অযোধ্যা পাহাড়ের দুলগুবেড়ার জঙ্গলে আগুন। শনিবার। নিজস্ব চিত্র।
নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া
বসন্তের ঝরা পাতায় প্রতি বছর অল্পবিস্তর আগুন লাগে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের জঙ্গলে। এ বছর সেই প্রকোপ অনেকটা বেশি বলে দাবি পাহাড় ও পাহাড়তলির অনেক বাসিন্দার। নির্দিষ্ট তথ্য-পরিসংখ্যান না দিতে পারলেও সে কথা মানছেন বন দফতরের কর্তাদের একাংশ। তবে তাঁদের দাবি, এখনও দাবানলের মতো কিছু হয়নি।
গত মঙ্গলবার থেকে পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালের বাঘমুণ্ডি, অযোধ্যা ও মাঠা রেঞ্জ থেকে একে একে আগুনের খবর আসা শুরু হয়। বুধ ও বৃহস্পতিবার মাঠাবুরুর কাছে লেলিহান শিখাও নজরে এসেছিল। তা নেভার পরেই, শনিবার মাঠা ও অযোধ্যা রেঞ্জের কিছু জঙ্গল থেকে আগুন লাগার খবর আসে। বন দফতরের দাবি, রবিবার দুপুরের মধ্যে আগুন প্রায় নিভিয়ে আনা গিয়েছে।
ডিএফও (পুরুলিয়া) রামপ্রসাদ বাদানা বলেন, ‘‘দিন কয়েক আগে ধরা অধিকাংশ আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আগুনের খবর এসেছে নতুন কিছু জায়গা থেকে। বনকর্মীরা দ্রুত পৌঁছচ্ছেন। পরিস্থিতি নজরে রয়েছে।’’
বন দফতরের সঙ্গে কাজে হাত লাগিয়েছে ‘যৌথ বন পরিচালন কমিটি’ ও বিভিন্ন পরিবেশপ্রেমী সংগঠন। দুর্গম জায়গায় জলের অভাবে গাছের ডাল ভেঙে আগুন নেভাতে হচ্ছে। শুকনো পাতা সাফ করে ছড়াতে থাকা আগুনের পথ আটকানো হচ্ছে। পাহাড়ের বামনিডির ভূদেব সিং মুড়া জানান, বুনো শুয়োর, পাখি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসছে। রবিবার পাহাড়তলির মিশিরটাঁড়ে ময়াল দেখা গিয়েছে।
বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুরুলিয়ার দু’পাশে অযোধ্যা আর পঞ্চকোট পাহাড় ফুসফুসের মতো। এমন আগুন প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করবে।’’ তাঁর মতে, অনেক পর্যটক ক্যাম্প ফায়ার করে আগুন নেভাচ্ছেন না। যত্রতত্র ফেলছেন জ্বলন্ত সিগারেটের টুকরো। এতে দুর্ঘটনা বাড়ছে। আবার আড়শার পরিবেশপ্রেমী রঙ্গলাল কুমারের মতে, অনেক জায়গায় মোবাইল হাতে বেড়াতে আসছেন পর্যটকেরা। তাঁদের একাংশ মারফত আগুন লাগার খবর বেশি করে প্রকাশ্যে আসছে।
অযোধ্যা পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় বেআইনি কাঠকয়লার ভাটা চলত। সরবরাহ হত ভিন্ রাজ্যের স্বর্ণশিল্পে। গত কয়েক বছর লাগাতার অভিযানে তা অনেকটাই কমেছে বলে দাবি বন দফতরের। এ বছর আগুনের বাড়বাড়ন্তে ওই কারবারিদের কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্তারা।