সিএএ নিয়ে গণভোটের দাবি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া।
এ বার রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপ চাইলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বা এনআরসি এ দেশে কার্যকরী করা হবে কি না, তা গণভোটে নির্ধারিত হোক এবং সে গণভোট রাষ্ট্রপুঞ্জের তত্ত্বাবধানে করার, ভারত সরকারের নয়— বৃহস্পতিবার দিল্লির উদ্দেশে এই চ্যালেঞ্জই ছুড়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। এবং তীব্র প্রতিক্রিয়াও তৈরি হয়েছে মমতার এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে। ‘‘উনি সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছেন, ফলও পেয়ে যাবেন,’’ পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
সিএএ-র বিরুদ্ধে পর পর তিন দিন কলকাতা এবং হাওড়া জুড়ে বিরাট বিরাট মিছিল করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ঘোষণা করেছেন যে, সিএএ এবং এনআরসি মানবেন না। শুধু বিজেপি নয়, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও ওই বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। বিজেপি নেতারা বলতে শুরু করেছেন, দেশের আইন মানবেন না বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা করে এবং সরকারি বিজ্ঞাপন দিয়ে মমতা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার মমতা বুঝিয়ে দিলেন, তিনি আর পিছু হঠার মেজাজে নেই।
ধর্মতলায় রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে এ দিন তৃণমূলের প্রতিবাদ সভা ছিল। সেই সভায় ভাষণ দিতে গিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বেনজির মন্তব্য করেন। কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তিনি বলেছেন, ‘‘যদি সত্যি বুকের পাটা থাকে, তা হলে মানুষে মানুষে বিভাজন না ঘটিয়ে গণভোট করান।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সারা ভারতে একটা গণভোট হয়ে যাক। আপনি করবেন না। রাষ্ট্রপুঞ্জ করবে।’’
শুধুমাত্র সংসদে গরিষ্ঠতা রয়েছে বলে বিজেপি নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করতে পেরেছে, আসলে দেশের অধিকাংশ মানুষ এই আইনকে সমর্থন করছেন না— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বার্তাই খুব জোরের সঙ্গে দিতে চেয়েছেন এ দিন। গণভোট হলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, ক’জন এই আইনের পক্ষে এবং ক’জন বিপক্ষে— মন্তব্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর।
তবে ভারত সরকারের তত্ত্বাবধানে যে তিনি গণভোট চান না, তা-ও এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা। তাঁর বার্তা— নিরপেক্ষ গণভোটের জন্য তিনি রাষ্ট্রপুঞ্জকে চান।
প্রত্যাশিত ভাবেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে বিজেপি-র অন্দরে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রবল আক্রমণ শানিয়েছেন। তাঁর কথায়: ‘‘সংসদে আইন পাশ হয়েছে, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন সেই আইন মানেন না। শুধু নিজে নন, নিজের দলের সাংসদদের দিয়েও শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন যে, সিএএ মানবেন না। এটা সংবিধানের সাংঘাতিক উল্লঙ্ঘন। কিন্তু তাতেই তিনি থামছেন না। রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপ চাইছেন। অর্থাৎ, দেশের সুপ্রিম কোর্টের উপরেও মমতার আস্থা নেই।’’ দিলীপের কথায়, ‘‘মমতা আইন মানেন না। মমতা সংসদ মানেন না। মমতা সুপ্রিম কোর্ট মানেন না। তিনি দেশের সংবিধানটাই মানেন না। সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। এর ফল তিনি পাবেন।’’