শনিবার ধর্মতলার অনশনমঞ্চ থেকে ডাক্তারদের সাংবাদিক বৈঠক। ছবি: সংগৃহীত।
সাংবাদিক বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তারেরা জানালেন, সোমবারের বৈঠকের পরেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন তাঁরা। অনুরোধে চিঁড়ে ভিজবে না, বরং মুখ্যমন্ত্রী ১০ দফা দাবি মানলে তবেই অনশন তুলবেন চিকিৎসকেরা।
আন্দোলনের পরিচিত মুখ দেবাশিস হালদার বলেন, ‘‘যে ভাবে ফোনে কথা হল, তা খুবই অসংবেদনশীল। ওঁরা অনশন তোলানোর জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু যাঁরা অনশনে বসেছেন, এটা তাঁদের সকলের সিদ্ধান্ত। ফলে আলোচনা করেই আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’’ দেবাশিস আরও বলেন, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম আজ সব মিটতে চলেছে। কিন্তু উনি বললেন, আজ ব্যস্ত। সোমবার বসবেন। আমরা সোমবারের অপেক্ষায় থাকব।’’
আর এক আন্দোলনকারী আশফাক উল্লাহ নাইয়া বলেন, ‘‘উনি সোমবার সময় দিয়েছেন মানে আরও দু’দিন অনশন চলবে। মনে রাখবেন, অনশনকারীরা শুধু একটা ‘ফোন কল’-এর জন্য জীবন বাজি রাখেনি। তারা শুধু একটা প্রতিশ্রুতির জন্য জীবন বাজি রাখেনি। আমাদের চোখ থাকবে সোমবারের বৈঠকের দিকে।’’
অনশনকারীরা শনিবারও স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, সোমবারও দাবি না মানা হলে আন্দোলন একই তীব্রতায় জারি থাকবে।
রুমেলিকা বলেন, ‘‘আজ শনিবার। আর উনি সোমবার বৈঠক ডেকেছেন। অর্থাৎ, আরও দু’দিন বাধ্য হয়েই চালিয়ে যেতে হবে অনশন। ওঁর কি এক বারও মনে হল না এরা আরও দু’দিন না খেয়ে থাকবে?’’
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া ঘিরে ক্ষুব্ধ সকলেই। জুনিয়র ডাক্তারেরা বলছেন, ‘‘ওঁর কি মনে হচ্ছে এই অনশনের কোনও গুরুত্ব নেই? যাঁরা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন, তাঁদের প্রচেষ্টাকে এত লঘু করে দেখা হচ্ছে কেন? যে ভাবে কাজে ফেরার অনুরোধ করছেন, তা বেদনাদায়ক।’’
অনশনকারী চিকিৎসক রুমেলিকা কুমার বলেন, ‘‘এত দিন ধরে একই দাবি জানিয়েছি। তবু ৭১ দিন পরেও শুনতে হচ্ছে উনি নাকি দাবিগুলি জানেনই না। তা হলে কি ওঁকে জানানো হচ্ছে না? এত কষ্ট কি তাঁর কানে পৌঁছচ্ছে না?’’
আলোলিকা বলেন, ‘‘আমরা মনঃক্ষুণ্ণ। তবু মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, ফোনে বার্তালাপে বোঝা গেল, অনেক দাবিই ওঁর অজানা। আগেও মুখোমুখি বসেছি, আবারও বসব। চাইলে আরও কয়েক দিন অভুক্ত থাকব। এত দিন অনশন চলছে, আরও দু’-তিন দিন অভুক্ত থাকতে অসুবিধা নেই।’’
জুনিয়র ডাক্তারেরা বলেন, ‘‘৭১ দিন পরেও শুনতে হচ্ছে উনি দাবিগুলিই জানেন না! সোমবার আমরা ওঁর দেওয়া সময়েই বৈঠকে যাব। সরাসরি আমাদের মুখ থেকে শুনলে হয়তো ওঁর বুঝতে সুবিধা হবে।’’
আর এক অনশনকারী আলোলিকা ঘোড়ুই বলেন, ‘‘ইমেল করে আগেও আমরা দাবিগুলি জানিয়েছি। এখানে অনশনে বসার আগেও ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল। আমাদের সব সহকর্মী কাজে ফিরেছেন। শুধু আমরা আট জন কাজ করছি না, যারা অনশনে বসে আছি। আমরা বাধ্য হয়েছি এই সিদ্ধান্ত নিতে। কারণ, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি।’’
সায়ন্তনী বলেন, ‘‘বার বার মিটিংয়ের ডাক দিতে ছুটে গিয়েছি। ফোনে এ ভাবে বার্তালাপ অনভিপ্রেত। আমরা সোমবারের আগে সময় পেলাম না। আমরা আবারও আশাহত।’’
ক্ষোভ স্নিগ্ধার গলাতেও। তিনি বলেন, ‘‘যে দিন অনশনে বসেছি, সে দিনও ডিউটি করে এসেছি। আর আমরা মাত্র আট জন এখানে অনশনে বসার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে? এটা উনি কী ভাবে বললেন? উনি দাবি মেনে নিন, তা হলে এখনই কাজে ফিরব আমরা।’’
জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষ থেকে সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা বলেন, ‘‘আমাদের মনে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী আমাদের দশ দফা দাবি স্পষ্ট ভাবে জানেনই না।’’
জুনিয়র ডাক্তারেরা বলেন, ‘‘আমরা সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে যাব। উনি আমাদের দাবি মেনে নিন, আমরাও কাজে ফিরতে চাই। নির্দেশিকা বের করার জন্য গত ১৪ দিন ধরে বসে আছি।’’
ধর্মতলার অনশনমঞ্চ থেকে স্নিগ্ধা হাজরা বলেন, ‘‘অনশনের চতুর্দশ দিনে শারীরিক অবস্থা কেমন হয় বুুঝতেই পারছেন। পাশের বেডের অনশনকারী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে মানসিক অবস্থা কেমন হয় বুঝতেই পারছেন। আট জন অনশনে বসেছি বলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে?’’
জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্মঘটের হুঁশিয়ারির পর দিনই ধর্মতলার অনশনমঞ্চে পৌঁছে গিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অনশনকারীদের ফোনে কথাও বলিয়ে দেওয়া হয়। পরে ফোনের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা শোনানো হয় অনশনমঞ্চে। এর পরেই সাংবাদিক বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তারেরা।