—প্রতীকী চিত্র।
‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ পাচ্ছেন তো? পুরুলিয়ায় ভোটের প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বারবারই এই প্রশ্ন করেছেন। সভার মহিলা ভিড় হাত নেড়ে সম্মতিও জানিয়েছে।
তৃণমূলের বর্ষীয়ান প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোও গ্রামে গ্রামে গিয়ে শুনেছেন, মা-বোনেরা লক্ষ্মীর ভান্ডারে আর্থিক সাহায্য পাচ্ছেন। কিন্তু ভোটে হারের পরে তৃণমূলের কাটাছেঁড়ায় সামনে আসছে, রাজ্যের অন্যত্র লক্ষ্মীরা তৃণমূলের ভোট ভান্ডার ভরে দিলেও পুরুলিয়ায় মহিলা ভোট প্রত্যাশামতো ঘাসফুলে পড়েনি।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, পুরুলিয়ায় ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পে উপভোক্তার সংখ্যা ৬ লক্ষ ২৫ হাজার ৯৭৬ জন। তা ছাড়া, কন্যাশ্রী-২ প্রকল্পে ১৬,৮৬৪ জন ও রূপশ্রী প্রকল্পে ১৪,৩৫১ জন উপভোক্তা রয়েছেন। এ ছাড়া, বিধবা ভাতা পান জেলার ৬০,১৭৪ জন। জঙ্গলমহলের এই জেলায় মহিলা ভোটারের সংখ্যা ১১ লক্ষ ৮০ হাজার ৯৯৩ জন। তার মধ্যে পুরুলিয়া লোকসভার মহিলা ভোটার ৯ লক্ষ ২২ হাজার ১৮২ জন (জেলার দু’টি বিধানসভা পড়শি জেলার লোকসভায় পড়ে)।
এই মহিলা ভোটারদের একটা বড় অংশ লক্ষ্মীর ভান্ডারের উপভোক্তা হওয়ায় জেলা তৃণমূল ধরেই নিয়েছিল, এই ভোটের বড় অংশই তারা পাবে। গত দু’বছর একশো দিনের কাজ বন্ধ। বকেয়া মজুরিও আটকে থেকেছে। এই কঠিন সময়ে লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রকল্পই গ্রামীণ পরিবারগুলিতে নগদ অর্থের জোগান দিয়েছে।
তা-ও ভোটে তার সুফল পায়নি তৃণমূল। শান্তিরাম ভোট পেয়েছেন ৫ লক্ষ ৬১ হাজার ৪১০টি। আর বিজেপির জয়ী প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর ঝুলিতে গিয়েছে ৫ লক্ষ ৭৮ হাজার ৪৮৯টি ভোট। অনেক বুথেই তৃণমূল অনেকটা পিছিয়ে। যেমন, হুড়া ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত লধুড়কা গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি বুথে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ২০৪, আর তৃণমূল পেয়েছে মাত্র ৫৮টি ভোট। মানবাজার বিধানসভা থেকে তৃণমূল ১৫,৩৭১ ভোটের লিড পেলেও এখানকারই তৃণমূল পরিচালিত দলদলি পঞ্চায়েতের একটি বুথে বিজেপি পেয়েছে ৪৭৩টি ভোট, আর তৃণমূলের প্রাপ্তি মাত্র ৬৬টি ভোট।
জেলার তিনটি পুরসভাতেও ধরাশায়ী ঘাসফুল। পুরুলিয়া পুরসভার ২৩টির মধ্যে মাত্র ২টি ওয়ার্ডে, ঝালদায় ১২টির মধ্যে মাত্র একটিতে এবং বাঁকুড়া লোকসভার অধীন রঘুনাথপুরে ১৩টি মধ্যে মাত্র একটি ওয়ার্ডে লিড পেয়েছে তৃণমূল। পুরুলিয়া পুরসভায় তৃণমূলের দখলে থাকা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথেও বিজেপি পেয়েছে ৩৭৩টি ভোট, আর তৃণমূলের প্রাপ্তি মাত্র ৭৮টি ভোট।
মহিলা ভোট যথেষ্ট না পাওয়াতেই এই ফল, মানছেন তৃণমূলের পুরুলিয়া লোকসভার চেয়ারম্যান সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডার যে মুখ্যমন্ত্রীর মানবিক একটি প্রকল্প, সেটা আমরা সর্বত্র বোঝাতে পারিনি। মুখ্যমন্ত্রী বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় যে মহিলারা গিয়েছেন, তাঁরা হয়তো বুঝেছেন। কিন্তু বাড়ি বাড়ি প্রচারে ঘাটতি থেকে গিয়েছে।’’ প্রার্থী শান্তিরামও বলেন, ‘‘এই প্রকল্পে হাতে নগদ টাকার জোগান মহিলাদের ক্ষমতায়নে কতটা সহায়তা করেছে, সাংগঠনিক দুর্বলতায় আমরা তা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছি। না হলে জয় নিশ্চিত ছিল।’’
তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার আবার মত, ‘‘বিজেপি অন্নপূর্ণা ভান্ডার দেবে বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। ওরা স্পষ্ট করেনি যে, রাজ্যে না কেন্দ্রে, কোথায় ক্ষমতায় এলে এটা দেবে। অনেকেই ভেবেছেন, লক্ষ্মীর ভান্ডার তো পাচ্ছিই। বিজেপি এলে মাসে আরও ৩ হাজার টাকা পাব।’’ বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর অবশ্য মত, ‘‘বিজেপি ভবিষ্যৎ গড়বে, এই বিশ্বাসেই মা-বোনেরা আমাদের ভোট দিয়েছেন। পরিযায়ী শ্রমিকের লক্ষ্মীর ভান্ডার পাওয়া মা-ও বুঝেছেন, রাজ্যে কাজ না থাকার সঙ্কট। তা ছাড়া, জনকল্যাণকর প্রকল্প করা যে কোনও সরকারের দায়িত্ব। তার মানে সব উপভোক্তার ভোট শাসকদল দাবি করতে পারে না।’’