে অচ্ছে দিনের বার্তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই স্লোগানকেই কটাক্ষ করে মমতার ব্যাখ্যা, ‘‘ঝুটা অচ্ছে দিন নয়। সচ্চে দিন। অচ্ছে দিন।’’ অর্থাৎ সত্যিকারের ভাল দিন আসবে। কী ভাবে? মমতা জানান, ‘‘যত দিন আমি বেঁচে আছি আপনাদের সবার জন্য লড়ব। সে আপনারা হিন্দু হোন, মুসলিম, খ্রিস্টান হন বা শিখ। আমার জীবন আমি ইনসাফ, ইনশান, ইনশানিয়তের জন্য কুরবানি দিতে রাজি, কিন্তু পিঠ ফেরানোর মানুষ নই। আমার উপর বিশ্বাস রাখুন।’’
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসার শুরু থেকই সংখ্যালঘু ভোট মমতার পক্ষে ছিল। রাজ্যের সংখ্যালঘুদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়, ধর্মীয় আচরণের একাধিক সুবিধাও করে দিয়েছেন মমতা। মঙ্গলবার ইদের সভায় মমতা বললেন, তিনি তাঁর সরকারেও সংখ্যালঘু প্রতিনিধিদের রেখেছেন তাঁদের উপর বিশ্বাস রেখেছেন। কারণ তিনি সবাইকে নিয়ে চলায় বিশ্বাস করি।