রাস্তা কবে হবে? প্রতিবন্ধী ভাতা কই?

প্রচারে প্রশ্নের মুখে মাকসুদা

‘‘ভোট চাইতে এসেছেন ভাল কথা। আমি সিপিএমেরই সমর্থক। এই এলাকা থেকে নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যও সিপিএমের। কিন্তু বাড়ির সামনের এই রাস্তাটা দীর্ঘদিন ধরে ইট বিছানোই রয়েছে। কবে হবে ঢালাই রাস্তা?’’— প্রশ্নকর্তা উলুবেড়িয়ার রঘুদেবপুর পঞ্চায়েতের মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা, চা-দোকানি আনোয়ার মোল্লা।  

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৯ ০৩:১৬
Share:

কাছাকাছি: মহিলাদের সঙ্গে কথা বলছেন মাকসুদা। ছবি: সুব্রত জানা

প্রচার পর্বের শুরুতেই থমকাতে হল মাকসুদা বিবিকে!

Advertisement

‘‘ভোট চাইতে এসেছেন ভাল কথা। আমি সিপিএমেরই সমর্থক। এই এলাকা থেকে নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যও সিপিএমের। কিন্তু বাড়ির সামনের এই রাস্তাটা দীর্ঘদিন ধরে ইট বিছানোই রয়েছে। কবে হবে ঢালাই রাস্তা?’’— প্রশ্নকর্তা উলুবেড়িয়ার রঘুদেবপুর পঞ্চায়েতের মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা, চা-দোকানি আনোয়ার মোল্লা।

বুধবার এই মোল্লাপাড়া থেকেই প্রচার শুরু করেন উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী মাকসুদা। কিন্তু শুরুতেই উন্নয়ন এবং পরিষেবা নিয়ে বারকয়েক নিজেরই দলের কর্মী-সমর্থকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হল তাঁকে। আনোয়ারের চায়ের দোকান থেকে কাছ থেকে একটু এগোতেই মাকসুদাকে সামনে পেয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন জয়নারা বিবি নামে এক মহিলা। তাঁর মেয়ে ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। জয়নারার অভিযোগ, ‘‘প্রতিবন্ধী-ভাতা পাচ্ছি না। কী করে মেয়েকে মানুষ করব?’’

Advertisement

পঞ্চায়েতটি তৃণমূলের দখলে থাকলেও মোল্লাপাড়া সিপিএম প্রভাবিত বলেই পরিচিত। ফলে, নিজেদেরই এলাকা থেকে যে ক্ষোভের কথা শুনতে হবে, তা তাঁরা ভাবতে পারেননি বলে ঠারেঠোরে স্বীকার করেছেন মাকসুদার সঙ্গে থাকা সিপিএম নেতাকর্মীরা। দিনের শেষে মাকসুদা অবশ্য বলেন, ‘‘মানুষের ক্ষোভ আছে। তবে সাড়াও পাচ্ছি প্রচুর।’’

এ দিন সকাল ১০টার সময় প্রচার শুরু হয়। মাকসুদার সঙ্গে ছিলেন উলুবেড়িয়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী সাবিরুদ্দিন মোল্লাও। প্রচারে ভিড়ও ভাল ছিল। কিন্তু মোল্লাপাড়ায় কিছুটা এগিয়ে আনোয়ারের কাছে গিয়ে মাকসুদা নমস্কার জানাতেই ধেয়ে এল প্রশ্ন। দলীয় কর্মীরা

বলে ওঠেন, ‘‘দাবি এমনিতে পূরণ হয় না। ছিনিয়ে আনতে হয়। দেখুন, আমাদের দল এমন প্রার্থী করেছে, যিনি সংসদ থেকে কাজ ছিনিয়ে আনবেন।’’ মাকসুদা ততক্ষণে এগিয়ে গিয়েছেন। যেতে যেতে শুধু বলেন, ‘‘ওঁর যদি কোনও ক্ষোভ থাকে, নিশ্চয় বলবেন। বলার অধিকার সকলের আছে।’’

জয়নারার প্রশ্নের উত্তর অবশ্য সাবিরুদ্দিন দিয়েছেন। তিনি জয়নারাকে বলেন, ‘‘নতুন আইনে মাসে ১০০০ টাকা করে প্রতিবন্ধী-ভাতা পাওয়ার কথা। আপনি নিশ্চয় ফর্ম পূরণ করেননি। নির্বাচনের পরে ফর্ম পূরণ করে দেবেন আমাদের দলের কর্মীরা।’’ এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য হালিমা বেগমের স্বামী শেখ ইসরাইলের দাবি, মোল্লাপাড়ায় ঢালাই রাস্তার প্রকল্প অনুমোদিত হবে। জয়নারার মেয়ে যাতে প্রতিবন্ধী-ভাতা পায়, সে জন্য তিনিই ফর্ম পূরণ করে দিয়েছেন।

মোল্লাপাড়া ছাড়িয়ে পদযাত্রা ঘোষালচকে ঢোকার পথে ফের থমকাল। লোকসভার প্রার্থীকে কাছে পেয়ে এক প্রৌঢ় বলে ফেললেন, ‘‘আজন্ম সিপিএম করি। কিন্তু দলের নিচুতলার কর্মীরা মানুষের পাশে থাকেন না। সে জ‌ন্য ভোট কমছে সিপিএমের।’’ মন দিয়ে তাঁর কথা শুনলেন প্রার্থী।

মাকসুদা একসময়ে হাওড়া বিজয়কৃষ্ণ গার্লস কলেজের শিক্ষিকা ছিলেন। প্রচারের আগে জনাকয়েক প্রাক্তন ছাত্রী তাঁকে চিনতে পারেন। তাঁরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিচ্ছেন। শিক্ষিকাকে সামনে পেয়ে পরীক্ষার ‘টিপস’ নিতে তাঁরা ছাড়লেন না। হাসিমুখে তাঁদের ‘টিপস’ দিলেন মাকসুদাও।

প্রথম দিনের প্রচারে ‘কাঁটা’র মধ্যে ফুলের ‘সুবাস’ও পেয়েছেন সিপিএম প্রার্থী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement