মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
মমতা জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৪টেয় বাজার কমিটির সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সেখানে কথা বলা হবে বলে জানান তিনি। তিনি এও জানান, না জানিয়ে বিদ্যুতের মাশুল বৃদ্ধি করেছে সিইএসসি। তিনি এ বিষয়ে কিছু জানতেন না। মহরমে যাতে দুর্ঘটনা না হয়, সে দিকে নজর রাখতে বলেছেন তিনি। ২১ জুলাই নিয়ে এখন থেকে পুলিশকে সক্রিয় হতে বললেন তিনি। জানালেন, সে দিন যাতে কোনও পথ দুর্ঘটনা না হয়, তা দেখতে হবে পুলিশকে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন আসবেন। এই নিয়ে রেলকে কড়া বার্তা দিয়ে তিনি বললেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ থেকে লোক আসার জন্য তোমরা (রেল মন্ত্রক) আমাকে ট্রেন ভাড়া দিলে, টাকা দেব। ভাড়া না দিলে অত জন মানুষকে নিরাপদে নিয়ে আসার দায়িত্ব তোমার। অতিরিক্ত কামরাও ভাড়া দিতে পারো আমাদের। ১৮ জুলাই থেকে মানুষ আসতে শুরু করবেন।’’
মমতা ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইভ’ প্রচার নিয়ে উদ্যোগী হওয়ার কথা বললেন। দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষকে সাবধান করলেন।
কৃষি দফতরের আধিকারিকদেরও সক্রিয় থাকার কথা বললেন। কখন ফসল কাটা হবে, তা নিয়ে কৃষককে সচেতন করতে বললেন।
মমতা জানান, পরিবহণ দফতরের কাজ ধীর গতিতে হচ্ছে। বহু রাস্তা আটকে রয়েছে। সে কারণে যানজট। গ্রাম এবং শহর, দু’জায়গায় রাস্তার উপরেই নজর দিতে বললেন। দ্রুত পুলিশের সঙ্গে কথা বলে ট্র্যাফিক সমস্যা দূর করতে বললেন মমতা। দুর্গতদের সরানোর জন্য দ্রুত ব্যবস্থা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে যাতে তাড়াতাড়ি গাড়ি পৌঁছয়, সেই ব্যবস্থা করতে বললেন। কিছু গাড়ি প্রস্তুত রাখতে বললেন। দরকারে আগে থেকে আবহাওয়ার রিপোর্ট রাখতে হবে বলে জানালেন। দরকারে কোনও দফতরের সঙ্গে সংযোগ রাখতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘আমি কেন্দ্রে মন্ত্রী থাকতে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী নিয়ে ব্যবস্থা করেছিলাম। রূপরেখা তৈরি করেছিলাম।’’
মমতা বিভিন্ন বিষয়ে সাবধান করলেন। বিদ্যুতের খুঁটি শক্ত করে লাগানোর কথাও বলেন। যাতে তা পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা না হয়। গ্রামে, শহরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার কথা বললেন তিনি।
মমতা রাস্তায় রং করা নিয়েও বার্তা দেন। তিনি জানান, অন্য রং করলে চলবে না। তিনি দলের রং করেননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি করিনি, অন্য দল কেন করবে রাজনীতি? রেলও করছে। সব গেরুয়া রং করছে।’’
মমতা জলনিকাশি নিয়ে দ্রুত বন্দোবস্ত করতে বলেছেন। হাওড়া নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেন মমতা। জানান, টাকা দেওয়া হলেও কাজ হয়নি। সে সময় অভিযোগ করা হয়, রেলের জায়গায় জল জমছে। তা পরিষ্কার হচ্ছে না বলে সমস্যা হচ্ছে। এর পরেই রেলকে কড়া বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘জল জমলে রেলকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এখান থেকে কম টাকা পান না তারা। ব্যবস্থা করতে হবে। জল জমলে ডেঙ্গির আশঙ্কা।’’
মমতা বলেন, ‘‘ডিভিসির জলাধারে ২ লক্ষ মেট্রিক টন কিউসেক জল থাকতে পারে জলাধারে। কিন্তু ওরা ড্রেজিং করছে না। মাইথন পড়ে রয়েছে। মালদহেও সমস্যা হয় ভাঙনের। ২৫-৩০টি পরিবারকে সরানো হয়েছে।’’
মমতা বলেন, ‘‘ফরাক্কার আশপাশে জলে ভাসে বহু এলাকা। তুফানগঞ্জে ত্রাণকেন্দ্র চলছে। সব কাজ দেখতে হবে । ২৪ ঘণ্টার জন্য বিপর্যয় মোকাবিলার ব্যবস্থা হচ্ছে।’’ বিডিও, জেলাশাসকদেরও সচেতন করলেন মমতা। শিফটিং ডিউটির কথাও জানিয়েছেন তিনি।
