ছবি: সংগৃহীত।
করোনার ধাক্কায় বেহাল অর্থনীতির মন্দা কাটিয়ে রোজগার বাড়াতে সর্বশক্তিতে ঝাঁপিয়েছিল নবান্ন। দিশি-বিলিতি মদের মূল্যনীতিতে আমূল বদল এনেছিল আবগারি দফতর। অর্থ দফতরের খবর, মূল্যনীতি বদলের ফলে গত বছরের তুলনায় গত দু’মাসে অতিরিক্ত ৪০০ কোটি টাকার মদ বিক্রি হয়েছে। বৃদ্ধির হার ২৪%। লকডাউন-পরবর্তী অর্থনীতির কথা মাথায় রাখলে যেটা সর্বাধিক।
মদের মূল্যনীতিতে কী বদল আনা হয়েছিল? আবগারি কর্তারা জানান, কম অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ের দাম কমিয়ে দেওয়াই ছিল সরকারের মূল উদ্দেশ্য। যাতে ওই পানীয়ের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। তাই বিয়ার, ওয়াইনের দাম কমানো হয়েছে। দ্বিতীয়ত, স্কচের মতো উচ্চ মানের দামি মদের দামও কমিয়েছে সরকার। যাতে সর্বোচ্চ গুণমানের বিলিতি মদের বিক্রি বাড়ে। এ ছাড়া আগে মদের এমআরপি বা সর্বাধিক খুচরো মূল্যের উপরে আবগারি শুল্ক বসত। এমআরপি ঠিক করতেন মদ উৎপাদকেরা। ফলে সংস্থাগুলির হাতে মদের খুচরো দাম ঠিক করার চাবিকাঠি থাকত। সরকার এই পদ্ধতি বদলে উৎপাদকদের কাছে ‘এক্স-ডিস্টিলারি প্রাইস’ বা ইডিপি ঘোষণা করতে বলে। তার উপরে কর বসিয়ে আবগারি দফতর মদের বাজারদর ঠিক করেছে। তাতেই রাজস্ব সংগ্রহ ব্যাপক হারে বাড়তে শুরু করেছে বলে জানাচ্ছে নবান্ন।
আবগারি দফতরের হিসেব, ২০১৯ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ১৮৪০ কোটি টাকার মদ বিক্রি হয়েছিল। ২০২০-র নভেম্বর-ডিসেম্বরে ২২৭৯ কোটি টাকার মদ বিক্রি হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৪৩৯ কোটি টাকা বা ২৪% বেশি। গত বছর এই সময়ে বিয়ার বিক্রি হয়েছিল ৭৮.২৮ কোটি টাকার। এ বার তা বেড়ে হয়েছে ১৫০.৯২ কোটি। বৃদ্ধি ৯৩%। গত বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে দিশি মদ বিক্রি হয়েছিল ৫৬৮ কোটি টাকার, এ বছর বেড়ে হয়েছে ৮৩৫.৪২ কোটি। বিক্রি বৃদ্ধির হার ৪৭%।
আবগারি দফতর জানাচ্ছে, গত বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে বিলিতি মদ বিক্রি হয়েছিল ১১৭১.৪৪ কোটি টাকার। এ বার তা বেড়ে হয়েছে ১২৬০.২৮ কোটি। বৃদ্ধির হার ৭.৬%। কেন বিলিতি মদের বিক্রি বৃদ্ধির হার তুলনায় কম? আবগারি-কর্তারা জানান, এটাও নতুন মূল্যনীতির ফল। সরকার চেয়েছিল কম অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ের বিক্রি বাডুক। তা সফল হয়েছে। বিয়ারের বিক্রি বেড়েছে ৯৩% এবং বিলিতি মদের বিক্রি বেড়েছে ৭.৬%। বোঝাই যাচ্ছে, রাজ্যে হুইস্কি-রাম ছেড়ে অনেকেই কম অ্যালকোহলযুক্ত বিয়ার পানে উৎসাহিত হচ্ছেন।
আবগারি-কর্তারা জানাচ্ছেন, যত মদ বিক্রি হবে, ততই রাজস্ব বাড়বে। চলতি আর্থিক বছরে আবগারি রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু করোনার জন্য প্রথম ন’মাসে মদের বিক্রি ধাক্কা খাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে চলতি বছরে মদ বিক্রির ব্যাপারে আশাবাদী আবগারি দফতর। এ বছর বিধানসভা ভোট আছে। বরাবর দেখা গিয়েছে, ভোটের বছরে মদের বিক্রিও রেকর্ড হারে বাড়ে। রাজকোষ ভরাতে তাই এ বারেও বিয়ার, হুইস্কি, রামই ভরসা!