বাম, কংগ্রেসকে তৃণমূলের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে আবেদন করলেন মমতা।ছবি পিটিআই।
আগে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাম, কংগ্রেসকেও একসঙ্গে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধেও বাম, কংগ্রেসকে তৃণমূলের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে আবেদন করলেন মমতা।
অসমের পরে পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসি করার যে হুমকি বিজেপি নেতারা দিচ্ছেন, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই যে একমাত্র পথ, তা বুঝিয়ে দিয়েই মমতা শুক্রবার বিধানসভায় বলেন, ‘‘এনআরসি এ রাজ্যে হতে দেব না। অসমে যা হয়েছে, এখানে তা সম্ভব নয়। এর জন্য আন্দোলনই একমাত্র পথ। আসুন সকলে মিলে লড়াই করি। তার পর দেখব কার কত ক্ষমতা!’’ বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এনআরসি-রি বিরোধিতা করায় তাঁকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন মমতা।
‘এ রাজ্যে কোনও ভাবেই এনআরসি লাগু করা যাবে না’— এই দাবিতে এ দিন বিধানসভায় প্রস্তাব আনে সরকার পক্ষ। শাসক তৃণমূলের সঙ্গে বাম, কংগ্রেস একসুর হলেও বিজেপি অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। এনআরসি-র বিরোধিতায় মমতার এই আহ্বানের আগেই অবশ্য বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘বাংলাবিরোধী, বাঙালিবিরোধী বিজেপি। এরা রামমন্দির, রামনবমী চাপিয়ে দিচ্ছে। এর জবাব সূর্যমন্দির, জগন্নাথ মন্দির নয়। এর জবাব মানুষকে সঙ্ঘবদ্ধ করে লড়াই করা।’’
তবে এখন বিজেপির বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়ার ডাক এলেও বিভিন্ন সময়ে কংগ্রেসকে দুর্বল করে বিজেপিকে শক্তিশালী করার চেষ্টাও হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। কংগ্রেসের মান্নান বলেন ‘‘এমন একটাও দলকে পাওয়া যাবে না, যারা কংগ্রেসকে দুর্বল করতে বিজেপির সাথে হাত মেলায়নি! বিড়ালকে এরা বাঘে পরিণত করেছে। আজ এর প্রায়শ্চিত্ত করতেই হবে।’’ তৃণমূলও অটল বিহারী বাজপেয়ীর জমানায় বিজেপির সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারে শরিক ছিল। সেই প্রসঙ্গের ইঙ্গিত দিয়ে মান্নানের এই ‘খোঁচা’ বলেই রাজনৈতিক শিবিরের মত।
বিজেপির মনোজ টিগ্গা আবার কংগ্রেসকেই বিঁধে বলেন, ‘‘১৯৮৫ সালে রাজীব গাঁধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন যে চুক্তি সই করেন, সেখানে এনআরসির কথা আছে। এটা বিজেপি করেনি, কংগ্রেস করেছে।’’ এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে টিগ্গা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘বামেরা বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলা থেকে লোক এনে ভোট করায় বলে আপনিই সাংসদ থাকাকালীন সংসদে মুলতবি প্রস্তাব এনেছিলেন। আপনিই ১৯৯৩ সালে বলেছিলেন ‘নো আইডেন্টিটি নো ভোট’। তা হলে এখন দ্বিমত হচ্ছে কেন?’’ এর জবাবে মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা বলেন, ‘‘নো আইডেন্টিটি নো ভোট-এ লাভ হয়েছে কি হয়নি? তাতে কি কাউকে তাড়িয়ে দিতে হয়েছে? মানুষের অস্তিত্বের ঠিকানা, পরিচয় এটা।’’
এনআরসি-র মাধ্যমে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের চিহ্নিত করে এ দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে বলে কেন্দ্রের তরফে বারবার বলা হচ্ছে। কিন্তু সেই তালিকায় অনেক হিন্দুও রয়েছেন বলে বিধানসভায় জানান ফরওয়ার্ড ব্লকের আলি ইমরান রামজ। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বিদেশমন্ত্রী বাংলাদেশে গিয়ে বলছেন এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তা হলে শরণার্থী শিবিরে(ডিটেনশন ক্যাম্প) যে লক্ষ লক্ষ মানুষকে রাখা হচ্ছে, তাঁদের তা হলে কোন দেশে পাঠাবেন? তাঁরা কি সারাজীবন শরণার্থী শিবিরেই থাকবেন?’’ বাংলাদেশের অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা কত, তা নিয়ে কেন্দ্র কোনও তালিকা প্রকাশ করেনি কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ইমরান।
বিধানসভায় বিজেপিকে বিঁধে শাসক-বিরোধীর একসুর হলেও সভার বাইরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সর্বভারতীয় সহ-সম্পাদক শচীন্দ্রনাথ সিংহ এ দিনই এনআরসি-র সমর্থনে যুক্তি দেন, ‘‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার জন্য এনআরসি প্রয়োজন।’’ মানুষকে এর প্রয়োজন বোঝাতে রাজ্য জুড়ে জনজাগরণ সমাবেশ করবে পরিষদ।