tmc

তৃণমূলের জেলা শীর্ষে সেই মহুয়া 

গত লোকসভা ভোটে জেলার দু’টি কেন্দ্রের একটি রানাঘাট হাতবিজেপির কাছে খোয়ানোর পরে জেলা সভাপতির পদ থেকে গৌরীশঙ্কর দত্তকে সরিয়ে দু’টি সংগঠনিক জেলায় ভাগ করা হয়েছিল তৃণমূলের সংগঠনকে।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২০ ০৩:০০
Share:

মহুয়া মৈত্র—ফাইল চিত্র।

বিধানসভা নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে নদিয়ায় শেষমেশ মহুয়া মৈত্রের উপরেই ভরসা রাখলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার ‘ভার্চুয়াল বৈঠকে’ দু’টি সাংগঠনিক জেলা কৃষ্ণনগর এবং রানাঘাটকে মিশিয়ে তিনি অবিভক্ত নদিয়ার জেলা তৃণমূল সভানেত্রী করলেন মহুয়াকে। সেই সঙ্গে মহুয়ার বিরোধী শিবিরের প্রধান মুখ বলে পরিচিত উজ্জ্বল বিশ্বাসকে চেয়ারপার্সন করে ভারসাম্য রক্ষারও চেষ্টা করেছেন রাজ্য নেতৃত্ব।

Advertisement

গত লোকসভা ভোটে জেলার দু’টি কেন্দ্রের একটি রানাঘাট হাতবিজেপির কাছে খোয়ানোর পরে জেলা সভাপতির পদ থেকে গৌরীশঙ্কর দত্তকে সরিয়ে দু’টি সংগঠনিক জেলায় ভাগ করা হয়েছিল তৃণমূলের সংগঠনকে। রানাঘাটের সভাপতি করা হয় বর্ষীয়ান নেতা শঙ্কর সিংহকে আর কৃষ্ণনগরের দায়িত্ব দেওয়া হয় ওই কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হওয়া মহুয়াকে। কিন্তু তার পর থেকে দু’টি সাংগঠনিক জেলাতেই দলের গোষ্ঠীকোন্দল ক্রমাগত বেড়েছে। উজ্জ্বলের নেতৃত্বে একযোগে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন বিধায়কেরা। সম্প্রতি তারই জেরে কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলায় কোর কমিটি গঠন করে উজ্জ্বলকে তার চেয়ারম্যানও করে দেন নেত্রী। এতে দলে অনেকেরই ধারণা হয়েছিল, মহুয়ার পদ খোয়ানো সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

কিন্তু হল তার উল্টো। বরং এক মাত্র উজ্জ্বল ছাড়া বাকি সমস্ত পুরনো দিনের নেতৃত্বকে প্রায় ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে মমতা দায়িত্বভার দিয়েছেন এমন লোকেদের যাঁরা নেতৃত্বের লড়াইয়ে সে ভাবে ছিলেনই না। জেলা জুড়ে বিরোধিতা সত্ত্বেও কেন মহুয়াকে ফের পদে বসালেন নেত্রী? দলের পোড় খাওয়া লেকেদের একাংশের ধারণা, বিধানসভা ভোটে নদিয়ায় কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে বুঝেই নেত্রী এমন নেতৃত্বের হাতে ব্যাচন তুলে দিতে চেয়েছেন যাঁরা দৌড়ঝাপ করে লড়াইটা তুঙ্গে নিয়ে যেতে পারবেন। জনসংযগের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে। এবং তিনি যে দৌড়তে পারেন তা করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে কৃষ্ণনগর লোকসভা আসন দখলের লড়াইয়ে মহুয়া তা প্রমাণ করে দিয়েছেন।
কিন্তু দলের অনেকেই ধাক্কা খেয়েছেন পোড় খাওয়া নেতা শঙ্কর সিংহকে জেলার রাজনীতির অঙ্গন থেকে নেত্রী কার্যত সরিয়ে নেওয়ায়। এত দিন তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতির পদ সামলে আসা শঙ্করকে রাজ্য কমিটির অন্যতম সহ-সভাপতি করা হয়েছে। কিন্তু এতে জেলার রাজনীতিতে তিনি অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়তে পারেন বলে নেতাকর্মীদের একাংশের আশঙ্কা। কেন এমন সিদ্ধান্ত? জেলা নেতাদের একাংশের ধারণা, সভাপতির পদে বসে গোষ্ঠীকোন্দল সামলাতে না পারাটাই শঙ্করের ক্ষেত্রে কাল হয়েছে। রানাঘাট সাংগঠনিক জেলায় এক পক্ষকে দায়িত্ব দিলে অন্য পক্ষকে সামলানো কঠিন। তাই এই বৃত্তের বাইরে থেকে মহুয়াকে এনে সমীকরণটা পাল্টানোর ব্যবস্থা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে শঙ্কর শুধু বলেন, ‘‘দল আমাকে যা দায়িত্ব দিয়েছে, আমি সেটাই পালন করব।’’

Advertisement

গত লোকসভা নির্বাচনে রানাঘাট ও কল্যাণী মহকুমা এলাকায় মতুয়া ভোটের একটা বড় অংশ হাতছাড়া হওয়ায় ভরাডুবি হয়েছিল তৃণমূলের। সেই ভোট ফিরিয়ে আনতে আনন্দমোহন বিশ্বাসের ছেলে, প্রাক্তন বিধায়ক তথা বর্তমানে রাজ্যসভার সদস্য আবীররঞ্জন বিশ্বাসকে জেলার পাঁচটি মতুয়া প্রভাবিত বিধানসভা কেন্দ্রের কো-অর্ডিনেটর করা হয়েছে। পাশাপাশি, রানাঘাট এলাকায় গোষ্ঠীকোন্দল সামলাতে জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি দীপক বসুকে ওই লোকসভা এলাকার বাকি চারটি বিধানসভা এলাকার দায়িত্ব দেোয়া হয়েছে। কারণ দীপক বসু সেই অর্থে কোনও দিনই কোনো গোষ্ঠীর লোক নন। আবার জেলার বিরাট সংখ্যক সংখ্যালঘু ভোটারের কথা মাথায় রেখে পুরনো নেতা, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নাসিরুদ্দিন আহমেদকে কৃষ্ণনগর ও তেহট্ট মহকুমার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নেত্রীর শেষ হওয়ার পর দলের কর্মীরা বলছেন, “আসলে বিধানসভা ভোটের আগে অনেকভেবেচিন্তে দিদি সবদিকে ‘ব্যালেন্স’ করলেন। এখন দেখায় তার এই প্রচেষ্টা কতটা সফল হয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement