জোর করে ‘জয় শ্রীরাম’ বলানো এবং আপত্তি তোলায় মারধর— ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলা এই অভিযোগের তালিকায় শেষ সংযোজন মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি।
রবিবার সকালে সাগরদিঘির জনসি এলাকায় মাদ্রাসা পড়ুয়া এক কিশোরকে ধরে জোর করে ‘জয় শ্রীরাম’ বলানো হয় বলে অভিযোগ। প্রথমিক আপত্তি তোলায় রাজিবুল আলম বলে ওই পড়ুয়াকে বেধড়ক মারধরও করা হয়। তার পর মোটর সাইকেল নিয়ে উধাও হয়ে যায় দুই যুবক। উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে এর পরেই। জনসি এবং আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েকশো বাসিন্দা প্রায় দু ঘণ্টা ধরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। আটক করা হয় ৪ জনকে। পুলিশ জানিয়েছে ধৃতেরা সকলেই দক্ষিণ দিনাজপুরের ইসলামপুরের বাসিন্দা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বেশ কয়েকটি মোটরবাইকে ইসলামপুর থেকে তারকেশ্বর যাচ্ছিল জনা দশেক যুবক। ভোরের দিকে বেলপুকুর এলাকায় এসে পৌঁছয় তারা। সেই সময়ে জাতীয় সড়ক ধরে সাইকেলে মাদ্রাসা যাচ্ছিল রাজিবুল। ওই কিশোর বলছে, ‘‘ওরা আমার সামনে এসে ঘ্যাঁস করে ব্রেক কষে মোটরবাইক থামায়। তার পর বলতে থাকে, ‘বল জয় শ্রী রাম, জোরে জোরে বল!’ আমি জানতে চাই, জয় শ্রী রামের মানে কি? তখন আমাকে সাইকেল থেকে নামিয়ে পেটাতে থাকল ওরা।’’ আহত রাজিবুলকে ভর্তি করানো হয় জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে।
খবর ছড়িয়ে পড়তেই বেলপুকুর এলাকায় রাস্তায় বসে পড়েন আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা। অবরোধের জেরে জাতীয় সড়কের দু’ধারে থমকে যায় যান চলাচল।
এই সময়ে অবরোধের মুখে এসে দাঁড়ায় আরও দু’টি মোটরবাইকে জনা চারেক যুবক, তাদেরও গন্তব্য তারকেশ্বর। জনতা এ বার তাদের ধরে পেটাতে থাকে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন জেলার পদস্থ পুলিশ কর্তারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই দুই যুবকও মারধরে অভিযুক্তদের সঙ্গী, মোটরবাইক খারাপ হয়ে গিয়েছিল বলেই পিছিয়ে পড়েছিল তারা।
আহত মাদ্রাসা ছাত্রটির আত্মীয় আক্তারুল আলম বলছেন, “পাঁচটি মোটরবাইকে অন্তত দশ জন তারকেশ্বরের দিকে যাচ্ছিল। প্রথম দু’টি বাইকে যারা ছিল তারা রাজিবুলকে মারধর করে পালায়। বাকিরা পিছিয়ে পড়েছিল। একটু পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই জনতা তাদের ধরে ফেলে।’’
জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মাদ্রাসা ছাত্রটিকে নিগ্রহের ঘটনায় ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। আরও কয়েক জনের খোঁজ চলেছে। ওই এলাকায় বাড়তি নজরদারি বসানো হয়েছে।”