Coronavirus lockdown

মদের দোকান খুলতেই হুলস্থুল, দিল্লিতে লাঠি, ঝাঁপ পড়ল কলকাতায়

সোমবার সকাল থেকে হাজারও মানুষের ভিড় শহরের বিভিন্ন মদের দোকানের সামনে। সেই ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেল পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২০ ১৩:২০
Share:

কলকাতায় মদের দোকানের বাইরে সুরাপ্রেমীদের ভিড়। নিজস্ব চিত্র।

রাজ্য সরকার এখনও কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি। তবে মদের দোকান খোলার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার ছাড় দিয়েছে সব জোনেই। তার জেরেই সোমবার সকাল থেকে হাজারও মানুষের ভিড় শহরের বিভিন্ন মদের দোকানের সামনে। সেই ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেল পুলিশ। দেশের বিভিন্ন রাজ্যেও দেখা গেল একই রকম চিত্র।

Advertisement

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা। কালীঘাট দমকলের পাশে মদের দোকান। দোকানের শাটার তখনও খোলেনি, তার মধ্যেই দোকানের সামনে ফুটপাতে ৫০০ মানুষের লম্বা লাইন। প্রত্যেকের হাতে বিভিন্ন মাপের থলে। কয়েক মিনিট পরেই দোকানের তালা খুলে শাটার অর্ধেক তুললেন দোকানের এক কর্মী। সঙ্গে সঙ্গে ৫০০-৬০০ মানুষের লাইনটা এগিয়ে গেল। এক জনের ঘাড়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন অন্যজন। সবাই চেষ্টা করছেন দোকানের কাউন্টারের কাছে আগে পৌঁছতে। আর তা নিয়েই শুরু হয় ঠেলাঠেলি ও বচসা। সেই ছবি দেখলে কেউ বলবে না, দেশ জুড়ে লকডাউন চলছে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে পুলিশ আসে। ওই ভিড় সামাল দিতে নাজেহাল হন তাঁরাও। রীতিমতো লাঠি নিয়ে পুলিশ তাড়া করে উৎসাহী সুরাপায়ীদের। তাতেও ভাটা পড়েনি উৎসাহে। একদিকে তাড়া করলে সুরাপায়ীরা অন্যদিক দিয়ে তাঁরা এসে হাজির হচ্ছেন দোকানের সামনে। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি বেগতিক দেখে, পুলিশের নির্দেশে দোকান বন্ধ করে দেন মালিক। সোমবার সকাল থেকে একই ছবি দেখা গেল ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজারের কাছে, মহিম হালদার স্ট্রিটের একটি মদের দোকানের সামনে। সব মিলিয়ে গোটা কলকাতার ছবিটাও একই রকম।

কেন্দ্রীয় সরকার মদের দোকান খোলার ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দেওয়ার পর থেকেই এ রাজ্যেও শুরু হয়ে যায় জল্পনা। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা অনুসারে কনটেনমেন্ট এলাকা ছাড়া সব জায়গায় খোলা যাবে মদের দোকান। এর পর রাজ্যেও খুলতে চলেছে মদের দোকান— এমন গুঞ্জন শুরু হয় প্রশাসনেরও বিভিন্ন স্তরে। শনিবার বিকালেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় একটি তালিকা। যেখানে রয়েছে কলকাতার ২২টি মদের দোকানের নাম। যেগুলো সোমবার থেকে খোলা হবে বলে উল্লেখ ছিল ভাইরাল হওয়া ওই মেসেজে। যদিও আবগারি কর্তাদের দাবি, এখনও রাজ্য সরকার কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি। তবে তাঁরা স্বীকার করেন কলকাতার কনটেনমেন্ট জোন বাদ দিয়ে ১৪টি মদের দোকানের তালিকা তাঁরা তৈরি করেছেন। যদি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়,তাই সেই দোকানের মালিকদের বলা হয়েছে দোকান খোলার জন্য তৈরি থাকতে। পরে তৈরি হয় ২২টি দোকানের তালিকা।

Advertisement

তবে সোমবার সকাল থেকে শহর জুড়ে মদ কেনার এই ভিড় দেখে রীতিমতো আশঙ্কা প্রকাশ করেছে লালবাজার। সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে নবান্নকেও জানানো হয়েছে, সামাজিক দূরত্ববিধি মনে চলার পরিকাঠামো তৈরি না করে মদের দোকান খুললে বড় ধরনের গোলযোগ হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে, খোলার এক ঘণ্টার মধ্যেই আপাতত ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অধিকাংশ মদের দোকান।

এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেও পরিস্থিতি কার্যত একই। অনেক জায়গায় গভীর রাত থেকে মদের দোকানের সামনে লাইন দিতে দেখা গিয়েছে সুরাপায়ীদের।

শুধু এ রাজ্যে নয়, মদের দোকান খুলতেই উৎসাহী সুরাপায়ীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গিয়েছে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে। মদের কেনার হিড়িকের জেরে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংও লাটে উঠেছে কোথাও কোথাও। কর্নাটকে সকাল থেকেই দেখা গিয়েছে মদের দোকানের সামনে দীর্ঘ লাইন। একই ছবি দিল্লি, ছত্তীসগঢ়ের-সহ বিভিন্ন জায়গায়। দীর্ঘ দিন পর মদের দোকান খোলা পেয়ে কলকাতার মতো হুড়োহুড়ো শুরু হয় দিল্লির বিভিন্ন দোকানের সামনে। সেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠি চালাতে হয় পুলিশকে। দিল্লির কাশ্মীরি গেটের সামনে একটি মদের দোকানের সামনে জনতার ভিড় সামলাতে লাঠি চালিয়েছে পুলিশ। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে দিল্লিতেও দোকান বন্ধ করে দিতে হয়। কেন্দ্র সবুজ সঙ্কেত দিলেও পঞ্জাব, কেরলের মতো কয়েকটি রাজ্য মদের দোকান খুলবে না বলে জানিয়েছে।

আরও পড়ুন: সবচেয়ে বিপদের ২০-র তালিকায় কলকাতা, নয়া দল পাঠাচ্ছে কেন্দ্র

আরও পড়ুন: রাজ্যে সপ্তাহ জুড়ে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement