Platelet-Rich Plasma Therapy

যৌবন ফেরাবে প্লাজ়মা থেরাপি?

অ্যান্টি-এজিং চিকিৎসায় খুবই জনপ্রিয় পিআরপি বা প্লেটলেট রিচ প্লাজ়মা থেরাপি। সহজ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন এই পদ্ধতিতে সুফল মেলে কতটা?

Advertisement

চিরশ্রী মজুমদার 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৬
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

বয়সের চাকাটা থামিয়ে তারুণ্য ধরে রাখতে কে না চান? কিন্তু, সময় এগোলে তার ছাপ পড়ে যায় আমাদের ত্বকের ভাঁজে, মুখের গড়নে। ইদানীং অনেক চিকিৎসা পদ্ধতি বেরিয়েছে, যেগুলি ত্বকের এই পরিবর্তন রুখতে বা শ্লথ করতে সাহায্য করতে পারে। যেমন অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্টে প্লাজ়মা থেরাপির প্রয়োগ। এই পদ্ধতিতে কি সত্যিই বলিরেখা কমিয়ে ত্বককে যৌবনোজ্জ্বল ও টানটান করা যায়? বিষয়টি বিশদে বললেন ত্বক বিশেষজ্ঞ ও কসমেটিক সার্জন মনোজ খন্না।

Advertisement

ব্যাখ্যা ও উপকারিতা

অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্টের কয়েকটি লেভেল (ধাপে) আছে। সবচেয়ে নীচের ধাপে রয়েছে সহজতম পদ্ধতি— ক্রিম লাগানো। তার পরের ধাপে পিলিং করা যায়। এতে উপরের ত্বকের স্তরটা তুলে দেওয়া হয়। নতুন যে ত্বকের স্তর দেখা দিল, তা তরুণ ও পরিষ্কার হবে। এই পদ্ধতিটি করতে মিনিট দশেক লাগবে। এর পরের ধাপেই রয়েছে প্লাজ়মা রিচ থেরাপি বা পিআরপি। এ ক্ষেত্রে ত্বকে ইঞ্জেকশন দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করা যায়। তার পরের ধাপে লেজ়ার দিয়ে ত্বককে উন্নত, টানটান, পরিষ্কার করে বলিরেখা কমানো যায়। পরের ধাপে আছে আরও শক্তিশালী কার্বন ডাই-অক্সাইড লেজ়ার। এর পরে আসে হাইফু (হাই ইনটেনসিটি ফ্রিকোয়েন্সি আলট্রাসাউন্ড), তারও পরের ধাপে করা হয় অস্ত্রোপচার। অর্থাৎ এই পিআরপি খুব অপ্রচলিত ট্রিটমেন্ট নয়।

Advertisement

ডা. খন্না বুঝিয়ে বললেন, “পিআরপি-র ক্ষেত্রে রোগীর নিজের রক্ত নিয়ে তা ‘সেন্ট্রিফিউজ়’ করা হয়। এতে রক্তকোষ ও রক্তরস (প্লাজ়‌মা) আলাদা হয়ে যায়। প্লাজ়মার মধ্যে যে পরতটা সকলের উপরে থাকে, সেটাকে ‘বাফি কোট’ বলা হয়। এটি প্লেটলেটে (অণুচক্রিকা) পরিপূর্ণ বা ‘প্লেটলেট রিচ’। এই পরতে অনেক ‘গ্রোথ ফ্যাক্টর’ থাকে। আমাদের শরীরের যে কোনও ক্ষত নিরাময় বা স্বাস্থ্যোন্নতির জন্য এই গ্রোথ ফ্যাক্টর প্রয়োজন হয়। এই বাফি কোট নিয়ে শরীরের যে কোনও জায়গায় ইঞ্জেক্ট করে দিলে সেই অংশের টিসুর স্বাস্থ্য ভাল হয়ে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত হয়। এমনকি দেখতেও ভাল লাগে। হাঁটুতে বা গোড়ালিতে ব্যথা, কোনও ঘা শুকোচ্ছে না, চোট রয়েছে— এ সব ক্ষেত্রেই পিআরপি দিলে উপকার পাওয়া যায়। এই ট্রিটমেন্ট করালে ত্বক পুনর্জীবিত হয়, নবযৌবন লাভ করে। খেলার মাঠেও পিআরপি ট্রিটমেন্ট চলে। যেমন, সহস্রাব্দের গোড়ায় ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরে, প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস-এর কারণে জ়াহির খানের পায়ে খুব ব্যথা হচ্ছিল। সে ক্ষেত্রেও চিকিৎসায় পিআরপি ব্যবহৃত হয়েছিল।”

