বেহালায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
গত শুক্রবার আরজি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। তার পর থেকে সুবিচার এবং নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন করছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে টানা কর্মবিরতি চলছে। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের এ বার কাজে ফিরতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অনুরোধ, সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা থেকে যেন আর বঞ্চিত না করা হয়।
বেহালার অনুষ্ঠান থেকে মমতা বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের আমি আবেদন জানাচ্ছি সাধারণ মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে। তিন জন ইতিমধ্যে বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন। চিকিৎসা দিতে কিন্তু আপনারা অঙ্গীকারবদ্ধ। পাঁচ দিন হয়ে গেল। পায়ে ধরে বলছি, চিকিৎসা করুন। তার জন্য আপনারা নিযুক্ত। অনেক আন্দোলন করেছেন। কেউ আটকায়নি। এবার কাজে নামুন, এটা আমার আবেদন। আমার স্বাস্থ্য সচিব এই আবেদন জানিয়েছেন। আজ আমিও আবেদন করছি। সিনিয়র ডাক্তাররা পরিষেবা দিচ্ছেন, তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’’
মমতার আবেদন সত্ত্বেও এখনই কাজে ফিরছেন না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের বক্তব্য, এখনও তাঁদের সব দাবি পূরণ হয়নি। এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘‘আমরা রোগী পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত। দ্রুত কাজে যোগ দিতে চাই। কিন্তু আমাদের কাছে এখনও সব স্পষ্ট হয়নি। আমাদের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছিল। সিবিআইয়ের তদন্তে আমরা সদুত্তর পেলে পরবর্তীকালে ভেবে দেখব।’’
আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে সর্বত্র যে আন্দোলন চলছে, তার পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করলেন মমতা। রাম-বামের চক্রান্তের বিরুদ্ধে পথে নামতে চলেছে তৃণমূল। ১৭ তারিখ থেকে সেই কর্মসূচির কথা ঘোষণা করলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘১৭ তারিখ থেকে সারা বাংলায়, সব ব্লক, সব ওয়ার্ডে ২টো থেকে ৪টে পর্যন্ত বাম-রামের চক্রান্তের বিরুদ্ধে মিছিল এবং আন্দোলন হবে। ১৮ তারিখ ধর্না হবে ব্লকে ব্লকে। ১৯ তারিখে রাখি। ২০ তারিখে আবার পথে নামব আমরা। সে দিনের কর্মসূচি পরে জানিয়ে দেব।’’
মমতা বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের আবেদন জানাচ্ছি, সাধারণ মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে। তিন জন বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন। চিকিৎসা দিতে আপনারা অঙ্গীকারবদ্ধ। পাঁচ দিন হয়ে গেল। পায়ে ধরে বলছি, তাতে যদি চরণযুগল ভাল থাকে। চিকিৎসা করুন। তার জন্য আপনারা নিযুক্ত। আন্দোলন করেছেন। কেউ আটকায়নি। এবার কাজে নামুন, আবেদন। আমার সচিব আবেদন জানিয়েছেন। আজ আমি আবেদন করছি। সিনিয়র ডাক্তাররা পরিষেবা দিচ্ছেন, আমি কৃতজ্ঞ।’’
আরজি কর-কাণ্ডে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়কে মনে করালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ‘‘কোনও নির্দোষ যেন শাস্তি না পায়। ধনঞ্জয়ের ঘটনায় যা হয়েছিল, তা যেন আর না হয়। মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া হয়েছিল। তিনি এখন বিলাপ করেন। মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে তাঁকে মিথ্যা সাক্ষী দিতে বাধ্য করা হয়েছিল।’’
মমতা বলেন, ‘‘রবিবার পর্যন্ত আমি সময় দিয়েছিলাম পুলিশকে। কারণ তদন্তে ন্যূনতম সময় লাগে। সেটা দেওয়া গেল না। তার আগেই হাই কোর্টে গেলেন। সব ভাল যার শেষ ভাল। কারণ, পুলিশ না করতে পারলে আমাকেই সিবিআইকে দিতে হত তদন্তভার।’’
মমতা বলেন, ‘‘সমাজমাধ্যমে একটা অংশ মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে পরিকল্পিত ভাবে।’’
বেহালার অনুষ্ঠান থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘মধ্যরাতে আমাদের স্বাধীনতা এসেছিল। যত দিন ধরে আমরা রাজনীতি করি, তত দিন এভাবেই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মরণ করি, শ্রদ্ধা জানাই। যাঁরা প্রাণ দিয়েছিলেন দেশের স্বাধীনতার জন্য, তাঁদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’’
আরজি কর হাসপাতালে নিহত চিকিৎসকের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রাক-স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেহালায় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন তিনি।
স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন সন্ধ্যায় এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করেছেন মমতা। লিখেছেন, ‘‘প্রতি বছরের মতো এ বছরও আমরা ‘মধ্যরাতের স্বাধীনতা’ উদ্যাপন করব। মধ্যরাতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।’’
বুধবার সন্ধ্যায় প্রাক-স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।