মহুয়া দাস। ফাইল চিত্র।
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল মহুয়া দাসকে। তাঁর জায়গায় নতুন সভাপতি হলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য।
পরীক্ষার্থীর ধর্ম পরিচয় তুলে ধরে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন মহুয়া। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষণা করতে গিয়ে প্রথমা রুমানা সুলতানার মুসলিম পরিচয় তুলে ধরেছিলেন তিনি। যার পরই নেটমাধ্যমে তো বটেই, রাজনৈতিক মহলেও বিতর্কের ঝড় বয়ে যায়। পরে মহুয়া বলেন,“পরীক্ষার্থীর ধর্ম পরিচয় তুলে ধরা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। আবেগের বশে মুখ থেকে বেরিয়ে গিয়েছে।” তাঁর দাবি ছিল, আসলে সকলের সঙ্গে রুমানার গৌরব ভাগ করে নিতে চেয়েছিল সংসদ। এই প্রসঙ্গে বেগম রোকেয়ার প্রসঙ্গও তুলেছিলেন তিনি।
মহুয়ার আচরণ নিয়ে শিক্ষা মহলও ছিল রীতিমতো সরগরম। এর বিরুদ্ধে সল্টলেকে শিক্ষা সংসদের দফতরের বাইরে বিক্ষোভ দেখান শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের সদস্যরা। মহুয়ার পদত্যাগের দাবি তোলেন তাঁরা। বিক্ষোভ হটাতে এলে পুলিশের সঙ্গে সঙ্ঘর্ষও বাধে তাঁদের। বেশ কয়েক জনকে আটক করা হয়।
সেই সরকারি নির্দেশিকা।
সেই পরিস্থিতিতে শিক্ষা সংসদেই এই বিতর্ক নিয়ে মুখ খুলেছিলেন মহুয়া। তিনি বলেছিলেন, ‘‘সংসদের ইতিহাসে এই প্রথম এত ভাল রেজাল্ট। মেয়েটি শিক্ষার রত্ন। ওকে নিয়ে কথা বলার সময় বেগম রোকেয়ার কথা মনে পড়ছিল আমার, যিনি একই রকম ভাবে পড়াশোনায় ভাল ছিলেন। একই রকম ভাবে সকলের মধ্যে থেকে উঠে এসেছিলেন। তাই আবেগের বশে বলে ফেলেছিলাম। সাংবাদিকরা মেয়েটির সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। তাই কিছু তথ্য দিয়েছিলাম, যাঁতে মেয়েটিকে তাঁরা বুঝতে পারেন। মেয়েটির গৌরব সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চেয়েছিল সংসদ।’’
তবে মহুয়া ‘আবেগের বশে’ বলেছেন বলে সাফাই দিলেও, গোটা ঘটনায় রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে যায়। মহুয়ার আচরণে রাজ্য সরকারের ‘তোষণমূলক আচরণ’ ফুটে উঠছে বলে আক্রমণে শান দেন বিজেপি নেতৃত্ব। কার নির্দেশে মহুয়া ওই ছাত্রীর ধর্মীয় পরিচয় তুলে ধরলেন, আসলে কাকে তুষ্ট করতে চেয়েছিলেন তিনি, প্রশ্ন তোলেন রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। এ নিয়ে টুইট করেন বিজেপি-র আইটি সেলের প্রধান তথা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য এবং পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
যদিও তৃণমূলের তরফেও একই ভাবে মহুয়ার আচরণের নিন্দা করা হয়। দলের বিধায়ক তাপস রায় সে সময় বলেছিলেন, ‘‘আমার মনে হয় এটা একেবারেই হওয়া উচিত ছিল না। ধর্মের উল্লেখ করে এক জন পড়ুয়ার পরিচয় দেওয়া একেবারেই সমীচীন নয়।’’ গোটা বিতর্কে রুমানাও জানিয়েছেন, ধর্ম না এনে তাঁকে শুধু ছাত্রী বললেই ভাল হত।