দল বদলের প্রার্থী তালিকায় এগিয়ে বিজেপি

লোকসভা ভোটে রাজ্যে সবক’টি দলই প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে।

Advertisement

স্যমন্তক ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৪১
Share:

ছবি: পিটিআই।

হয়তো মুখ ফসকে, তবু অমোঘ কথাটা বলে ফেলেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। রাজ্য নেতাদের সঙ্গে প্রার্থী বাছাইয়ের বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘নীতি, আদর্শের কথা ছাড়ুন, ভোটে যাঁরা জিততে পারবেন, তাঁদেরই প্রার্থী করতে হবে।’’ দেশে তো বটেই, রাজ্যেও কম বেশি সেই একই নিয়ম খেটে যায় প্রায় সব দলের ক্ষেত্রেই। ফলে ভোটের বাজারে দর বুঝে দলও বদলেছেন নেতারা। টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রেও তাঁদেরই রমরমা। বামেদের বাদ দিলে প্রায় সব দলেই আছেন দল বদলি প্রার্থীরা।

Advertisement

লোকসভা ভোটে রাজ্যে সবক’টি দলই প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে। হিসেব বলছে, ভোটের মুখে সব চেয়ে বেশি দল বদল ঘটেছে বিজেপিতে। তাঁদের প্রার্থী তালিকাতেও তারই ছায়া। ৪২ টি আসনে দল বদল করা নেতার সংখ্যা ৯। এর মধ্যে মুর্শিদাবাদ থেকে দলের টিকিট পেয়েছেন হুমায়ুন কবীর। কংগ্রেস, তৃণমূল ঘুরে বিজেপি তাঁর তিন নম্বর দল। যদিও টিকিটের জন্য বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কথা কখনওই স্বীকার করেননি তিনি। যেমন বরাবর বামপন্থী বলে পরিচিত খগেন মুর্মু স্বীকার করতে রাজি নন, গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়ার পিছনে টিকিটের ‘লোভ’ কাজ করেছে।

তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার মুহূর্তে অর্জুন সিংহের মতো ‘দাপুটে’ নেতা অবশ্য কার্যত স্বীকার করে নিয়েছিলেন, ব্যারাকপুরে টিকিট না পাওয়ার জন্যই তিনি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। পরে দিল্লিতে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সময় অবশ্য তিনি দাবি করেন, পুলওয়ামা পরবর্তী সময়ে তৃণমূলের অবস্থান পছন্দ হয়নি বলেই তাঁর দল বদল। ফোনে অবশ্য তিনি জানিয়েছেন, তৃণমূলে তাঁর মতো নেতার আর কোনও ‘সম্মান’ ছিল না। তাই দল বদলাতে বাধ্য হয়েছেন। এর সঙ্গে টিকিটের সম্পর্ক নেই। তৃণমূলের লোকসভা প্রার্থী তালিকায় দল বদল করা নেতার সংখ্যা ৫।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

‘অধীর গড়’ বহরমপুর থেকে দলের টিকিট পেয়েছেন কংগ্রেস ছেড়ে আসা অপূর্ব সরকার ওরফে ডেভিড। একদা প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর ‘ডান হাত’ বলে পরিচিত ডেভিড সরাসরি স্বীকার করেছেন, তাঁর বদলের অন্যতম কারণ, ব্যক্তিগত লড়াই। অধীরবাবুকে হারানোই যে তাঁর লক্ষ্য, মেনে নিয়েছেন তিনি।

গনি খান পরিবারের কংগ্রেস সাংসদ মৌসম নূরকে যে ভাবে তৃণমূলে নিয়ে আসা হয়েছে, তা নিয়েও রাজনৈতিক মহলে বহু আলোচনা হয়েছে। অনেকরই বক্তব্য, ‘চাপ’ সৃষ্টি করেই তৃণমূলে যোগ দিতে ‘বাধ্য’ করা হয়েছে মৌসমকে। যদিও প্রকাশ্যে মৌসম কখনওই তা মানতে চাননি।

আবার একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ বাম নেতা লক্ষ্মণ শেঠ পরিবর্তনের পরে বিজেপি ঘুরে যোগ দিয়েছেন কংগ্রেসে। টিকিটও পেয়েছেন।

একদিকে চাপ, অন্য দিকে লোভ— ভোটের রাজনীতির এই দুই চরিত্র নিয়ে কম আলোচনা করছেন না রাজনৈতিক পণ্ডিতেরা। মামলার ভয়, টিকিট কেনা বেচা— এ সব উড়ছে ভোটের হাওয়ায়। যা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ কম বেশি চলছে বিভিন্ন দলে। উঠছে রাজনীতির নীতি-আদর্শের প্রশ্নও।

তবু এই বাজারে সেই হাওয়া থেকে বামেরা কী ভাবে গা বাঁচাতে পারল, আলোচনা হচ্ছে তা নিয়েও। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের টিপ্পনী— রাজ্যে বামেদের যা অবস্থা, তাতে হয়তো দল বদলের কুশিলবেরা ও মুখো হননি। তবে বাম নেতারা সে তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেছেন, রাজ্য রাজনীতিতে যা-ই ঘটুক, বামেরা এখনও ‘ঘোলা জলে মাছ ধরা’র নীতিতে বিশ্বাসী নন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement