Madhyamik examination

Madhyamik 2022: মাধ্যমিক দিতে যায়নি অনেকে, কারণ ঘিরে প্রশ্ন

এ বারের মাধ্যমিকের সঙ্গী হয়েছে নানান অঘটনও। রবিবার রাতে বাড়িতেই সর্পদষ্ট হয় পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা পলাশচাবরির পরীক্ষার্থী গৌতম ঘোষ। এ দিন পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে চন্দ্রকোনা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে সেখানে বসে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তবে পরীক্ষা শেষের আগেই তাকে ‘রেফার’ করতে হয় মেদিনীপুর মেডিক্যালে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২২ ০৬:২৯
Share:

শুরু হল মাধ্যমিক। পরীক্ষা শুরুর আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত এক পরীক্ষার্থী। সোমবার শহরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে রাজা বিজয় সিংহ বিদ্যালয়ে ২৮১ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে সোমবার, প্রথম দিনে গরহাজির ২৯ জন। ৪১০ জনের মধ্যে ২৬ জন অনুপস্থিত কোচবিহারে পশ্চিম ঘুঘুমারি হাইস্কুলে। কল্যাণীতে সাতটি পরীক্ষা কেন্দ্র মিলিয়ে ২৬ জন পরীক্ষার্থী হাজির হয়নি পরীক্ষা কক্ষে।

Advertisement

এই তিনটি নিতান্তই খণ্ডচিত্র। পুরো ছবিটা রীতিমতো উদ্বেগের। কারণ, জেলায় জেলায় বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে এ দিন অনেকেই পরীক্ষা দিতে যায়নি। সাধারণ ভাবে মাধ্যমিকে এই প্রবণতা দেখা যায় না। করোনার জন্য ২০২১ সালে পরীক্ষা হয়নি। এ বার কাগজে-কলমে মাধ্যমিক পরী‌ক্ষায় নাম লিখিয়েছিল ১১ লক্ষ ২৬ হাজার ৮৬৩ জন ছাত্রছাত্রী, যেটাকে বলা হচ্ছে রেকর্ড। দীর্ঘ অনভ্যাস, পরিব্যাপ্ত অতিমারির দরুন পঠনপাঠনে অনিয়ম, প্রস্তুতি-পাঠের জন্য পর্যাপ্ত সময় না-পাওয়ার মতো নানান কারণে পরীক্ষা শুরুর আগেই পরীক্ষা নিয়ে অজস্র প্রশ্ন ছিল শিক্ষা শিবির-সহ সমাজের সর্বস্তরে। আশঙ্কা ছিল, কাগজে-কলমে এই যে পরীক্ষার্থীর বিপুল সংখ্যা দেখানো হচ্ছে, তাদের সকলে পরীক্ষায় বসবে তো!

আশঙ্কা সত্যি করে অনুপস্থিত অসংখ্য। প্রথম দিনে ঠিক কত ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিকে বসেছে, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ থেকে রাত পর্যন্ত তা জানানো হয়নি। কিন্তু রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরহাজিরার যে-ছবি আসছে, তা চিন্তা বাড়িয়ে দেওয়ার মতোই। প্রশ্ন জোরদার হচ্ছে, ফর্ম পূরণ করেও ওই সব পরীক্ষার্থী গরহাজির কেন?

Advertisement

শিক্ষা শিবিরের একাংশের মতে, গত বছর মাধ্যমিক হয়নি। অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে ১০০ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাশ করে যায়। অনেকে ভেবেছিল, এ বারেও যদি করোনার কারণেই পরীক্ষা না-হয়, তা হলে পাশ করে যাবে। কিন্তু অফলাইনে সত্যি সত্যি পরীক্ষা শুরু হয়ে যাওয়ায় তারা আর পরীক্ষা দিতে আসেনি। কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘ফর্ম পূরণ করেও শেষ পর্যন্ত অ্যাডমিট কার্ড নিতে আসেনি, এমনও হয়েছে।’’

কোচবিহারে কমবেশি ৫০০ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। বীরভূমের বিনুরিয়া সুমিত্রা বালিকা বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর ছিল ১২০ জন। টেস্টে বসে ৯০ জন। কিন্তু এ দিন মাত্র ৮৫ জন পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়েছে। প্রধান শিক্ষিকা অদিতি মুখোপাধ্যায় মজুমদার বলেন, “করোনায় প্রায় দু’বছর স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনার সঙ্গে অনেক পড়ুয়ারই দূরত্ব বেড়েছে। সেই কারণেই অনেকে অনুপস্থিত।”

প্রথম ভাষার পরীক্ষা এ দিন নির্বিঘ্নেই হয়েছে বলে জানায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। পরীক্ষার্থীরা জানিয়েছে, প্রশ্নপত্র সহজ ছিল। তবে মাস্ক পরে পরীক্ষা দিতে একটু অস্বস্তি হয়েছে। লেখার অভ্যাস কমে যাওয়ায় টানা লিখতে গিয়েও অসুবিধা হয়েছে খানিকটা। কিন্তু বেশ কিছু স্কুলে পরীক্ষার্থীদের ঢোকার সময় স্যানিটাইজ়ার দিয়ে হাত পরিষ্কার করা এবং ‘থার্মাল গান’ দিয়ে তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হলেও কিছু স্কুলে তার বালাই ছিল না বলে অভিযোগ। তবে পরীক্ষার্থীরা জানিয়েছে, পারস্পরিক দূরত্ব মানা হয়েছে। মুর্শিদাবাদে পরীক্ষা কক্ষে একশো শতাংশ করোনা বিধি মেনে চলতে দেখা গেলেও পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রবেশপথে অভিভাবকদের ভিড়ে সেই বিধি শিকেয় উঠেছিল।

পর্ষদ জানায়, অনেকেই অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে পরীক্ষা দিয়েছে। অনেকেরই ক্লিপ বোর্ড স্বচ্ছ না-হওয়ায় তা নিয়ে তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ছড়ানো রুখতে মালদহের কালিয়াচক, রতুয়া, উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর, চোপড়া, শিলিগুড়ির বাগডোগরায় নেট পরিষেবা বন্ধ ছিল। মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন বিভিন্ন জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা অসুবিধায় পড়ছেন বলে ছাত্র সংগঠন ডিএসও-র অভিযোগ। ওই সংগঠনের কলকাতা জেলা সম্পাদক আবু সাইদ জানান, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের বেশ কিছু সিমেস্টারের অনলাইন পরীক্ষা চলছে। এ দিন ছাত্রছাত্রীরা প্রশ্নপত্র পাওয়া থেকে উত্তরপত্র অনলাইনে জমা দেওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন পর্বে সমস্যায় পড়েন। ডিএসও-র দাবি, প্রশ্নপত্র পাঠানো থেকে উত্তরপত্র অনলাইনে জমা দেওয়ার জন্য বাড়তি সময় দেওয়া হোক। সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) আশিস চট্টোপাধ্যায় অবশ্য জানান, স্নাতক স্তরের পরীক্ষায় এ দিন কোনও অসুবিধার অভিযোগ ওঠেনি। স্নাতকোত্তর পরীক্ষা নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ। সেই বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারছেন না।

এ বারের মাধ্যমিকের সঙ্গী হয়েছে নানান অঘটনও। রবিবার রাতে বাড়িতেই সর্পদষ্ট হয় পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা পলাশচাবরির পরীক্ষার্থী গৌতম ঘোষ। এ দিন পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে চন্দ্রকোনা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে সেখানে বসে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তবে পরীক্ষা শেষের আগেই তাকে ‘রেফার’ করতে হয় মেদিনীপুর মেডিক্যালে। পশ্চিম মেদিনীপুরে আরও এক জন, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এক জন, পূর্ব বর্ধমানে দু’জন এবং হুগলিতে তিন পরীক্ষার্থী হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা দেয়।

পূর্ব বর্ধমানের ভাতারে পরীক্ষা শুরুর আগের দিনেই এক পরীক্ষার্থীর বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল তার পরিবার। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, রবিবার রাতে ওই পরীক্ষার্থীর বিয়ের আয়োজনের খবর পেয়েই ভাতার থানার পুলিশ তার বাড়িতে হাজির হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় বিয়ে। ভাতার থানার ওসি সৈকত মণ্ডল জানান, বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, পাত্রী নাবালিকা। সে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। মেয়েটি জানায়, সে পরীক্ষায় বসতে চায়। সোমবার তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যায় পুলিশ। পরীক্ষার পরে তারাই তাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। নদিয়ার মুরুটিয়ার বানিয়াকাঁদি গ্রামে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী স্ত্রীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে বাধা দিচ্ছিলেন স্বামী। পুলিশ গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যায়। পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের রায়নার এক ছাত্র।

আজ, মঙ্গলবার মাধ্যমিকে দ্বিতীয় ভাষার পরীক্ষা রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement