ফাইল চিত্র।
বেআইনি মদ বাজেয়াপ্ত করা থেকে গ্রেফতারি— সবই নিয়মিত চলছে বলে রাজ্য প্রশাসনের দাবি। পূর্ব বর্ধমান ও হাওড়ায় বিষমদে প্রাণহানির বিষয়টিকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’র তকমা দিয়ে তাদের বক্তব্য, এমন ঘটনা ঠেকাতে আরও কড়া নজরদারির ব্যবস্থা হচ্ছে। কোনও রকম খামতি রাখা হচ্ছে না নজরদারিতে। কিন্তু প্রথমে পূর্ব বর্ধমান এবং এ বার হাওড়া— খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে বিষমদে মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসনিক নজরদারি নিয়ে বিভিন্ন মহলে শুধু যে জোরদার প্রশ্ন উঠছে তা-ই নয়, ‘বিষমদ’ নিয়ে নজরদারি যথাযথ কি না, তা নিয়ে বাড়ছে সংশয়ও।
আবগারি দফতর সূত্রের বক্তব্য, হাওড়ায় এ বারের ঘটনার উৎসস্থল একটি ঝুপড়ি হোটেল। প্রধানত ভাতের হোটেল হলেও সরকারি দোকান থেকে মদ এনে তা বিক্রি করা হত সেখানে। কিন্তু সেই বেচাকেনার লাইসেন্স ছিল না হোটেল-মালিকের। যে-ব্যাচের মদ থেকে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, ইতিমধ্যে সেই ব্যাচের মদ পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তাতে কোনও বিষ-উপাদানের অস্তিত্ব নেই।
প্রাথমিক অনুসন্ধানের পরে আধিকারিকেরা মনে করছেন, নেশা বাড়াতে মদে অন্য কোনও উপাদান মেশানো হয়ে থাকতে পারে। এবং মৃত্যু ঘটে থাকতে পারে তার থেকেই। বুধবার হোটেল-মালিককে গ্রেফতার করার পরে সেখান থেকে কঠিন এবং তরল আরও কিছু উপাদান বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, মদের সঙ্গে সেই সব উপাদান মেশানো হয়ে থাকতে পারে। তাই সেগুলি পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন তদন্তকারীরা। চূড়ান্ত রিপোর্ট পাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাচের মদ অন্য দোকান থেকে বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এক আবগারি-কর্তা বলেন, “দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি প্লান্টে ওই ব্যাচের মদ তৈরির পরে বিভিন্ন লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকানে সরবরাহ করা হয়েছিল। অথচ অন্য কোথাও কিছু ঘটেনি, ঘটেছে শুধু ওই হোটেলে। পূর্ব বর্ধমানের ক্ষেত্রেও মদে অন্য উপাদান মেশানোর প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। তার থেকে ‘ওভারডোজ়’ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রেও সেই সম্ভাবনা এড়ানো যায় না।”
প্রশ্ন উঠছে, বার বার এমন ঘটনা ঘটছে কেন? আবগারি-কর্তাদের দাবি, গত ১ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত রাজ্যের প্রায় আড়াই লক্ষ জায়গায় হানা দেওয়া হয়েছিল। চোলাই মদ (আইডি লিকার) উদ্ধার হয়েছে প্রায় ১৫.৭৫ লক্ষ লিটার। অবৈধ ভাবে বিক্রির জন্য প্রস্তুত থাকা প্রায় ১৭ হাজার লিটার বিদেশি মদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রায় ৯০ হাজার লিটার দেশি মদ আটক করা হয়। এ ছাড়াও জাল বিদেশি মদ এবং দেশি মদ উদ্ধার হয়েছে যথাক্রমে প্রায় ১৬ হাজার এবং দু’হাজার লিটার। গত ১৮ দিনে আবগারি দফতরের তল্লাশি-অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন ৩৪৩৯ জন এবং পুলিশের হাতে ধরা পড়া লোকের সংখ্যা ৪৩৩৩।
এক আবগারি-কর্তার কথায়, “এমন অবৈধ কার্যকলাপ ঠেকাতে সম্ভাব্য সব ধরনেরই পদক্ষেপ করা হয়। পুলিশ নিয়ে বা পৃথক ভাবে হানা ও গ্রেফতার সবই হচ্ছে। তবে মানুষের সচেতনতাও জরুরি। তবেই প্রশাসনিক উদ্যোগ সফল হবে।”