দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের সুযোগ দিয়েছে যাতে আমরা যে রায় দিই, তা অন্য ভাষায় অনুবাদ করার। আমরা ৫১ হাজারের বেশি রায় অন্য ভাষায় অনুবাদ করছি। বাংলা এবং ওড়িয়া-সহ সংবিধান যে ভাষাকেই স্বীকৃতি দেয়, সেই সব ভাষায় অনুবাদ করা হয় রায়। আমি বিশেষ করে বাংলা এবং ওড়িয়া ভাষার উল্লেখ করছি। আমার স্ত্রী ওড়িয়া ভাষা ভালবাসে। বাংলা ভাষাও খুব কাছের।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘অনেক হাই কোর্ট জামিনের জরুরি আবেদনের ক্ষেত্রেও তৎপরতা দেখায় না। আমি এটা নিয়ে চিন্তিত। এটা বিচারব্যবস্থার আদর্শ মডেল নয়।’’
বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘সাংবিধানিক নৈতিকতা বলে যে, বৈচিত্রকে গ্রহণ করো এবং সহনশীল হও।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘জনতা বলে, আদালত ন্যায় এবং বিচারের মন্দির। আমরা নিজেদেরকে সেই মন্দিরের দেবতা ভেবে ভুল করি। এটা খুব বিপদের। আমার নিজস্ব চিন্তাভাবনা রয়েছে। আমার সামনে আদালতকে কেউ মন্দির বললে আমি তাঁদের বাধা দিই। মন্দির বললেই মনে হয় বিচারকেরা দেবতা। আমি মনে করি, বিচারকেরা মানুষের সেবক। বিচারকেরা বিচার করুন, কিন্তু অন্যের সম্পর্কে আগেভাগে কোনও ধারণা তৈরি করে ফেলবেন না। সহানুভূতি রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের সামনে যাঁরা দাঁড়িয়ে থাকেন, তাঁরা মানুষ। বিচারপতিরা যেন সমাজের প্রতি তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার না করেন। বিচার করতে হবে সমাজকে নিয়ে সংবিধান মাথায় রেখে।’’
দেশের প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘সাংবিধানিক নৈতিকতা বলে যে, এক জন ভারতীয় যেমন চায় তেমন ভাবতে পারে, যা চায় তা বলতে পারে, যাকে চায় তার পুজো করতে পারে, যাকে অনুসরণ করতে চায় করতে পারে, যা চায় খেতে পারে, যাকে চায় বিয়ে করতে পারে।’’
মঞ্চে বক্তৃতা শুরু করলেন দেশের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। দেশের প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘এই আলোচনাচক্র দেশের বিচার ব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে বিচার ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আয়োজিত হয়েছে।’’
সাংবিধানিক নৈতিকতা নিয়ে কথা বলছেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘আমদের ৮৮টি ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্ট রয়েছে, যার মধ্যে ৫৫টি মহিলাদের জন্য। ৯৯টি মানবাধিকার কোর্ট রয়েছে। আমি কাউকে আঘাত করতে চাই না। কিন্তু আমার অনুরোধ, বিচার ব্যবস্থায় কোনও রকম রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব থাকা উচিত নয়। বিচার ব্যবস্থার একদম বিশুদ্ধ এবং সৎ থাকা উচিত। গোপনীয়তা বজায় থাকা উচিত।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমাকেও নিজেদের পরিবারের সদস্য বলে মনে করুন। আমিও আইনের লোক। আমি তিন-চারটি কেস লড়েছি। বিচার ব্যবস্থা আমাদের কাছে পবিত্র, মন্দির-মসজিদ-গির্জা-গুরুদ্বারের মতো। সরকার বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে আছে। যদি বিচার ব্যবস্থা আমাদের সাহায্য না করে, তা হলে মানুষ কোথায় যাবে? যখন মানুষের জীবনে সমস্যা আসে, তখন মানুষের বিশ্বাস থাকে যে, দেশের বিচার ব্যবস্থা আমাদের রক্ষা করবে। বিচারপতি চন্দ্রচূড় দেশের বিচার ব্যবস্থাকে উন্নত করতে সাহায্য করছেন। আমরা বিচার ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হাজার কোটি খরচ করেছি। ৭০ একর জমি দিয়েছি। রাজারহাটে নতুন হাই কোর্টের জায়গা দিয়েছি।’’
বক্তৃতা শুরু করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। মমতা বলেন, ‘‘ধন্যবাদ আমাকে এই সুযোগ দেওয়ার জন্য। দেশের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একই মঞ্চে থাকতে পেরে আমি গর্বিত। বিচারপতি চন্দ্রচূড় খুবই জনপ্রিয়। তাঁর বাবাও দেশের বিচার ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতিদেরও ধন্যবাদ।’’
দেশের প্রধান বিচারপতি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং উপস্থিত বাকিদের উদ্দেশে ধন্যবাদ জানিয়ে মঞ্চে বক্তৃতা শুরু করলেন হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম। তিনি বলেন, ‘‘কলকাতা হাই কোর্ট ঐতিহ্য ধরে রেখে নিজেকে পরিবর্তন করেছে। বিচার ব্যবস্থা ঠিক রাখতে কলকাতা হাই কোর্ট কাজ করে চলেছে অবিরত।’’
কলকাতা হাই কোর্টের বিভিন্ন কাজের খতিয়ান দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘‘কোভিডের সময় লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমেও বিভিন্ন মামলার শুনানি চলেছে দেশের বিভিন্ন আদালতে। কলকাতা হাই কোর্টেও চলেছে।’’
মঞ্চে উঠলেন দেশের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের কয়েক জন প্রাক্তন বিচারপতি। কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম-সহ হাই কোর্টের আরও কয়েক জন বিচারপতি রয়েছেন মঞ্চে। বিচারপতি চন্দ্রচূড়কে উত্তরীয় পরিয়ে সংবর্ধনা জানালেন হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম। উত্তরীয় পরিয়ে সংবর্ধনা জানানো হল মুখ্যমন্ত্রী মমতাকেও।
বাইপাসের ধারে একটি হোটেলের বলরুমে আয়োজন করা হয়েছে জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির আলোচনাচক্রের। সেখানে থাকছেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমও।
কলকাতা হাই কোর্টের বার লাইব্রেরির দ্বিশতবর্ষ উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। শনিবার সেই উপলক্ষেই ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির একটি আলোচনাসভায় যোগ দিচ্ছেন। সেই সভাতেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকেও। দু’জনেরই সেখানে বক্তৃতা করার কথা।
বিচার ব্যবস্থা এবং সেই সূত্রে বিচারপতিদের একাংশকে নিয়ে আলোচনা এবং জল্পনার আবহেই শনিবার একই মঞ্চে থাকছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। প্রধান বিচারপতি কলকাতায় এসেছেন শুক্রবার।