Mahua Moitra

দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু আমি ভয় পাইনি! প্রথম ভাষণে মহুয়া আরও বেশি আক্রমণাত্মক

বহিষ্কার হওয়ার পর সংসদ থেকে বেরিয়ে মহুয়া মৈত্র জানিয়েছিলেন, শেষ দেখে ছাড়বেন! সেই ‘শেষ’ হয়েছে এবং তিনি দেখেছেন। সংসদে পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানালেন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪ ১৮:২৮
Share:

মহুয়া মৈত্র। — ফাইল চিত্র।

তাঁকে বহিষ্কারের দিন সংসদ কৌরবদের সভায় পরিণত হয়েছিল। তাঁর বস্ত্রহরণের চেষ্টা করা হয়েছিল। যাঁরা করার চেষ্টা করেছিলেন, ভোটে তাঁদের কী পরিণতি হয়েছে, তা অষ্টাদশ লোকসভায় নিজের প্রথম ভাষণে স্মরণ করিয়ে দিলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। বহিষ্কার হওয়ার পর সংসদে ফিরে আরও জোরালো ভাবে আক্রমণ করলেন মোদী সরকারকে। জানালেন, তাঁকে বসিয়ে দিলে (বহিষ্কার) আরও ‘ভারী’ পড়বে। এও জানালেন, দুঃশাসনবাহিনীর হাত থেকে রক্ষার জন্য কৃষ্ণের মতো তাঁর রক্ষক হয়েছেন কৃষ্ণনগরের মানুষ। পাশে বসে টেবিল বাজিয়ে তাঁকে সমর্থন জুগিয়ে গেলেন তৃণমূলের আর এক সাংসদ সায়নী ঘোষ।

Advertisement

মহুয়া তাঁর বক্তৃতায় আগাগোড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করেছেন। যদিও সেই সময় মোদী লোকসভায় ছিলেন না। বস্তুত, মহুয়া যখন বলতে উঠছেন, তখনই মোদী নিজের আসন ছেড়ে উঠে পড়েন সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। সেটি লক্ষ্য করে মহুয়া সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আমার কথা শুনে যান। ভয় পাবেন না। আমার কেন্দ্রে দু’বার এসেছেন। এ বার আমার কথা শুনে যান।’’ মোদী অবশ্য তাতে কর্ণপাত করেননি।

গত ৮ ডিসেম্বর সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল মহুয়াকে। সে দিন তিনি বেরিয়ে বলেছিলেন, ‘শেষ’ দেখে ছাড়বেন! সেই ‘শেষ’ তিনি দেখে নিয়েছেন, সোমবার লোকসভার অধিবেশন স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন। রাষ্ট্রপতির প্রারম্ভিক ভাষণ নিয়ে আলোচনায় আগের থেকেও কড়া ভাষায় আক্রমণ শানালেন মোদী সরকারকে। নাম না করেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর উদ্দেশে বললেন, ‘‘আমাকে বসানোর চক্করে জনতা আপনার ৬৩ জন সাংসদকে বসিয়ে দিয়েছে।’’ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি একা জিতেছিল ৩০৩টি আসনে। এ বার তারা জয়ী হয়েছে ২৪০টি আসনে। সেই প্রসঙ্গেই খোঁচা দিলেন তিনি। মহুয়া এও মনে করিয়ে দিলেন যে, একার বলে ৫৪৩ আসনবিশিষ্ট লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘আমায় বসাবেন না, আরও ভারী পড়বে।’’ তিনি সংসদ থেকে নিজের বহিষ্কার হওয়ার দিনের সঙ্গে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের তুলনা করলেন। তাঁর কথায়, ‘‘৮ ডিসেম্বর কুরুসভা হয়েছিল সংসদে। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের চেষ্টা করেছিলেন দুঃশাসন। ধৃতরাষ্ট্র সে দিন অন্ধ ছিলেন।’’

