রায়গঞ্জের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।
পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে ২০২২ সালের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় এনআইএ-র অভিযান এবং তৃণমূলের অঞ্চল ও বুথ সভাপতিকে গ্রেফতার করা নিয়ে রায়গঞ্জের সভা থেকে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে আক্রমণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ভোটের মুখে এলাকায় তৃণমূলের সংগঠনকে দুর্বল করে দিতেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকার চক্রান্ত করে এজেন্সিকে দিয়ে এই কাজ করাচ্ছে। জয় নিয়ে নিশ্চিত থাকলে কেন তৃণমূল কর্মীদের গ্রেফতার করাতে হচ্ছে, সেই প্রশ্নও তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। নাম না করে ‘গদ্দার’ বলে আক্রমণ করেন শুভেন্দু অধিকারীকেও।
এনআইএ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘মধ্যরাতে কেন লোকের বাড়িতে ঢুকে গ্রেফতার করেছে? অচেনা লোকজনকে মাঝরাতে দেখলে এলাকার মা বোনেরা যা করার, তাই করেছেন।’’ উল্লেখ্য, ভূপতিনগরে গিয়ে স্থানীয়দের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কেন্দ্রীয় আধিকারিকেরা। সন্দেশখালির মতো আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরা। তার পরেই রায়গঞ্জের সভা থেকে এ প্রসঙ্গে মুখ খোলেন মমতা।
বিজেপির উদ্দেশে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মমতা বলেছেন, ‘‘ভোটের আগে আমাদের বুথ এজেন্টদের গ্রেফতার করে নেওয়া হচ্ছে। ভোটের প্রচারের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে। আমিও চ্যালেঞ্জ করছি, যাঁদের গ্রেফতার করেছে, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের, মা বোনেদের আমি এজেন্ট করব। আমাদের আটকাতে পারবে না।’’
কেন্দ্রীয় কর্তাদের উদ্দেশেও বার্তা দিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘চকলেট বোমা ফাটালেও এনআইএ চলে আসছে। আরশোলা, ছারপোকা কামড়ালেও মানবাধিকার কমিশনকে পাঠাচ্ছে। আমরা সব নজরে রাখছি। ভুলে যাচ্ছি না। যে অফিসারেরা এটা করছেন, আমি কাউকে ভয় দেখাচ্ছি না, বিজেপি কিন্তু সারাজীবন থাকবে না।’’
বাংলায় কেন্দ্রীয় সংস্থার তৎপরতা প্রসঙ্গে সিপিএমকেও আক্রমণ করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপির যত রাগ শুধু তৃণমূলের উপরে। সিপিএম তো সবচেয়ে বড় চোরের দল। ৩৪ বছর ধরে চুরি করেছে। ওদের একটা নেতাকেও গ্রেফাতর করেনি।’’
বিজেপি সারাজীবন ক্ষমতায় থাকবে না। কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকদের উদ্দেশে রায়গঞ্জের মঞ্চ থেকে এমনটাই বার্তা দিলেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ভয় দেখাচ্ছি না। কিন্তু যে আধিকারিকেরা এটা করছেন, তাঁদের বলছি, বিজেপি কিন্তু সারা জীবন ক্ষমতায় থাকবে না। আরশোলা কামড়ালেও মানবাধিকার কমিশন আসছে। আমরা সব নজরে রাখছি। ভুলে যাচ্ছি না।’’
ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তৃণমূল কর্মীদের গ্রেফতার করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন, যাঁদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরই ভোটের এজেন্ট করা হবে। বিজেপির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন তিনি।
ইডি, আয়কর দফতরকে বিজেপির ফান্ডিং বক্স বলে আক্রমণ করলেন মমতা। বললেন, ‘‘ওঁরা তল্লাশি অভিযান চালিয়ে টাকা তুলছে আর বিজেপির ফান্ডে দিয়ে দিচ্ছে।’’
জলপাইগুড়ির ঘূর্ণিঝড়ে চার জনের মৃত্যু প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘দুর্যোগের পরে এলেন কোচবিহারে, দুর্যোগ নিয়ে একটা কথা নাই ওঁর মুখে! আসলে দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য রাজ্য সরকার টাকা দেবে। আর উনি নাম কিনবেন।’’
সিএএ নিয়ে বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করলেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘ওরা বলছে সিএএ নাকি হিন্দুদের জন্য। না। মিথ্যা কথা। সিএএ মাথা হলে লেজ এনআরসি। সিএএ-র পরেই ওটা করা হবে। সবাইকে বিদেশি বানিয়ে দেবে।’’
রায়গঞ্জের সভা থেকে নাম না করে নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণ করলেন মমতা। বললেন, ‘‘আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন চাই। কিন্তু সকলেই বুঝতে পারছেন। আমাকে আর বলতে হবে না। বিজেপি যা বলছে, তাই হচ্ছে।’’
ভূপতিনগরের ঘটনা নিয়ে রায়গঞ্জের সভা থেকে বিজেপিকে আক্রমণ করলেন মমতা। বললেন, ‘‘চকলেট বোম ফাটালেও গ্রেফতার করছে। আমাদের হারানোর জন্য ভোট ম্যানেজারদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিজেপি যদি জয় নিয়ে এতই নিশ্চিত, তা হলে গ্রেফতার করতে হচ্ছে কেন? এনআইএ-কে পাঠাতে হচ্ছে কেন?’’
মোদীর ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের বিকল্প হিসাবে বাংলায় ‘স্বাস্থ্যসাথী’র কথা বললেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলেন বাংলার সরকার আমার কথা শোনে না। কেন শুনব? আমরা কি বিজেপির চাকর? যেটায় মানুষের লাভ হবে, আমি সেটা করব। ‘আয়ুষ্মান ভারত’ কেন করব? ‘স্বাস্থ্যসাথী’তে ন’কোটি পরিবার সাহায্য পান। ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এ ১ কোটি মানুষ পেতেন। বাকি ৮ কোটি বাদ যাবে?’’
উত্তর এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের দু’টি লোকসভা আসনে (বালুরঘাট এবং রায়গঞ্জ) ২০১৯ সালের নির্বাচনে হেরে গিয়েছিল তৃণমূল। তাই এই দু’টি আসনে এ বার আলাদা করে নজর দিয়েছে শাসকদল। মমতাও এই দুই কেন্দ্রে প্রচারে জোর দিচ্ছেন।