মঞ্চে মহুয়া, শুভেন্দু ও গৌরীশঙ্কর। নিজস্ব চিত্র
দুই লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী ছিলেন। এলেন শুভেন্দু অধিকারীর মতো তাবড় নেতাও। কিন্তু করিমপুরে তৃণমূলের জনসভা তেমন জমল না।
নদিয়ার মধ্যে হলেও করিমপুরের অনেকটাই মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। সেই কেন্দ্রের প্রার্থী আবু তাহের খান তো ছিলেনই। করিমপুরের বিধায়ক থেকে যিনি কৃষ্ণনগরের সাংসদ হয়ে ওঠার দৌড়ে নেমেছেন, এবং জিতলে যিনি হয়ে উঠতে পারেন দিল্লিতে দলের অন্যতম উল্লেখযোগ্য মুখ, সেই মহুয়া মৈত্রও ছিলেন। কিন্তু ময়দানে মাথার ভিড় তেমন সাড়া দিল না। সভা শেষে ফেরার সময়ে হতাশা ঝরে পড়ল বহু কর্মীর চোখেমুখেও।
শুক্রবার বাথানপাড়া কলার হাটে আবু তাহেরের সমর্থনে করিমপুরে প্রথম সভা করলেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। মহুয়া ছাড়াও হাজির ছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত, নদিয়া-মুর্শিদাবাদের কয়েক জন তৃণমূল বিধায়কও। এই জনসভা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে এলাকায় প্রচারে কোনও ত্রুটি রাখেনি তৃণমূল। কিন্তু বেলা ১২টায় যে সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল, দুপুর দেড়টা গড়িয়ে গেলেও লোক জমল না।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
অবস্থা দেখে সভামঞ্চ থেকে করিমপুর ১ ব্লক সভাপতি বারবার মাইকে অনুরোধ করতে থাকেন, ‘‘যাঁরা এ দিক-ও দিক ছড়িয়ে আছেন, তাঁরা মাঠের ফাঁকা জায়গায় এসে বসে পড়ুন।’’ তখনও মাঠ ভরেনি। শেষে শুভেন্দু অধিকারী হেলিকপ্টার থেকে নেমে মঞ্চে আসার পরে মাঠ অনেকটা ভরে ওঠে। তবে তা যে আশানুরূপ নয়, তা নেতারা না মানলেও মানছেন সভায় উপস্থিত কর্মীরা।
এর মধ্যে সিঁদুরে মেঘ দেখার সঙ্গত কারণও আছে। করিমপুর ১ ব্লকের আটটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও করিমপুর ২ ব্লকের ছটি পঞ্চায়েত মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। করিমপুর ২ ব্লকের বাকি চার পঞ্চায়েত কৃষ্ণনগর লোকসভার অন্তর্গত। গত বিধানসভা নির্বাচনে ৩৯ বছর পরে সিপিএমকে হারিয়ে মহুয়া মৈত্র তৃণমূল বিধায়ক হয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে করিমপুর ১ ব্লকে বিজেপি যথেষ্ট ভাল ফল করে। করিমপুর ২ ব্লকে আবার বেশির ভাগ জায়গায় ভোটই হয়নি। হেরে যাওয়ার ভয়েই তৃণমূল ভোট করতে দেয়নি বলে অভিযোগ এনেছিল তৃণমূল।
করিমপুর ১ ব্লক বিজেপি সভাপতি অমল ঘোষের কটাক্ষ, “গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই ব্লকের আটটি পঞ্চায়েতে আমরা ৭০টি আসন পাই, তৃণমূল ৬১টি। ফলই প্রমাণ করে করিমপুরে কারা শক্তিশালী। এ দিন তৃণমূলের সভায় অনেকেই শুধু হেলিকপ্টার দেখতে গিয়েছিলেন!”
সীমান্ত ঘেঁষা এই এলাকায় বেশ কিছু মুসলিম ভোটও আছে। তবে এ বার তাঁদের একটা অংশ তৃণমূলকে ছেড়ে কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকছেন বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। করিমপুর ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি তরুণ সাহার দাবি, “জুম্মাবারের দুপুরে নমাজের কারণে অনেকে আগে আসতে না পারলেও সভা শুরুর সময়ে কর্মী-সমর্থকেরা সবাই চলে এসেছিলেন।”
বারবার চেষ্টা করা হলেও মহুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে জেলা তৃণমূল সভাপতির ব্যাখ্যা, শুধু করিমপুর বিধানসভা এলাকার সভা ছিল। সেই তুলনায় যথেষ্ট ভিড় হয়েছে। তাঁর চ্যালেঞ্জ, ‘‘বিজেপি, সিপিএম বা কংগ্রেস আগে এটাই করে দেখাক!’’