অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারির দিন ফাঁকা বোলপুরের তৃণমূল কার্যালয়। ফাইল চিত্র
দলীয় কার্যালয়ের সামনে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে একগুচ্ছ মোটরবাইক, দাড়িয়ে গাড়িও। কর্মীদের উপস্থিতিতে গমগম করছে কার্যালয়। যে কোনও দিন তৃণমূলের জেলা কিংবা মহকুমার বড় পার্টি অফিসগুলিতে গেলেই চোখে পড়বে এই ছবি। কিন্তু, সিবিআইয়ের হাতে দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফাতারির পরেই সে ছবিতে বদল ঘটেছে। দলীয় কর্মসূচিতে বা দৈনন্দিনের অভ্যাসে অনেক নেতা-কর্মী পার্টি অফিসে আসছেন। কিন্তু, ভিড় আগের চেয়ে অনেক পাতলা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন নিচুতলার কর্মীরা। চিন্তা বেড়েছে কার্যালয় চালানোর খরচের জোগান নিয়েও।
বোলপুর পুরসভা ও থানা লাগায়ো ঝকঝকে বিশাল তৃণমূল দলীয় কার্যালয়ে দিনভর ভিড় লেগেই থাকত। এখন সেই চেনা ছবি উধাও। সন্ধ্যার পরে কিছু দলীয় কর্মীর উপস্থিতি থাকলেও সকালের দিকে প্রায় ফাঁকা সে পার্টি অফিস। শুধু বোলপুর নয়, ভিড় কমেছে সিউড়ি জেলা তৃণমূল কার্যালয়েও। বৃহস্পতিবার সকালেও গুটি কয়েক মোটরবাইক পার্টি অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। আগের চেয়ে ভিড় কমেছে রামপুরহাট থেকে অন্যান্য শহর ও ব্লক কার্যালয়গুলিতেও। তৃণমূল কর্মীদের অনেকেই আড়ালে জানাচ্ছেন, একনিষ্ঠ কর্মী না হলে কার্যালয়ে ঢুঁ মারতে ইতস্তত করছেন অনেকেই।
জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতাও বলছেন, ‘‘কেষ্টদা-র গ্রেফতারিতে কর্মীদের মনোবল ভেঙেছে, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বা ঘটনা প্রবাহ যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে এখনই ‘দাদা’ নির্দোষ, বা কিচ্ছু হয়নি বলার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ফলে দলীয় কার্যালয়ে কর্মীদের উপস্থিতি তুলনায় কম হওয়াই স্বাভাবিক।’’ সিউড়ি শহর তৃণমূলের এক নেতার মতে, ‘‘অনেক কর্মীই এখন ঘটনা পরম্পরায় নজর রাখছেন। তাই একটু হালকা পার্টি অফিসগুলি।’’
তবে, সংগঠন মজবুত করার লক্ষ্যেই মিলিত ভাবে কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে দাবি করেছেন অনুব্রতর পরেরধা পের নেতাদের একাংশ। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কর্মীদের চাঙ্গা করতে এবং বিরোধীদের পাল্টা দিতে রূপরেখা তৈরি হচ্ছে। তাই সভায় সভায় এত তর্জন-গর্জন কিংবা সমাজমাধ্যমে হুমকি-পোস্ট। মঙ্গলবার রামপুরহাটে যেমন সাংগঠনিক বৈঠক হয়েছে, তেমনই বৈঠক হবে বোলপুর ও সিউড়ি দলীয় কার্যালয়ে। নেতাদের দাবি, ‘‘শীঘ্রই ঝিমুনি কাটিয়ে ফের ছন্দে ফিরবেন দলের কর্মীরা। তাঁদের বোঝানো হবে আইনি পথেই অভিযোগের মোকাবিলা হচ্ছে। কিন্তু এই সময়টায় দলের কর্মীদের পাশে থাকা জরুরি। সংগঠন ভেঙে গেলে সমস্যা বাড়বে।’’
তৃণমূলের আরও একটি চিন্তা, দলীয় কর্যালয়গুলির খরচের জোগানো নিয়ে। দলের ভিতরের সূত্রে জানা যাচ্ছে, দলীয় কোনও কর্মসূচি নেওয়াই হোক বা কার্যালয় চালানো, সব ক্ষেত্রেই টাকার প্রয়োজন। ইডি-সিবিআই সাঁড়াশি অভিযানের পর থেকে ‘নগদের জোগান’ কম। ফলে, দলীয় কার্যালয়ের খরচ চালানোর রসদেও ভাটার টান।
জেলা তৃণমূলের একাধিক নেতা আড়ালে মেনেছেন সে-কথা। তাঁদের কথায়, ‘‘একটু অসুবিধা তো হবেই। তবে সেটা ম্যানেজ করার চেষ্টা চলছে। কর্মসূচি বা মিটিং মিছিলে লোক (কর্মী সমর্থক) আনতেও বিপুল টাকা লাগে। সেটাও চিন্তার।’’ তৃণমূল নেতাদের একাংশের আবার দাবি, জেলার বড় দলীয় কার্যালয় বাদ দিলে ব্লক স্তরে কার্যালয় চালানোর জন্য টাকা জেলা থেকে আসে না। স্থানীয় নেতারাই তা জোগাড় করেন। তাতে এখনও বিশেষ সমস্যা হয়নি।