মমতা বলেন, ‘‘দুই দিনাজপুরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এখন থেকে জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা করতে হবে। হয়তো ডিভিসি যখন-তখন জল ছাড়ে। এখন বলে দিয়েছি, না বলে ছাড়া যাবে না। আমাদের খানাকুল, আরামবাগ, গোঘাট, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, ভাসে। মুকুটমণিপুর থেকে জল ছাড়লে বাঁকুড়া ভাসে। দুর্গাপুর ভাসে। ডিভিসি কতটা জল ছাড়বে, আমায় রোজ রিপোর্ট দিতে হবে। একবারে ১০০ ভাগ ছাড়া যাবে না। যখন দেখছে ৭৫ শতাংশ ভর্তি, তখন থেকে অল্প করে ছাড়লে সমস্যা হয় না। ওরা ড্রেজিং করে না।’’
মমতা বন্যা নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থার কথা জানিয়েছেন। প্রয়োজনে সেচ দফতরে শিফটিং ডিউটি করা হবে বলে জানিয়েছেন। প্রয়োজনে ছুটি বাতিল হতে পারে। আলিপুরদুয়ারে ক্ষতি হয়েছে একটা। কালিম্পঙে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে ধস নেমেছে। পিডব্লিউডি পর্যবেক্ষণ করছে। জিটিএর সঙ্গেও আলোচনা করা হবে।
মমতা বলেন, ‘‘ত্রাণ দেওয়া হয় বন্যাগ্রস্ত এলাকার মানুষকে। কোচবিহারে মাথাভাঙা সাবডিভিশন ক্ষতিগ্রস্ত। ১২টি ত্রাণকেন্দ্র, ৬টি কিচেন চলছে। ৫০০ জন আশঅরয় নিয়েছেন। আমি গিয়ে দেখেছিলাম রাস্তায় জল। হেরিটেজ টাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সেচ দফতরের অনেক বেশি কাজ। সব বিভাগের মধ্যে সমন্বয় দরকার।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমি জেলাশাসক, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক, সকলকে বলব। বর্ষায় বিদ্যুতের তার কারেন্ট হয়। কেউ হাত দেবেন না। বাজ পড়লে টিভি বন্ধ করে দেবেন। রাস্তার আলো বন্ধ রাখবেন কিছু ক্ষণ, যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে।’’
মমতা বলেন, ‘‘কোটি কোটি টাকা খরচ করেও কিছু করতে পারছি না। উত্তরবঙ্গে ধস নামলে সেনার উচিত খেয়াল রাখা। সেখান দিয়ে তাঁরাই যাতায়াত করেন। জলপাইগুড়ি, মাল ক্ষতিগ্রস্ত। ৯টি ত্রাণকেন্দ্র তৈরি হয়েছে। ৫০০ জন রয়েছে। আগে জল জমত। আত্রাই নদীতে বাঁধ দেওয়ার সময়ও জানানো হয়নি। জলসঙ্কট তৈরি হয়েছে। আগে ইন্দো-বাংলাদেশ বৈঠকে যখন ডাকত, আমি বলেছি, কাজ হয়নি। ’’
মমতা বলেন, ‘‘সিকিম যখন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র করল, কেন্দ্রের দেখা উচিত ছিল। সে জন্য আজ মানুষকে ভুগতে হচ্ছে। জলপাইগুড়ির মানুষ জানেন, আগে করোলা নদী ভাসত। আমরা ২০ কোটি টাকা খরচ করে ব্যবস্থা করেছি। ভুটানের জল এসে আলিপুরদুয়ার ভাসে। জলপাইগুড়ি ভাসে। ’’
মমতা বলেন, ‘‘গঙ্গার ভাঙনে যে বাড়ি তলিয়ে গেছে, সেগুলি করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল। ৭০০ কোটি টাকা আজ পর্যন্ত দেয়নি। ফরাক্কা চুক্তি রিনিউ হলে বিহারও ভাসবে। মূল পক্ষ আমরা। আমাদের জানানো হল না। বলছে তিস্তার জল দেবে (বাংলাদশকে)। জল রয়েছে যে দেবে? উত্তরবঙ্গে কেউ পানীয় জল পাবেন না।’’
মমতা বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের বিষয়ে রিপোর্ট পেয়েছি। বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। সেচ বিভাগ পর্যবেক্ষণ চালু করে। এ বারও হবে। যাতে সমস্যা হলে মানুষ যোগাযোগ করতে পারেন, তাই একটি নম্বর দেওয়া হবে। মালদহে ক্ষয় হয়েছে।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমাদের না জানিয়ে ফরাক্কা চুক্তি রিনিউ করা হচ্ছে। বাংলায় বর্ষা বেশি। নদীমাতৃক দেশ। এখানে নদী, সমুদ্র, পুকুর বেশি। অনেক পুকুর কেটেছি। জল ধরি, ভরি। উপকূলীয় অঞ্চলও রয়েছে। উত্তরবঙ্গ বন্যায় ভাসছে। সিকিমে বৃষ্টি। ধস নেমেছে। পর্যটক আটক। তাঁরা যাতে ফিরে আসতে পারেন, দেখো।বর্ষায় পাহাড়ে অ্যাডভেঞ্চার না করাই ভাল। গরমে যান।’’
মমতা বলেন, ‘‘গঙ্গার ভাঙন কেন্দ্রের দেখার কথা। ১০-১২ বছর ধরে দেখছে না। ফরাক্কার ড্রেজিং করেনি। বাংলাদেশের সঙ্গে যখন চুক্তি হয়, তখন কথা ছিল, বাংলাদেশে যে জল যাচ্ছে, আমাদের যাতে সমস্যা না হয়, ড্রেজিং করা হবে। ভাঙনে অনেক বাড়ি তলিয়ে গেছে। ৭০০ কোটি টাকার প্যাকেজ তৈরি হয়। আমি এমপি ছিলাম, জানতাম। আজ পর্যন্ত দেয়নি।’’