বর্ধমানে রোড শো-এ জে পি নড্ডা। —নিজস্ব চিত্র
ঠিক এক মাস আগে রাজ্য সফরে এসে ডায়মন্ড হারবারে যাওয়ার পথে আক্রান্ত হয়েছিল তাঁর কনভয়। শনিবারের সফরের শেষ প্রান্তে এসে সেই নিয়ে মুখ খুললেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। বর্ধমানে রোড শোয়ের পর সাংবাদিক সম্মেলনে সেই আক্রমণ নিয়ে নড্ডার কটাক্ষ, আমার উপর যে পুষ্পবর্ষণ হয়েছিল, সেটাই কি বাংলার সংস্কৃতি? রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নড্ডা। সিএএ কার্যকর করতে বিজেপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও এ দিন মন্তব্য করেছেন নড্ডা।
শনিবার দিনভর ঠাসা কর্মসূচি ছিল নড্ডার। কাটোয়ার মুস্থুলিতে কৃষক সভা। তার পর কৃষকের বাড়িতে মুষ্টিভিক্ষা এবং মধ্যাহ্নভোজ। সেখান থেকে বর্ধমান শহরে গিয়ে রোড শো। শনিবার শহরের বীরহাটা থেকে কার্জন গেট পর্যন্ত রোড এই রোড শো-য়ে ছিল জনজোয়ার। সুসজ্জিত গাড়িতে ছিলেন নড্ডা-সহ রাজ্যের বিজেপি নেতারা। রাস্তায় প্রচুর বিজেপি সমর্থক পা মেলান। পাশাপাশি রাস্তার দু’পাশেও প্রচুর মানুষের ভিড় জমে যায়। সেই রোড শো-এর পর সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি নড্ডা।
এর পর বর্ধমানে সাংবাদিক সম্মেলন করেন নড্ডা। সেখানেই প্রশ্ন ওঠে তৃণমূলের বহিরাগত তরজা নিয়ে। সেই প্রশ্নেই বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি বলেন, ‘‘বাংলাকে এক সময় বলা হত, বাংলা আজ যা ভাবে, ভারত কাল সেটা ভাবে। বাংলা বহু বিপ্লবী, বহু আন্দোলনকারীদের ভূমি। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্য আজ এক দেশ, এক সংবিধান দেশে। বাংলার প্রেরণা নিয়ে দেশ গঠন হয়েছে। সেই রকমই এখানকার ভাষা, এখানকার সংস্কৃতি। তার উপরেই আমরা বাঁচি।’’
আগের বার নড্ডা রাজ্য সফরে আসার পর ধর্মতলায় এক সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নাম নিয়ে ব্যাঙ্গ করেছিলেন। সংস্কৃতির প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই মমতার সেই আক্রমণের প্রসঙ্গ টানেন নড্ডা। তাঁর কথায়, ‘‘উনি যে সংস্কৃতি নিয়ে চলছেন, সেটা কি বাংলার সংস্কৃতি? তোলাবাজি, কাটমানি, কয়লা মাফিয়া, বালি মাফিয়া— এ সব কি বাংলার সংস্কৃতি? সেটাও ছেড়ে দিলাম, আমার নামের সঙ্গে যে অলঙ্কার যোগ করেছেন, সেটা কি বাংলার সংস্কৃতি? ডায়মন্ড হারবারে যাওয়ার পথে আমার উপর যে পুষ্পবর্ষণ হয়েছিল, সেটা কি এখানকার সংস্কৃতি? আপনি একনায়কতন্ত্রের প্রতিনিধি? বাংলার সংস্কৃতির প্রতি অবমাননা এটা। আমরা বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে গর্ববোধ করি। আমরা সম্মান করি, তার উপর নির্ভর করেই বেঁচে থাকি।’’
নড্ডার স্ত্রী মল্লিকা জন্মসূত্রে মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা হলেও তিনি বাঙালি বংশোদ্ভূত। সেই প্রসঙ্গ টেনে হালকা চালে নড্ডা বলেন, ‘‘আমি তো ব্যক্তিগত ভাবেও বাঙালি সংস্কৃতি নিয়ে। নিজে টোপর পরে বিয়ে করতে গিয়েছিলাম।’’
রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নড্ডা বলেন, ‘‘রাজ্যে ৩ শতাধিক বিজেপি কর্মী খুন হয়েছে। এখানে পুলিশের রাজনীতিকরণ হয়েছে। পুলিশ শাসক দলের হয়ে কাজ করছে।’’
নড্ডার বক্তব্য:
