প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র। ছবি ফাইল চিত্র।
এক সময়ে তিনি যে হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতিতে ছিলেন এবং নিজে দীর্ঘদিন যেখানে চিকিৎসা করিয়েছেন, সেই এসএসকেএমের বর্তমান অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়কে তুলোধোনা করলেন প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র, প্যারামেডিক্যালের এক দল ছাত্রছাত্রীর সামনে। অভিযোগ আনলেন হাসপাতালে বেনিয়মের। এমনকি সেই ভিডিয়ো আপলোড করা হল সোশ্যাল মিডিয়ায়।
এই নিয়ে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনিক মহলে তোলপাড় শুরু হওয়ার পরে অবশ্য সুর বদলে ফেলেন মদন। বিকেলের দিকে জানান, একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। অধিকর্তা সম্পর্কে কিছু লোক তাঁকে ভুল বুঝিয়েছিলেন বলে তিনি বিরূপ মন্তব্য করে ফেলেছেন। আজ শুক্রবার মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি নিজে ফুল দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলবেন!
গন্ডগোলের সূত্রপাত অবশ্য ভিন্ন বলে জানিয়েছে হাসপাতালের একাংশ। গত বুধবার এসএসকেএমের ভিতরে সভা করার জন্য অধিকর্তার অনুমতি চেয়েছিল প্যারামেডিক্যাল ছাত্রদের তৃণমূল সংগঠন। অভিযোগ, ক্লাসরুমের ভিতরে মদন মিত্রকে নিয়ে সভা করতে চেয়েছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। সেই অনুমতি না পেয়ে গোলমালের সূত্রপাত। ঘটনাচক্রে তারপরই হাসপাতালে পৌঁছে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন মদন।
হাসপাতালে দাঁড়িয়ে অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যাকে উদ্দেশ করে ছাত্রদের সামনে মদন বলেন, ‘‘এমআরআই, সিটি স্ক্যানের জন্য কী ভাবে টাকা খাওয়াতে হচ্ছে! রোগী ভর্তি করতে লোকে ৮০ হাজার টাকা ঘুষ নিচ্ছে। আপনি কী করছেন? কেন বসে থাকেন ঠান্ডা ঘরে? কেন বেরিয়ে রাউন্ড দেন না?’’
মদনবাবুর আরও মন্তব্য ছিল, ‘‘পিজির যাঁরা ডিরেক্টর-সুপার হবেন, তাঁরা দিনে চার ঘণ্টা রাউন্ড মারবেন। আমরা এই ধরনের ডাক্তারদের দেখেছি। তা উনি যখন বসতে দেননি, আমরা এখানে দাঁড়িয়ে মিটিং করলাম। আর ওঁকে বলে দেবেন, মদন মিত্র বলে গিয়েছে, পরের দিন আপনার ঘরে মিটিং করব।’’ উপস্থিত জনতার উদ্দেশে এর পর মদনবাবুর বক্তব্য ছিল— ‘‘হাসপাতাল ছয়লাপ করে দিন পোস্টারে যে, দুর্নীতিবাজ ডিরেক্টরের কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও।’’ এই পুরো বক্তব্যের ভিডিয়ো রেকর্ডিং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হতেই শোরগোল পড়ে যায়।
বৃহস্পতিবার সকালে মদন মিত্রকে এ ব্যাপারে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘প্যারামেডিক্যালের তৃণমূল সংগঠন মিটিং করার জন্য হাসপাতালের একটা ঘর চেয়েছিল। উনি তা দেননি। অধিকর্তা হাসপাতালের কাজকর্মে নজর দিচ্ছেন না বলে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে। এর জন্য দালালরাজের রমরমা হচ্ছে। অভিযোগ, উনি হাসপাতালে রাউন্ড দেন না। শুধু ঠান্ডা ঘরে বসে থাকেন। স্বজনপোষণ করেন।’’ এ ব্যাপারে মণিময়বাবুকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমার কিছু বলার নেই। যা জানানোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’
এ দিন বিকেলেই সুর পাল্টে মদনবাবু জানান, কিছু ভুল বোঝাবুঝি, বোঝাপড়ার অভাব হয়েছিল। কিছু লোক এসএসকেএমের অধিকর্তা সম্পর্কে তাঁকে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন। কারা, কী উদ্দেশ্যে সেই ভুল তথ্য দিয়েছিলেন, তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান প্রাক্তন মন্ত্রী।