প্রতীকী ছবি।
সাধারণ ভাবে নভেম্বরের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট হয়ে থাকে। কিন্তু এ বার অতিমারির মধ্যে সেই টেস্ট কবে হবে বা আদৌ হবে কি না, রাজ্যের আগামী বছরের কয়েক লক্ষ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এই নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। শুধু টেস্ট নয়, পড়ুয়াদের আরও প্রশ্ন, আগামী বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সময়মতো হবে তো, নাকি পিছিয়ে যাবে? এই জোড়া পরীক্ষায় পাঠ্যক্রম কিছুটা কমানো হবে কি না, উঠছে সেই প্রশ্নও।
শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী থেকে অভিভাবক— প্রত্যেকেই জানাচ্ছেন, করোনার দৌরাত্ম্যে অনেক স্কুলেই পাঠ্যক্রম শেষ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য কয়েক মাস সময় পাওয়া গেলেও এই দুই পরীক্ষার টেস্ট একেবারে দোরগোড়ায়। অভিভাবক ও পড়ুয়ারা চান, এ বার যদি টেস্ট ছাড়াই সকলকে আগামী বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে বসতে দেওয়া হয়, তা হলে শিক্ষা দফতর সেটা দ্রুত জানিয়ে দিক।
অনেকেরই প্রশ্ন, দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ। অনলাইনে কিছু কিছু ক্লাস হলেও গ্রামেগঞ্জে ইন্টারনেট পরিষেবা দুর্বল থাকায় এবং অনেকের স্মার্টফোন না-থাকায় তাঁরা সেই ক্লাস করতে পারেননি। তাই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যক্রম কমানো হবে কি? কমানো হলে কতটা কমানো হবে, সেই বিষয়েও পড়ুয়ারা অন্ধকারে।
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কিছু দিন আগে জানিয়েছিলেন, করোনা পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যক্রম কী হবে, রাজ্য সরকারের পাঠ্যক্রম কমিটি সেটা খতিয়ে দেখছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং টেস্ট কবে হবে, সেই বিষয়ে পর্যালোচনা করছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং উচ্চ মাধ্যমিক সংসদ। অভিভাবক ও পড়ুয়াদের প্রশ্ন, টেস্টের পাঠ্যক্রম ও সময়সূচি যদি অবিলম্বে জানানো না-হয়, তা হলে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি চালানো যাবে কী ভাবে?
শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, সব চেয়ে বেশি অনিশ্চয়তায় ভুগছেন গ্রামগঞ্জ বা মফস্সলের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজার-ঝাঁপবেড়িয়া হাইস্কুলের এক শিক্ষকের বক্তব্য, টেস্ট যদি না-হয়, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক সংসদের তরফে সেটাও জানিয়ে দেওয়া উচিত। পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর ব্লকের ঘোষডিহা হাইস্কুলের এক শিক্ষক জানান, গ্রামের স্কুলে অনলাইন ক্লাসও ঠিকমতো হয়নি। অনেক পরীক্ষার্থী বাড়িতে বসে যেটুকু পেরেছেন, পরীক্ষার প্রস্তুতি চালিয়েছেন। “আমাদের দাবি, পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বেগ কাটাতে শিক্ষা দফতর অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণা করুক,” বলেন ওই শিক্ষক।
কলকাতার স্কুলগুলিতে অনলাইন ক্লাস তুলনায় ভাল হলেও পরীক্ষা নিয়ে শহরের পড়ুয়া-অভিভাবকেরাও উদ্বিগ্ন। হিন্দু স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, “রাস্তাঘাটে দেখা হলে বা ফোনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের একটাই প্রশ্ন, ‘স্যর, টেস্ট তো চলে এল। পরীক্ষা আদৌ হবে তো? সিলেবাসেরই বা কী হবে।”
এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি, এসএমএসেরও জবাব দেননি। ফোন ধরেননি রাজ্য পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদারও।