বুথে গুলির দাগ। নিজস্ব চিত্র
মোবাইল ফোন নিয়ে বুথে ঢোকা নিয়ে কয়েক জন তরুণ ভোটারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিবাদ পৌঁছল বুথের মধ্যে গুলি চালানো পর্যন্ত! গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে সিআরপি জওয়ানের বিরুদ্ধে।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকল দুবরাজপুরের পদুমা গ্রাম পঞ্চায়েতের কানদিঘি ২৫৯ নম্বর বুথ। ঘটনার জেরে ঘণ্টা দেড়েক ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। পরে জেলা নির্বাচনী দফতর ও বিশাল পুলিশ বাহিনীর মধ্যস্থতায় ফের ভোট শুরু হয়।
কেন বুথের মধ্যে গুলি চলল, তা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর তৈরি হয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এ দিন স্বরূপনগরের এক জনসভায় তিনি বলেন, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। সেখানে কী ভাবে সিআরপিএফ বুথে ভিতরে গুলি চালাল? এটা ওদের কাজ নয়। আমি সব সময়েই গুলি চালানোর বিরুদ্ধে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী বুথে ঢুকে বিজেপিকে ভোট দিতে বলছে। এটা কি ওদের কাজ?’’ বীরভূমের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়েরও অভিযোগ, ‘‘বিজেপির এজেন্টের মতো ব্যবহার করেছে করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।’’
এই অভিযোগ মানেননি বাহিনীর এক আধিকারিক। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বুথ রক্ষা আমাদের দায়িত্ব। সেটা আমরা করেছি। যে যা কিছু বলতেই পারেন।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় এবং সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদারও দাবি, ‘‘তৃণমূলের উষ্কানিতে এমন পরিস্থিতি নিশ্চয় তৈরি হয়েছিল, যা বাহিনীকে এই পদক্ষেপ করতে বাধ্য করেছে।’’ জেলা নির্বাচনী আধিকারিক তথা জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘পদুমার ওই বুথে গুলি চালানো সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট নির্বাচন কমিশন চেয়েছে। আমরা তদন্ত করে সেই রিপোর্ট পাঠিয়েছি।’’
ঠিক কী ঘটেছিল?
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, পদুমা পঞ্চায়েতের তিনটি গ্রাম কানদিঘি, পলসাড়া ও ঘোড়াপাড়া নিয়ে একটি বুথ। সেটা কানদিঘিতে। মোট ভোটার ৭২৫। ভোট পর্বে নিরাপত্তায় ছিলেন সিআরপি জওয়ানেরা। গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, সকাল সাতটায় ভোট শুরু হওয়ার পর থেকে দায়িত্ব থাকা জওয়ানদের এক জন খুব খারাপ ব্যবহার করছিলেন। মোবাইল নিয়ে বুথে যাওয়ার কড়াকড়ি ছিলই। তিনি ক্রমাগত হেনস্থা করছিলেন গ্রামের তরুণ ভোটারদের। গ্রামের তিন যুবক ওই জওয়ানের কাছে তিনটি মোবাইল রেখে ভোট দিতে গিয়েছিলেন। পরে বেরিয়ে এসে তাঁর (জওয়ানের) কাছে মোবাইল ফেরত চাইলে সেগুলি মাটিতে ছুড়ে দেন বলে অভিযোগ। এর পরেই ক্ষোভ ছড়ায়। বেশ কিছু গ্রামবাসী প্রতিবাদ করলে উত্তেজিত হয়ে বুথের মধ্যে ঢুকে শূন্যে গুলি চালিয়ে দেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওই জওয়ান। বুথের ছাদে ফুটো হয়ে যায়। ওই শব্দে কানে তালা লেগে যায় এক জন পুরুষ ও মহিলা ভোটারের। তাঁদের সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
যদিও গ্রামের বাসিন্দাদের দাবির সঙ্গে সহমত নয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাদের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বহুবার বুথের মধ্যে ফোন নিয়ে যেতে বারণ করা হয়েছে গ্রামের কিছু যুবককে। কিন্তু ওঁরা কথা শুনতে চাইছিলেন না। এই নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এর পর দলবল জুটিয়ে আমাদের উপর ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে কিছু লোক। উদ্দেশ্য ছিল, ইভিএম হাতিয়ে নেওয়া। বুথে ঢুকে দরজা লাগিয়ে রোখার চেষ্টা করলে দরজাও ভাঙার চেষ্টা হয়। তখনই পরিস্থিতি সামলাতে শূন্যে গুলি চালানো হয়েছে।’’
খবর পেয়ে ছুটে যায় দুবরাজপুর থানার পুলিশ। পৌঁছে যান কেন্দ্রীয় বাহিনীর আরও জওয়ান ও প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। চলে আসেন শতাব্দী রায়। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর তো বুথে ঢোকারই কথা নয় সেখানে বুথের মধ্যে গুলি চলল কী করে? কারও যদি কিছু হয়ে যেত!’’
অনেকটা পদুমার মতোই অভিযোগ উঠেছে পাড়ুই থানার তালিবপুরে। তালিবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে দুটি বুথে দায়িত্বে ছিলেন ই/১৬৯ বাহিনীর জওয়ানরা। অভিযোগ, এক যুবক একাধিক বার ভোট দিতে এসে ধরা পড়ে যান জওয়ানদের হাতে। বাধা পেয়ে ওই যুবক লোকজন জুটিয়ে এলে বুথে হামলা চালান। বুথের দরজা ভাঙার চেষ্টা হলে শূন্য গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে এক জওয়ানের বিরুদ্ধে। সিউড়ি ২ ব্লকের তৃণমূল ব্লক সভাপতি নরুল ইসলামের দাবি, ‘‘বারবার ভোট দেওয়া নয়, জনতা খেপে গিয়েছিল বিজেপির এজেন্ট নেই কেন এই প্রশ্ন শুনে। কারণ এটা জানা জওয়ানদের এক্তিয়ার ভুক্ত নয়। লোকজন জড়ো হয়েছিল। প্রথমে লাঠি চালায় বাহিনী। বেশ কয়েক জন জখম হন। পরে গুলি চালায়।’’ কিন্তু ওখানে আদৌ গুলি চলেছে কিনা তা নিয়ে কোনও প্রশাসনিক স্তরে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।