উত্তর: বাংলাকে এক সময় বলা হত, বাংলা আজ যা ভাবে, ভারত কাল সেটা ভাবে। বাংলা বহু বিপ্লবী, বহু আন্দোলনকারীদের ভূমি। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্য আজ এক দেশ, এক সংবিধান দেশে। বাংলার প্রেরণা নিয়ে দেশ গঠন হয়েছে। সেই রকমই এখানকার ভাষা, এখানকার সংস্কৃতি। তার উপরেই আমরা বাঁচি। কিন্তু মমতার কথায় এলে বলতে পারি, উনি যে সংস্কৃতি নিয়ে চলছেন, সেটা কি বাংলার সংস্কৃতি? তোলাবাজি, কাটমানি, কয়লা মাফিয়া, বালি মাফিয়া— এ সব কি বাংলার সংস্কৃতি? সেটাও ছেড়ে দিলাম, আমার নামের সঙ্গে যে অলঙ্কার যোগ করেছেন, সেটা কি বাংলার সংস্কৃতি? ডায়মন্ড হারবারে যাওয়ার পথে আমার উপর যে ফুলবর্ষণ হয়েছিল, সেটা কি এখানকার সংস্কৃতি। আপনি একনায়কতন্ত্রের প্রতিনিধি? বাংলার সংস্কৃতির প্রতি অবমাননা এটা। আমরা বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে গর্ববোধ করি। আমরা সম্মান করি, তার উপর নির্ভর করেই বেঁচে থাকি। আমি ব্যক্তিগত ভাবেও বাঁচি।
প্রশ্ন: মমতা বলছেন তাঁরা আসল বাঙালি, আপনারাও বলছেন আপনারা আসল। তা হলে আসল কারা?
উত্তর: বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক উত্তর দিতে পারবেন। আর সময়সীমার কথা বললে আমি বলতে পারি, আমরা এর প্রতি দায়বদ্ধ।
প্রশ্ন: সিএএ কি আদৌ চালু হবে? হলে কত দিনের মধ্যে?
উত্তর: রাজ্যপাল সাংবিধানিক পদ হিসেবে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতেই পারেন। তবে আপনারাও জানেন যে, রাজ্যপাল যে বক্তব্য পেশ করেছেন, তা সত্যি।
প্রশ্ন: দিল্লিতে রাজ্যের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় বিজেপি নেতার বাড়িতে দেখা করেছেন বলে বিতর্ক হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও দেখা করেছেন। তার পর সাংবাদিক সম্মেলনে যা বলেছেন, আপনার সুর আর রাজ্যপালের সুর একই রকম।
উত্তর: আপনারা সবাই জানেন কে রাজকুমার। আমার মুখ দিয়ে কেন বলাতে চাইছেন। আমি তো রাজকুমার বলেছি, সাধারণ মানুষই নাম বলেছেন
প্রশ্ন: আপনি বলেছেন, নতুন রাজকুমার এসেছে? কে সেই রাজকুমার? নাম বলতে পারবেন?
উত্তর: আমাদের অবশ্যই পরিকল্পনা আছে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা তখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব, যখন রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে
প্রশ্ন: রাজ্যে শিল্প, চাকরি— এই সব নিয়ে আপনাদের কোনও পরিকল্পনা আছে?
• আগামী নির্বাচনে ভারতে ২০০ আসন নিয়ে জিতবে রাজ্যে
• গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে লড়াই হবে
• আপনার ভয় কেন? বিজেপি পুরো শক্তি নিয়ে এই অপরাধীকরণের বিরুদ্ধে লড়বে
• রাজ্যে দুর্নীতি, তোলাবাজির রাজত্ব হয়েছে
• আমরা ৪০ হাজার গ্রামসভায় যাব আমরা, কৃষকদের কাছে প্রতিজ্ঞা করব, আপনাদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করব, কৃষকদের মূল ধারায় নিয়ে আসার চেষ্টা করব
• এর জন্য আমরা নতুন কর্মসূচি শুরু করেছি
• প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি এ রাজ্যে চালু হয়নি
• এটাই এখানকার পরিস্থিতি
• এর মধ্যেও কয়েক জন বিজেপি কর্মীকে খুন হতে হয়েছে
• গত ৯ ডিসেম্বর আমি এসেছিলাম, আবার ৯ তারিখ এসেছি
• বাগবাজার ঘাটে গিয়ে ১০০ বিজেপি কর্মীর পরিবারের লোকজন তর্পন করেছেন
• প্রায় ৩০০ বিজেপি কর্মী খুন হয়েছেন রাজ্যে
• আমাদের কর্মীদের উপর যে ভাবে হামলা হচ্ছে, তাতে এটা স্পষ্ট, সাধারণ মানুষের জন্য আইন-শৃঙ্খলার কী অবস্থা
• পুলিশের রাজনীতিকরণ হয়েছে, রাজনীতির অপরাধীকরণ হয়েছে রাজ্যে