অন্নপ্রাশনের শিশুর খোঁজ করছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর আধিকারিকরা।
বাচ্চার অন্নপ্রাশন। তাই বাড়িতে অতিথি অভ্যাগতদের ভিড়। চলছে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন। আপাত ভাবে সন্দেহ করার কোনও কারণই ছিল না।
কিন্তু নিঁখুত পরিকল্পনায় বাধ সাধল কেন্দ্রীয় বাহিনীর সহকারি কমান্ডান্টের একটা আপাত নিরীহ প্রশ্ন। তিনি নেহাৎই সৌজন্যের বশে গৃহস্বামীকে বলেন,‘‘যার অন্নপ্রাশন সেই বাচ্চাটি কোথায়?”
কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওই আধিকারিকের কথায় শিশুটিকে আনতে বাড়ির ভিতর গেলেন এক মহিলা। কিন্তু সময় কেটে যায়, বাচ্চা আসে না।ফেরেন না সেই মহিলাও। আর সেই সময়েই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের চোখে পড়ে, বাড়ির পিছনের বাগান দিয়ে গুটি গুটি পায়ে সরে পড়বার চেষ্টা করছেন কয়েক জন যুবক। সন্দেহ হওয়ায় ঘরের ভিতরে ঢুকতেই প্রকাশ্যে আসে ‘অন্নপ্রাশন’-এর আসল চেহারা।
এ রকমই রান্নার আয়োজন করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: তলায় তলায় চলছে ইভিএম কারচুপির ষড়যন্ত্র! এগ্জিট পোলকে ‘গসিপ’ বলে ওড়ালেন মমতা
ঘটনাটি বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের রাজারহাট-নিউটাউনের কদমপুকুর এলাকার ঘটনা। পুলিশ সূত্রে খবর, সকাল গড়িয়ে দুপুর হতেই বার বার বিরোধীরা অভিযোগ জানাচ্ছিলেন বহিরাগতদের আনাগোনার বিষয়ে। সে সব অভিযোগ পাওয়ার পরেই ওই এলাকায় স্থানীয় থানার আধিকারিকদের নিয়ে টহল দেওয়া শুরু করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সেক্টর মোবাইল এবং কুইক রেসপন্স টিম। তারা কদমপুকুর উত্তর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথেও যায়। সেখানে তারা কথা বলে মোতায়েন থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে। তারপরেই টহল দিতে শুরু করে এলাকায়। বুথ থেকে কয়েকশো মিটার দূরে নির্মল নস্করের বাড়ি। সেখানেই তাঁরা দেখতে পান এলাহি খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত। নেহাত কৌতূহল থেকেই তাঁরা প্রশ্ন করেন।
পুলিশ আধিকারিকরা বলেন, ‘‘যার অন্নপ্রাশন সেই শিশুকে আনতে বলতেই বেশ থতমত খেয়ে যান বাড়ির লোকজন। যখন আনতে পারেন না তখন অন্য গল্প শুরু করেন।” কেউ বলেন, পাড়ার সবাই মিলে চাঁদা তুলে খাওয়াদাওয়া করছেন। আবার অন্য একজনকে প্রশ্ন করতেই তিনি চাঁদা দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। তাতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, বহিরাগতদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে ওই বাড়িতে এবং সে কারণেই খাওয়াদাওয়ার আয়োজন।’’
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, এরপরেই সক্রিয় হয়ে ওঠেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। তাঁরা বাড়ির ভিতরে থাকা লোকজনকে বেরোতে বলেন। তারপরেই শুরু হয়ে যায় হুড়োহুড়ি। পিছনের বাগান দিয়ে দিগ্বিদিক শূন্য হয়ে ছুটতে দেখা যায় বেশ কিছু যুবককে। তাঁদের তাড়া করে পুলিশ-আধাসেনা।
কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দেখে এ ভাবেই বাগান দিয়ে দৌড় বহিরাগতদের।
আরও পড়ুন: রণক্ষেত্র কাঁকিনাড়া, রিপোর্ট তলব কমিশনের, বোমা পড়ল কলকাতাতেও
বিজেপি-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, ওই বাড়িতে ঘাঁটি গেড়ে বসে ছিলেন তৃণমূল আশ্রিত বহিরাগতরা। তাঁরাই এলাকায় ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছিলেন। ভোট দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছিল। যদিও তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন যে, কেন্দ্রীয় বাহিনী তাঁর কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে হেনস্থা করছে এবং তাঁদের উপর অত্যাতার করছে। তিনি ঘটনার প্রতিবাদে সোজা চলে আসেন নিউটাউন থানায়। সেখানে প্রায় আধ ঘণ্টা ধরনা দেন। একটা সময়ে দেখা যায়, থানার আইসি অতনু বিশ্বাসকে তিনি রীতিমতো আঙুল তুলে ধমকাচ্ছেন। ওই পুলিশ অফিসারকে রীতিমতো হুমকি দিতেও শোনা যায়। যদিও স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাননি। সব্যসাচী এ দিন বিকেলে ভোট দিয়ে বলেন,‘‘আমি আমাদের এলাকায় যা ভোট দেখলাম এবং সংবাদমাধ্যম থেকে যে খবর পেলাম তাতে মনে হল ভোট বেশ শান্তিপূর্ণ হয়েছে। সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পেরেছেন। সামান্য কিছু ছোটখাটো ঘটনা ঘটেছে, যা উল্লেখ করার মতো নয়।”
ছবি: ভিডিয়ো গ্র্যাব।