বাঁ দিকে, ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, দীপঙ্কর ভট্টাচার্য্য প্রমুখ। ডান দিকে, কংগ্রেসের মিছিলে প্রদীপ ভট্টাচার্য, রোহন মিত্র। নিজস্ব চিত্র।
কৃষক প্রতিবাদকে সামনে রেখে ধর্মঘটের দিনে অন্য রকম ছবি দেখল বাংলার রাজনৈতিক জগৎ। বিজেপির বিরুদ্ধে এক সুরেই সরব হল রাজ্যের শাসক তৃণমূল এবং বিরোধী বাম ও কংগ্রেস।
কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি আইনের বিরোধিতায় সক্রিয় ভাবে ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করার পাশাপাশিই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে শামিল হল বাম ও কংগ্রেস। কৃষকদের আন্দোলনের সেই আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আলাদা ভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নামল তৃণমূলও। সব পক্ষেরই দাবি। মানুষের প্রতিবাদের কাছে মাথা নত করে দ্রুত ‘কালা আইন’ প্রত্যাহার করুক নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জে মঙ্গলবার প্রশাসনিক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ঘোষণা করেন, গোটা দেশে যাঁরা কৃষক আন্দোলন করছেন, তাঁদের প্রতি এই দিনটা তিনি উৎসর্গ করছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘সাধারণত আমি কোনও বন্ধকে সমর্থন করি না। কারণ, এমনিতেই মানুষের অসুবিধা আছে। আমরা রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে তাঁদের আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছিলাম। তাঁদের তিনটে পর্যন্ত বন্ধ ছিল। আমি তার মধ্যে আসিনি (প্রশাসনিক সভায়)। তার পরে এসেছি।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এই নৈতিক সমর্থন থাকায় এ দিন ধর্মঘট উপলক্ষে রাস্তায় নেমে বাম ও কংগ্রেস নেতারাও পুরোপুরি বিজেপিকেই নিশানা করেছেন।
এন্টালি থেকে এ দিন মিছিলে শামিল হয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, আরএসপি-র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, কার্তিক পাল, আইএনটিইউসি-র কামারুজ্জামান কামার প্রমুখ। কৃষক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির রাজ্য শাখার তরফেও দাবি করা হয়েছে, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সর্ব স্তরের মানুষ বাংলা ও অন্যত্র স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ধর্মঘটে সাড়া দিয়েছেন। সংগ্রাম কমিটির দাবি, ‘এই বন্ধের পরে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও মারপ্যাঁচ বা শর্ত ছাড়া ওই আইন প্রত্যাহার করুক। যে পুলিশ অফিসারেরা আন্দোলনরত কৃষকদের উপরে অত্যাচার করেছেন, তাঁদের শাস্তির ব্যবস্থা হোক।’’
বিধান ভবন থেকে এ দিন মনোজ চক্রবর্তী, সুমন পালদের নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল মৌলালি মোড়ে এসে অবরোধ করে। পেট্রল পাম্পেও বিক্ষোভ করেন কংগ্রেস কর্মীরা। দক্ষিণ কলকাতায় মিছিলে ছিলেন কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, রোহন মিত্র, তুলসী মুখোপাধ্যায়েরা।রাজাবাজারেও অবরোধে বসেন কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা।
প্রতিবাদে নেমেছিল তৃণমূলও। নতুন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে এ দিন ধর্নায় অংশ নেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা। পাশাপাশি ধর্মতলায় অবস্থান শুরু করেছে দলের কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগঠন। এই অবস্থান চলবে আজ, বুধবার ও কাস, বৃহস্পতিবারও। বেহালায় ধর্নায় দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার কৃষি প্রত্যাহার না করলে কৃষক তো বটেই, সাধারণ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই এই আন্দোলন চালিয়ে যাব।’’
ধর্মঘটের ‘সাফল্য’ দেখে এসইউসি-র সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ ফের আহ্বান জানিয়েছেন, ‘‘জনগণের কাছে আবেদন, এই ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সংগ্রাম কমিটি গঠন ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তুলে দাবি আদায়ের জন্য লড়াই চালিয়ে যান।’’ কৃষকদের প্রতি সংহতি জানিয়ে আজ, বুধবার রাসবিহারী থেকে বিজন সেতু পর্যন্ত মশাল মিছিলের ডাক দিয়েছে এসইউসি-র ছাত্র সংগঠন ডিএসও। যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআই সমর্থকেরা এ দিন ধর্মঘটের সমর্থনে রাস্তায় নেমেছিলেন।