সুকান্ত মজুমদার এবং রাজীব কুমার। —ফাইল চিত্র।
বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের উপর হামলার অভিযোগের প্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার-সহ তিন পুলিশকর্তা তলব করা হল লোকসভায়। আগামী সোমবার লোকসভার স্বাধিকার রক্ষা কমিটি (প্রিভিলেজ কমিটি)-র মুখোমুখি হতে বলা হয়েছে তাঁদের। এই মর্মে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে লোকসভার সচিবালয় থেকে। চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজ্য পুলিশের ডিজি, বসিরহাট পুলিশ জেলার সুপার এবং অতিরিক্ত সুপার যাতে স্বাধিকার রক্ষা কমিটির মুখোমুখি হন, তা নিশ্চিত করতে হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে।
বুধবার সন্দেশখালি যাওয়ার পথে বাধা পেয়েছিলেন সুকান্তেরা। পরে সাংসদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে তাঁকে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁকে ওই হাসপাতালের আইসিইউ থেকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, সুকান্তকে হেনস্থা করা হয়েছে। তাতে সাংসদের প্রাণ সংশয়ও হতে পারত বলে দাবি করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতেই বাংলার ডিজি রাজীব, উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট পুলিশ জেলার সুপার হোসেন মেহেদি রহমান এবং অতিরিক্ত সুপার পার্থ ঘোষকে তলব করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ওই তিন পুলিশকর্তাকে আগামী সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ের ২ নম্বর কমিটি রুমে হাজির থাকতে হবে। উক্ত পুলিশকর্তারা যাতে সঠিক সময় সঠিক স্থানে পৌঁছে যান, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে অমিত শাহের মন্ত্রককে।
সুকান্তের সঙ্গে রাজ্য পুলিশের টানাপড়েন শুরু হয়েছিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, বসিরহাটে পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ দিয়ে। দুপুরে সুকান্ত পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে ট্রেনে চেপে বসিরহাট এসপি অফিসের সামনে পৌঁছে যান। সঙ্গে তাঁর অনুগামীরা। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে একটা সময়ে এগিয়েও যান তাঁরা। তখন পুলিশ লাঠি চালায় এবং কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। উল্টো দিকে বিজেপির লোকজন ইট ছোড়ে বলেও অভিযোগ। দু’পক্ষের একাধিক লোকজন জখম হন। সুকান্তের এক রক্ষীও জখম হন। পুলিশ সেখান থেকে সুকান্তকে বার করে নিয়ে আসে। এর কয়েক ঘণ্টা পরে সুকান্ত ফের ওই অফিসের সামনে গিয়ে ধর্নায় বসেন কয়েক জন সঙ্গীকে নিয়ে। পরে এসপি অফিসের সামনে থেকে তাঁদের তুলে দেওয়া হয়। দাবি, প্রথমে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়, পরে কিছু দূরে এনে ব্যক্তিগত বন্ডে ছেড়ে দেওয়া হয়। সুকান্ত রাতে টাকির একটি হোটেলে এসে ওঠেন।
বুধবার সরস্বতী পুজো ছিল। দলীয় সূত্রে খবর, সুকান্তরা ঠিক করেন, পুজো করবেন। এর মধ্যে টাকির সেই হোটেলের সামনে পুলিশে ছয়লাপ হয়ে যায়। বিজেপি কর্মীরা সরস্বতীর দু’টি মূর্তি নিয়ে হোটেলে ঢোকেন। পরে কয়েক জন একটি মূর্তি নিয়ে সামনের দরজা দিয়ে বার হতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের বচসা শুরু হয়। অন্য দিকে, পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে সুকান্ত হোটেলের পিছনের দরজা দিয়ে অন্য মূর্তিটি নিয়ে বার হন। ইছামতীর পাড়ে পুজোও করেন। সেখানেও পুলিশ ঘিরে ছিল তাঁকে। সেখান থেকে হোটেলে ফেরার সময় ফের গোলমাল বাঁধে। হোটেলের সামনে পুলিশের গাড়ি দিয়েই পথ আটকানো ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, আচমকা সুকান্ত পুলিশের একটি গাড়ির বনেটের উপরে উঠে স্লোগান দিতে শুরু করেন। এক পুলিশকর্মী তাঁকে নামাতে এগিয়ে আসেন। বিজেপির লোকজন আপত্তি করেন। তখন অন্য এক পুলিশকর্মী গাড়ির বনেটে উঠে পড়েন। সেই সময় এক মহিলা বিজেপি কর্মী ওই পুলিশ কর্মীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, এই সময়ে দু’দিকের টানাটানিতে বনেটের উপরে পড়ে যান সুকান্ত। তার মধ্যেই তাঁকে নীচে নামিয়ে আনা হয়।
বিজেপির অভিযোগ, এর পরেই লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। লাঠির ঘায়ে জখম ও অসুস্থ হয়ে পড়েন সুকান্ত। তাঁর নিরাপত্তায় থাকা সিআইএসএফ জওয়ানরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের ওই গাড়িতে করেই (যার সামনের একটি কাচ বিজেপির ধাক্কায় ভেঙেছে, দাবি পুলিশের) সুকান্তকে বসিরহাট হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসায় অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে স্থানান্তরিত করানো হয়। পুরো সময়ে তাঁকে অক্সিজেন দিতে দেখা গিয়েছে।
কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে নিউরোলজি বিভাগে সুকান্তের চিকিৎসা চলছে বর্তমানে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, বুধবার রাতে এমআরআই করা হয়েছিল। তার আগে সিটি স্ক্যানও হয়েছিল তাঁর। চোটের কারণে মূলত কোমরে সমস্যা ধরা পড়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আরও চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে সুকান্তের। চিকিৎসকেরা সব পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁকে তরল খাবার খেতে দেওয়া হচ্ছে। স্নায়ুর চিকিৎসা চলবে তাঁর। বৃহস্পতিবার সকালেও তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন সুকান্ত। সন্ধ্যায় তাঁকে আইসিইউ থেকে স্থানান্তরিত করা হয়।