Advertisement

এর পরেই মহুয়া পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানালেন, যাঁরা সে দিন তাঁর ‘বস্ত্রহরণ’-এ শামিল হয়েছিলেন, সেই এথিক্স কমিটির সদস্যদের লোকসভা ভোটে কী ফল হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এথিক্স কমিটি আমার বহিষ্কারে অনুমোদন দিয়েছিল। সেখানে ১০ জন সদস্য ছিলেন এবং এক জন চেয়ারপার্সন। পাঁচ জন সদস্য ছিলেন বিজেপির। তাঁদের মধ্যে চার জনই হেরে গিয়েছেন। চেয়ারপার্সনও হেরেছেন। কংগ্রেসের যে সাংসদ তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন, তিনিও হেরেছেন। মহারাষ্ট্রের যে সাংসদ বিজেপির হয়ে বিতর্ক তুলেছিলেন, তিনিও হেরেছেন। কৃষ্ণের মতো কৃষ্ণনগরবাসী আমায় রক্ষা করেছিলেন।’’

বহিষ্কারের পর নিজের অবস্থাও সংসদে তুলে ধরলেন মহুয়া। অনেকেই তাঁকে দেখে কী বলতেন, তিনি অনেক কিছু হারিয়েছেন। কিন্তু তিনি কী পেয়েছিলেন, তা-ও জানিয়ে দিলেন সোমবার সংসদে। তাঁর কথায়, ‘‘অনেকে বলতেন, সাংসদপদ হারিয়েছ, বাড়ি হারিয়েছ। ইউটেরাসও অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হয়েছিল আমার। কিন্তু, কী জিতেছি জানেন? রাহুলজি যা বলেন, তা জিতেছ— ‘ভয় থেকে মুক্তি।’ তোমার ইডি, সিবিআই, আয়কর দফতর কেউ হারাতে পারেনি আমাকে।’’ এমনকি এ-ও জানিয়েছেন, মোদীর তাঁর উপর বিশেষ ‘কৃপা’ ছিল। সে কারণে তাঁর লোকসভা আসন কৃষ্ণনগরে দু’বার জনসভা করতে এসেছিলেন। তাতেও লাভ হয়নি। এর পর সংসদে মহুয়া পরিসংখ্যান তুলে ধরে এই দাবিও করেন যে, যেখানে যেখানে প্রধানমন্ত্রী জনসভা করেছেন, তার বেশির ভাগ জায়গাতেই হেরেছে বিজেপি। এমনকি রামও ভোট বৈতরণী পার করাতে পারেনি বিজেপির, এই বলে কটাক্ষ করলেন মহুয়া। মনে করিয়ে দিলেন ফৈজাবাদ আসনে সমাজবাদী পার্টির প্রার্থীর কাছে বিজেপির হারের কথা। অযোধ্যা ফৈজাবাদ লোকসভা আসনের অধীনে পড়ে। তাঁর খোঁচা, ‘‘রাম বলল, থাক, আমার নামে আর নয়। অতি দর্পে হত লঙ্কা।’’ আর এই দর্পের জন্য ‘গণদেবতা’ শাস্তি দিয়েছে মোদীকে, দাবি করলেন মহুয়া।

সোমবার সংসদে আলোচনায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ভাষণের ছ’টি বিষয় তুলে ধরেও মোদী সরকারকে কটাক্ষ করেছেন মহুয়া। মণিপুর নিয়ে কেন্দ্রের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ থেকে বিজেপির মহিলা সাংসদের সংখ্যা হ্রাস, সব নিয়েই সরব হয়েছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ভোটের প্রচার খোদ প্রধানমন্ত্রী সংখ্যালঘুদের অবমাননা করে মন্তব্য করলেও ‘মূক, বধির’ হয়ে ছিল কমিশন। ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে বিমানবন্দরের ‘বেহাল’ দশাও ফিরে এসেছে তাঁর ভাষণে। কাশ্মীরের তিন আসনে বিজেপি কেন প্রার্থী দিতে পারল না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘ভারতবাসী ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করবে এই সরকারের পতনের জন্য।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement