—প্রতীকী চিত্র।
দিন চারেক ধরে আচমকা গরম বেড়েছে দক্ষিণবঙ্গে। ভাদ্রের পচা গরমে অস্বস্তি বাড়িয়েছে যখন তখন লোডশেডিং। গত তিন ধরে উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গে যে বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলছিল, শনিবারও তা জারি রয়েছে। কোথাও কোথাও ঘণ্টায় ঘণ্টায় রুটিন করে ‘ছুটি’ নিচ্ছে বিদ্যুৎ। কোথাও আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে। এই ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে কার্যত নাজেহাল দশা রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার গ্রাহকদের। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত এই পরিস্থিতির বদল ঘটল না রাজ্যে।
বাঁকুড়ায় এখন ভ্যাপসা গরম। মানুষের কষ্ট বাড়াতে দোসর হয়েছে দফায় দফায় লোডশেডিং। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে এই সমস্যায় নাকাল বাঁকুড়া জেলার মানুষ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে দফায় দফায় লোডশেডিং হয়েছে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। শুক্রবার দিনভর কোথাও দুই দফায় লোডশেডিং হয়েছে। প্রতি দফায় বিদ্যুৎ পরিষেবা বিচ্ছিন্ন থাকছে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। এমনিতেই বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় অস্বস্তি বাড়ছে। তার উপর এই বিদ্যুৎ বিভ্রাটে যন্ত্রণা বাড়ছে।
একই ছবি হুগলিতেও। সকাল থেকে সন্ধ্যা, দুপুর থেকে মধ্যরাত, যখন তখন লোডশেডিংয়ে জেরবার সাধারণ মানুষ। গত দু’দিন ধরে এক লপ্তে মোমবাতির চাহিদা বেড়ে গিয়েছে। সন্ধ্যা হলেই বাড়ি-বাড়ি মোমবাতির আলো দেখা যাচ্ছে। এমনকি, লোডশেডিং-যন্ত্রণা থেকে ছাড় পাচ্ছে না হাসপাতালগুলো। এক বার লোডশেডিং হলে মোটামুটি মেয়াদ হচ্ছে এক থেকে দু’ঘণ্টা। উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, বীরভূম, বর্ধমান— লোডশেডিংয়ে ভুক্তভোগী সবাই।
কিন্তু কেন এমন অবস্থা? বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে খবর, ১১০০ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি চলছে। ফলে ন্যাশনাল গ্রিডে সরবরাহ কমে গিয়েছে। সূত্রের খবর, সমস্যার মূলে কয়লার জোগানের সমস্যা যেমন রয়েছে, তেমনই আছে রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের উৎপাদনে ঘাটতি। শনিবার থেকে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ার কথা বলছিল বিদ্যুৎ দফতর। কিন্তু শনিবারও ফরাক্কায় ২০০ মেগাওয়াট কম উৎপাদন হবে বলে খবর। ফলে এখনই লোডশেডিংয়ের সমস্যা মিটছে না।
লোডশেডিং সমস্যা থেকে ছাড় পাচ্ছে না উত্তরবঙ্গও। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে জেরবার দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মানুষ। কুশমণ্ডি থেকে কুমারগঞ্জ, হরিরামপুর থেকে হিলি— সর্বত্রই একই ছবি। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুরু হওয়া লোডশেডিংয়ের সমস্যা শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত ছিল। শনিবার সকাল থেকেও দফায় দফায় লোডশেডিং হয়েছে। জেলা সদর বালুরঘাট-সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে শুক্রবার সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক থাকলেও তার পর দীর্ঘ সময় আলো-পাখা ছাড়া থাকতে হচ্ছে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের গ্রাহকদের। তীব্র গরম এবং আর্দ্রতাজনিত কষ্টের মধ্যে এই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে গলদঘর্ম অবস্থা জেলাবাসীর। সমাজমাধ্যম থেকে পাড়ার চায়ের দোকান— সর্বত্রই আলোচনার বিষয়বস্তু এখন লোডশেডিং। বিদ্যুৎ বিপর্যয় নিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুরের দফতরের রিজিওনাল ম্যানেজার দীপঙ্কর দাস বলেন, ‘‘এই সমস্যা গোটা রাজ্যের।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘হঠাৎ করেই গরমের কারণে এসি এবং ফ্রিজের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ঘাটতি হচ্ছে।’’ তবে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে বলেই আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
লোডশেডিং চলছে কোচবিহারের দিনহাটা, মাথাভাঙা, তুফানগঞ্জেও। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে জেরবার মালদহবাসী। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার তরফে আগাম সতর্কীকরণ ছাড়া টানা দুই-তিন ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। মালদহে আবার অভিযোগ, টানা এক সপ্তাহ ধরে রাত হলেই এই সমস্যায় ভুক্তভোগী তাঁরা। তার পর গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় গরমও বেড়েছে। তাই যন্ত্রণা বেড়েছে কয়েক গুণ। কয়লার জোগান কম, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া ইত্যাদির কথা বলছেন বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকরা। বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এই সমস্যা নিয়ে বলেছেন, ‘‘প্রতি বছরের মতো প্রাক্-পুজো প্রস্তুতি চলছে। বিদ্যুতের তার, ট্রান্সফর্মার ইত্যাদি পাল্টানো হচ্ছে।’’ মন্ত্রী তাই কয়েক দিন ‘একটু কষ্ট’ হবে বলে জানিয়েছেন।
অন্য দিকে, এই সমস্যার আশু সমাধান না হলে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার দফতরের সামনে ধর্নায় বসবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের দেউলিয়া সরকার পয়সার অভাবে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লা সরবরাহ করতে পারছে না। তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো প্রয়োজনের তুলনায় উৎপাদন ক্ষমতা কমাতে বাধ্য হয়েছে। যার ফলে ঘাটতির পরিমাণ ১২০০ মেগাওয়াট।’’