বিতর্কে: শাসকদলের প্রচার-ফ্লেক্সে সরকারি প্রকল্পের তালিকায় দলনেত্রীর মুখ। সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র
নির্বাচনী আচরণবিধি থেকে ‘বাঁচতে’ রাজ্য সরকারি প্রকল্পের খতিয়ান লেখা প্রচার ফ্লেক্সে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদলে নাম বসল ‘দিদি’র।
এমনই দেখা গেল সিউড়িতে। তৃণমূল জেলা কার্যালয়ের সামনে।
ভোট-নির্ঘণ্ট ঘোষণা ও নির্বাচনী আচরণবিধি লাগু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সরকারি দফতরের সামনে তো বটেই, প্রকাশ্য স্থান থেকে সরেছে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রচার। সরানো হয়েছে নরেন্দ্র মোদী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি থাকা সমস্ত সরকারি প্রকল্পের হোর্ডিং, ব্যানার, ফ্লেক্স।
সেখানেই ভিন্ন ছবি বীরভূমের জেলা সদরে। সিউড়ি শহরে জেলা তৃণমূল কার্যালয়ের বাইরে টাঙানো একটি বিশাল ফ্লেক্সে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ব্যবহার করে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রচারের ‘অন্যরকম’ কৌশল নিয়েছে শাসকদল।
সেই ফ্লেক্সে সরকারি প্রকল্পগুলির নাম থাকলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাতে মুখ্যমন্ত্রী নন, দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ‘দিদি’।
সুকৌশলে নির্বাচনী আচরণবিধি এড়িয়ে এ ভাবে সরকারি প্রকল্পের প্রচার নিয়ে আপত্তি তুলেছে বিরোধী বাম, বিজেপি। বিরোধী শিবিরের নেতাদের কয়েক জনের বক্তব্য— ‘‘কোনও ভাবেই সরকারি প্রকল্পের প্রচার জনসমক্ষে থাকার কথা নয়। আমরা এই বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানাব।’’ এ নিয়ে তৃণমূল নেতাদের প্রশ্ন, ‘‘দলনেত্রীর ছবি দিয়ে তাঁর ভাল কাজের প্রচার কী ভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের আওতায় পড়ে?’’
তৃণমূল সূত্রে খবর, রাজ্য সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কাজের কথা বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে— এমনই ঘোষিত নীতি জেলা তৃণমূলের। ব্লকে ব্লকে জনসভা, কর্মিসভা ও নির্বাচনী সভায় তা বার বার স্পষ্ট করেছেন দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। দলীয় নেতাদের বক্তব্য, ‘‘সেই নির্দেশ মেনেই সিউড়িতে জেলা তৃণমূল কার্যালয়ের সামনে টাঙানো হয়েছে বিশাল ফ্লেক্স।তা নিয়েই ছড়িয়েছে বিতর্ক।
শহর তৃণমূলের ‘সৌজন্যে’ ছাপানো ওই ফ্লেক্সে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবির নীচে রয়েছে তৃণমূলের লোগো। তাতে লেখা— ‘বিশ্ববন্দিত দিদির সামাজিক প্রকল্পগুলির কয়েকটি।’ সেখানে কন্যাশ্রী, শিশুসাথী, সবুজসাথী, নির্মল বাংলা, আমার ফসল আমার বাড়ি, শিক্ষাশ্রী থেকে জল ধরো জল ভরো, কর্মতীর্থ, খাদ্যসাথী সহ গোটা তিরিশেক প্রকল্পের নাম রয়েছে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা বলছেন, ‘‘যত দিন যাচ্ছে তৃণমূল দলে ততই অস্তিত্ব সঙ্কটও বাড়ছে। এত উন্নয়ন হয়ে থাকলে ভয় কীসের! ওদের বিশ্বাস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দিলেই সব উতরে যাবে। এ বার সেটা হবে না। দলনেত্রীর ছবি থাকুক, কিন্তু সরকারি প্রকল্পের নাম ব্যবহার করা বিধিভঙ্গ। আমরা কমিশনকে তা জানাব।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
প্রায় একই প্রতিক্রিয়া বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়েরও। তিনি বলছেন, ‘‘দিদি-র আড়ালে এ ভাবে সরকারি প্রকল্পের প্রচার চালানো যায় না। আমরা এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করব।’’
বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘অদ্ভুত যুক্তি! মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি তিনি তো আমাদের দলনেত্রী। দলনেত্রীর ভাল কাজের প্রচার ও ছবি কেন একটি দলীয় কার্যালয়ের বাইরে থাকবে না? এতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনই বা হল কোথায়!’’ তৃণমূল সূত্রে খবর, শুধু সিউড়ি শহরেই নয়, এমন প্রচার ভাবনা বিভিন্ন ব্লকে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। দলনেত্রী বা ‘দিদি’র ছবি সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ট্যাবলো ব্লকের ১২টি পঞ্চায়েত এলাকায় ঘোরানোর কর্মসূচি নিয়েছে মহম্মদবাজার ব্লক তৃণমূলও। দলের নেতারা বলছেন, ‘‘সেই ট্যাবলো তৈরি করা হচ্ছে। এপ্রিল থেকেই প্রতিটি গ্রামে ঘুরবে। কে কী বলছেন সেটা বিবেচ্য নয়।’’
জেলা নির্বাচনী দফতরের এক আধিকারিক এ নিয়ে বলেন, ‘‘সরকারি খরচ ছাডা়, অশোকস্তম্ভ বাদে কোনও রাজনৈতিক দল এ ভাবে প্রচার চালাতেই পারে।’’