ত্বকে পিআরপি ইঞ্জেক্ট করলে নতুন কোলাজেন টিসু, নতুন ইলাস্টিক টিসু তৈরি হয়। ত্বক টানটান হয় ও ঔজ্জ্বল্য ফিরে আসে। মেচেতা থাকলে তাও কমে যায়। মেয়েদের শরীরের ঊর্ধ্বভাগ শিথিল হয়ে গেলেও পিআরপি ট্রিটমেন্টে ভাল ফল পাওয়া যায়। চুলেও পিআরপি দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে চুলের স্বাস্থ্য ভাল হবে, চুল মোটা হবে, বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে। তবে এতে নতুন চুল গজাবে না।”

চিকিৎসা পদ্ধতি ও সতর্কতা

রোগীকে লোকাল অ্যানাস্থেশিয়া দেওয়া হয়। খুব পাতলা সুচের সাহায্যে (২৫ জি, ২৬ জি, ৩০ জি) চামড়া ফুটো করে করে পুরো মুখের ত্বকে পিআরপি দেওয়া হয়। চার-ছ’সপ্তাহ পর পর তিন-চার বার করলে ত্বক তরুণ হয়ে ওঠে। প্রতিটি সেশনের খরচ ছয় থেকে নয় হাজার টাকা। ছ’টা সেশনের প্যাকেজের খরচ ৩০-৪০ হাজার টাকা। তবে ভাল জায়গা থেকেই পিআরপি করানো উচিত। তা হলে পদ্ধতিগুলো ঠিকঠাক অনুসরণ করা হয়েছে বলে নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন। যেমন রক্ত সেন্ট্রিফিউজ় করতে হয় ২৩ মিনিট ধরে। সেটা এ দিক ও দিক হয়ে গেলে ওই রক্ত আর কোনও কাজে লাগবে না। কোন গতিতে ইঞ্জেক্ট করতে হবে, সেটারও একটা মাপ আছে। এই সব ধাপগুলির একটিতে একটুও ভুল হলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাবেন না।

ডা. খন্না বললেন, পিআরপি করাতে আধ ঘণ্টা থেকে ৪৫ মিনিট লাগে। বাড়ি ফিরে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো সেরাম, অ্যান্টি-এজিং ক্রিম ব্যবহার করবেন। এক বছর পরে বুস্টার ডোজ় নেওয়া যায়। এই প্রক্রিয়ায় কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে, এই চিকিৎসার পরে পেনকিলার নেওয়া যায় না। কারণ এগুলি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি (প্রদাহরোধক) ড্রাগ। এই ট্রিটমেন্টে প্রদাহই প্রয়োজন। তাই, এই ধরনের ওষুধ খেলে চিকিৎসার ফল ঠিক ভাবে মিলবে না। তবে, প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে, তার কারণ এটির ‘অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এফেক্ট’ নেই।

পিআরপি-ই কি ভ্যাম্পায়ার ফেশিয়াল?

ভ্যাম্পায়ার ফেশিয়াল নিয়ে ইদানীং খুব শোরগোল চলছে। অনেকের দাবি পিআরপি-ই ভ্যাম্পায়ার ফেশিয়াল। এতে নাকি তারুণ্য বহু দিন ধরে রাখা যায়। এই কথার বৈজ্ঞানিক সত্যতা নেই বলে জানালেন ডা. খন্না। তাঁর কথায়, নন-সার্জিক্যাল ভ্যাম্পায়ার ফেস লিফট বিষয়টি আলাদা। এ ক্ষেত্রে কয়েকটা ইঞ্জেকশন, বোটক্স, ফিলার দিয়ে ত্বক টানটান করে দেওয়া হয়। কপালের বলিরেখা কমিয়ে দেওয়া হয়। ভ্রুটাকেও খানিক উঁচু করে দেওয়া হয় যেটা সিনেমা-সাহিত্যে ভ্যাম্পায়ারের বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায়।

পিআরপি-র মাধ্যমে ত্বকের তারুণ্য ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। সেরা ফল চাইলে অস্ত্রোপচারের কথা ভাবতে পারেন। তবে, তারুণ্য বজায় রাখতে যে ট্রিটমেন্টই করান, সব দিক খতিয়ে দেখে, নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হওয়াই নিরাপদ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement