নির্বাচনী জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
ভোটের মরসুমে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী-সহ সকলের গাড়িই তল্লাশি করার দাবি তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিজেপি নেতারা ভোটারদের প্রভাবিত করতে টাকার বাক্স নিয়ে ঘুরছেন বলে বেশ কয়েক দিন ধরেই অভিযোগ করছেন মমতা। দিন দুয়েক আগেই ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষের গাড়ি থেকে লক্ষাধিক টাকা পুলিশ বাজেয়াপ্ত করে। তার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচন সফর চলাকালীন তাঁর বিমান থেকে একটি কালো ট্রাঙ্ক নামানোর ঘটনা নিয়ে বিতর্ক বাধে। নির্বাচন কমিশনের এক অফিসার কেন ওই ট্রাঙ্ক ‘পরীক্ষা’ করেছেন, তার জন্য তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়।
এই সব ঘটনার প্রেক্ষিতে তৃণমূল নেত্রী বিজেপির বিরুদ্ধে টাকা ছড়িয়ে ভোট কেনার অভিযোগ তুলছেন। দলের কর্মীদের বলছেন, রাতপাহারা দিতে। শনিবার ষষ্ঠ দফা ভোটের আগের দিন হাসনাবাদ, বসিরহাটের প্রচারসভায় মমতা বলেন, ‘‘প্রশাসনকে বলেছি, আমার গাড়ি, আমার হেলিকপ্টারও পরীক্ষা করুন। প্রধানমন্ত্রী এবং দিল্লি থেকে আসা যে কোনও নেতার গাড়ি, হেলিকপ্টারও তল্লাশি করা হোক। কাউকে ছাড়বেন না।’’ এমনকী, ভিন্ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের গাড়িও যেন তল্লাশি-ছুট না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতেও অনুরোধ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
পুলিশি নিরাপত্তায় থাকা নেতা-মন্ত্রীদের গাড়িতে হিসেব বহির্ভূত টাকা থাকলেও তা তল্লাশি না হওয়ায় পুলিশের নজর এড়িয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওয়াই, জেড নিরাপত্তায় থাকা গাড়িতে করে টাকা যাচ্ছে। একটাও গাড়ি বাদ দেবেন না।’’ এই টাকা ধরার কাজে রাজ্যের পুলিশের পাশাপাশি সীমান্তরক্ষী বাহিনীকেও ‘সক্রিয়’ হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন মমতা। ভোটারদের কাছে তাঁর পরামর্শ, ‘‘সীমান্তগুলো খেয়াল রাখবেন। সীমান্ত দিয়েই টাকা ঢোকানো হচ্ছে।’’
একই সঙ্গে বহিরাগতদের এনে এলাকার ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও এ দিন অভিযোগের সুর চড়িয়েছেন মমতা। দিন কয়েক আগে কাঁথিতে উত্তরপ্রদেশ থেকে ঢোকা ১০ জন বহিরাগতকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। ভোটের মধ্যে কী ভাবে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করেছেন তিনি। বিএসএফ-এর কাছে তাঁর অনুরোধ, ‘‘আপনারা বিজেপিকে প্রশ্রয় দেবেন না। আপনারা আপনাদের কাজ করুন। পাচার সামলান। বিজেপিকে সীমান্ত দিয়ে ঢুকতে দেবেন না।’’ একই সঙ্গে রাজ্যের ভোটারদেরও সতর্ক করে মমতার পরামর্শ, ‘‘হাড়োয়া, হালিশহর, বনগাঁ, বসিরহাটের মতো এলাকায় বাইরের লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে খবর আছে। অজানা, অচেনা লোক দেখলে সাবধান থাকবেন। অচেনা লোকেরা টাকা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরা কিন্তু অজান্তেই আপনাদের ক্ষতি করে দিয়ে চলে যাবে।’’
জবাবে বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক রাহুল সিংহর প্রতিক্রিয়া, ‘‘টাকা নিয়ে কারবার তো তৃণমূলেরই। বিজেপির নয়। টাকা ছড়িয়ে ভোট লুঠ করা ছাড়া তৃণমূলের হাতে আর অস্ত্র নেই। সে জন্যই মুখ্যমন্ত্রী সে দিক থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে এই ধরনের বিভ্রান্তিমূলক কথা বলছেন।’’