রাজ্যে অগস্টের আগে ট্রেন-মেট্রো পরিষেবা চালু নয়। ফাইল চিত্র।
আপতত ১২ অগস্টের আগে দেশে তথা রাজ্যে ট্রেন-মেট্রো পরিষেবা চালু হওয়ার কোনও সম্ভবনা নেই। খুলছে না স্কুল-কলেজ, সিনেমা হল-মাল্টিপ্লেক্স, কোচিং ক্লাস, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিনোদন পার্ক, থিয়েটার, বার-ও। কেন্দ্রের আনলক-এর প্রথম পর্যায় শেষ হওয়ার আগেই, পশ্চিমবঙ্গে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত ফের লকডাউন ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। ফলে অগস্টের আগে এ সব ক্ষেত্রে ছাড় মিলছে না।
অন্য দিকে ১ জুলাই থেকে ১২ অগস্ট পর্যন্ত মেল, এক্সপ্রেস, শহরতলির মধ্যে চলাচলকারী সময়সূচি মেনে চলা সমস্ত যাত্রীবাহী ট্রেনের টিকিট বাতিল করে দিল ভারতীয় রেল। আজ বৃহস্পতিবার রেলের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ১২ অগস্টের আগে ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে শ্রমিক স্পেশাল এবং অন্য যে স্পেশাল ট্রেনগুলি চলছিল, সেগুলি চলবে বলে জানানো হয়েছে।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শৃঙ্খল ভাঙতে মার্চের শেষের দিকে লকডাউন ঘোষণা হয়েছিল দেশে। সেই সময় থেকেই সমস্ত যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ। প্রথমে ৩ মে পর্যন্ত সমস্ত যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ রাখা হয়েছিল। তার পর সেই সময়সীমা বাড়িয়ে করা হয় ৩০ জুন পর্যন্ত। এ বার সেই সময়সীমা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হল। তবে তার মাঝেই পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে চালু হয়েছিল শ্রমিক স্পেশাল। পাশাপাশি বেশ কিছু নির্ধারিত রুটে বিশেষ ট্রেন চালানো হচ্ছিল। সেই ট্রেনগুলি চলবে বলে জানিয়েছে রেল।
গত ৮ জুন থেকে ধাপে ধাপে লকডাউন উঠলেও কনটেনমেন্ট জোন বা যে সব এলাকায় সংক্রমণের হার বেশি সেখানে কঠোর লকডাউন বহাল থাকবে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত। আনলক-১ ঘোষণার পর, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধাপে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় মিলবে। এমনটাই জানানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী ৩০ জুন পর্যন্ত লোকাল ট্রেন, মেল এবং এক্সপ্রেস ট্রেন পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। তবে রাজ্য চাইলে শর্ত মেনে লোকাল ট্রেন চালুর বিষয়ে একটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল রেল মন্ত্রক সূত্রে। সে কারণে হাওড়া ডিভিশনের বিভিন্ন স্টেশনে সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার নির্দেশিকা জারি হয়েছিল। যাতে যাত্রী পরিষেবা শুরু হলে করোনার সংক্রমণ রোখা যায়। কিন্তু, নতুন করে রাজ্যে লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর আপাতত লোকাল ট্রেন চালুর সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।
গণ পরিবহণের অন্যতম মাধ্যম যেমন লোকাল ট্রেন, তেমনই কলকাতার ‘লাইফ লাইন’ মেট্রো। লকডাউনে দীর্ঘ দিন ধরে সেই পরিষেবা বন্ধ। ফের পরিষেবা চালুর কথা মাথায় রেখে, রেকের ‘ট্রায়াল রান’ থেকে রক্ষণাবেক্ষণ, ট্র্যাক মেন্টেনেন্স সবই শুরু হয়েছে নিময়মাফিক। দূরত্ব বিধির বিষয়ে টিকিট কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের দাঁড়ানোর জায়গায়ও চিহ্নিত করণের কাছ শেষ। কাউন্টার থেকে টিকিট কাটার মহড়াও হয়েছে। অন্য দিকে, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো ফুলবাগান পর্যন্ত চালানোর ছাড়পত্র মিলেছে। কিন্তু সব কিছুই থমকে রয়েছে অনুমতির অপেক্ষায়। রাজ্যে নতুন করে লকডাউন ঘোষণার পর অগস্টের আগে মেট্রো পরিষেবা চালু না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
আরও পড়ুন: পাঁচ রাজ্যে গেল করোনার ওষুধ রেমডেসিভির, কলকাতায় পরের পর্যায়ে
শুধু ট্রেন-মেট্রোই নয়, বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন। আগেই স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য। করোনার কথা মাথায় রেখে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠনও আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আগে ঠিক হয়েছিল, রাজ্যে ১০ জুন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। পরে সিদ্ধান্ত হয় ৩০ জুন পর্যন্ত সব স্কুলই বন্ধ থাকবে। পরিস্থিতির গুরুত্বের করা মাথায় রেখে, জুন মাস জুড়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার কথাও জানানো হয়ে। গতকাল, বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, স্কুল খুলতে জুলাই হয়ে যাবে। তার পরেই ৩১ জুলাই পর্যন্ত স্কুলে ছুটি ঘোষণা করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: দশম শ্রেণির পরীক্ষা বাতিল, দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা ঐচ্ছিক, সুপ্রিম কোর্টে জানাল সিবিএসই
কন্টেনমেন্ট জোন বাদে রাজ্যে অফিস, বাজার, শপিংমল, রেস্তরাঁ, কল-কারখানা, ব্যবসায়ীক কেন্দ্র খুলে গিয়েছে। কেন্দ্র আনলক-১ ঘোষণার পর কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় মিলেছে। এর পর যথাক্রমে আনলক-২ এবং আনলক-৩ ঘোষণা হবে। রাজ্য সরকারগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর স্কুল-কলেজ, কোচিং ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা হবে আনলক-এর দ্বিতীয় ধাপে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল জুলাইয়ে।
কিন্তু আগে থেকেই লকডাউন ঘোষণার পর, রাজ্যে এই সব ক্ষেত্রে ছাড় মিলবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। আনলকের তৃতীয় ধাপে মেট্রো রেল, সিনেমা হল, জিমন্যাসিয়াম, সুইমিং পুল, বিনোদন পার্ক, থিয়েটার, বার, প্রেক্ষাগৃহ, সমাবেশ হল, আন্তর্জাতিক বিমান, ক্রীড়া, রাজনৈতিক, বিনোদন, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, বড় সমাবেশের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বুঝে ছাড়পত্রের দিন ক্ষণ ঠিক হবে।